রকিব মুহাম্মাদ
আওয়ার ইসলাম
মুসলিম বিজ্ঞানী আবু রায়হান মোহাম্মদ ইবনে আহমদ আল বিরুনী সুলতান মাহমুদের দরবারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তার সম্বন্ধে এখানে কিছু না বললে সুলতান মাহমুদের ওপর আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আল-বিরুনী ছিলেন একজন গণিতবেত্তা, দার্শনিক, জ্যোতির্বিদ ও সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত।
একাদশ শতাব্দীতে আল-বিরুনি তার বর্ণময় কর্ম এবং গবেষণা জীবন চালিয়ে যান এবং বিভিন্ন বিষয়ের গবেষণায় নতুন নতুন ও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রদান করেন— কীভাবে পৃথিবীর এর কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান।স্থিতিবিদ্যা এবং গতিবিদ্যাকে একীভূত করে বলবিদ্যা নামক গবেষণার নতুন ক্ষেত্রের প্রবর্তন।
ফলিত বিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে আল-বিরুনীর অসামান্য পান্ডিত্য ছিল। আল-বিরুনি যে কত বড় ফলিত বিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানে তিনি যে কতটা উচ্চস্তরের কাজ করে গেছেন, তা জানার জন্য সুলতান মাহমুদ গজনভীর সঙ্গে ঘচে যাওয়া একটি মাত্র ঘটনাই যথেষ্ট।
একদিন সুলতান মাহমুদ গজনভী তার হাজার বৃহ্মের বাগানে গ্রীষ্মবাসের ছাদে বসে আল বিরুনিকে বললন, এ বাড়ির চার দরজার কোন দরজাটি দিয়ে আমি বের হবো, আপনি তা গুনে ঠিক করে একটি কাগজ়ে লিখে আমার কম্বলের নিচে রেখে দিন।
সুলতানের এ কথার পর, আল-বিরুনি তার আস্তারলব যন্ত্রের সাহায্যে অঙ্ক কষে তার অভিমত একটি কাগজ়ে লিখে সুলতান মাহমুদের কম্বলের নিচে রেখে দিলেন।
তখন সুলতান রাজমিস্ত্রির সাহায্যে একটি নতুন দরজা বানিয়ে তা দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসে দেখেন আল-বিরুনির কাগজে অনুরূপ কথাই লেখা : “আপনি পূর্ব দিকের দেয়াল কেটে একটি নতুন দরজা করে বেরিয়ে যাবেন।”
কাগজের লেখা পড়ে সুলতান রেগে গিয়ে ছাদ থেকে আল-বিরুনিকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়ার জন্য আদেশ দিলেন। নিচে মশামাছি আসা বন্ধ করার জন্য জাল পাতা ছিল। সুলতানের আদেশ কার্যকর হওয়ার পর আল-বিরুনি সেই জালে আটকে গিয়ে মাটিতে আস্তে পড়ার কারণে বেশি আঘাত পেলেন না।
সুলতান আল-বিরুনিকে আবার ডেকে আনলেন এবং তার চাকরের কাছ থেকে আল বিরুনির দৈনিক ভাগ্য গণনার ডায়েরিটা নিয়ে সুলতান দেখলেন, তাতে লিখা আছে “আমি আজ উঁচু জায়গা থেকে নিচে পড়ে গেলেও বিশেষ আঘাত পাব না।”
এ দেখে সুলতান আরো রেগে গিয়ে আল-বিরুনিকে জেলে পাঠালেন। এর পর আল-বিরুনিকে কারাগার থেকে মুক্তির সুপারিশ করতে কেউ সাহস পেলেন না।
ছয় মাস পর সুলতানের মনমর্জি বুঝে প্রধানমন্ত্রী আহমদ হাসান একদিন আল-বিরুনির প্রতি সুলতানের নেক নজর আকর্ষণ করলেন। সুলতান মাহমুদের এ কথা স্বরণই ছিল না। তিনি তৎহ্মণাৎ তাকে মুক্তি দিলেন।
আরও পড়ুন : একজন ইমাম গাজালি; জ্ঞান চর্চাই ছিল যার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট
আরএম/