আওয়ার ইসলাম: ভারতের আসানসোলে রাম নবমীর র্যালিতে সহিংসতা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যখন পরস্পরের সঙ্গে বাকযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তখন সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন এক মুসলিম ব্যবসায়ী। সহিংসতায় দোকান-পাট হারানো ১২ জন ব্যবসায়ীকে তাদের ব্যবসা নতুন করে শুরু করতে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন তিনি।
সরকারি ত্রাণের অপেক্ষায় বসে না থেকে ব্যবসা শুরু করতে ওই হিন্দু ব্যবসায়ীদের প্রত্যেককে ১০ হাজার রুপি করে সহায়তা দিয়েছেন নাহনানে খান নামের ওই মুসলিম ব্যবসায়ী।
২৫ মার্চ রাম নবমীর মিছিল থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজনার মধ্যে নিখোঁজ হন নুরানি মসজিদের ইমাম রশিদির ১৬ বছর বয়সী এসএসসি পরীক্ষার্থী সন্তান সিবতুল্লাহ রশিদি।
একদিন পর তার মরদেহ পাওয়া যায়। গত ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার ছেলের মৃতদেহ শনাক্ত করেন ইমাম রশিদি। পুত্রের শেষকৃত্যের সময় সেদিন রাতেই তিনি আসানসোলবাসীর কাছে শান্তির আহ্বান জানান। বলেন,‘কোনও প্রতিহিংসা নয়।
প্রতিশোধ নিতে যদি কারোর মৃত্যু ঘটাও, তাহলে আমি এই শহর ছেড়ে চলে যাবো। আমি তোমাদের সঙ্গে ৩০ বছর ধরে আছি,আমাকে যদি তোমরা ভালোবাসো তাহলে আর কাউকে যেন এভাবে মরতে না হয়।’ মাওলানার এই তৎপরতায় আপাতভাবে শান্ত হয় আসানসোল। এরপরই ভারতজুড়ে আলোচনায় আসেন ইমাম রশিদি। তার প্রেরণাতে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই বাড়িয়ে দিয়েছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির হাত।
২৫ মার্চ সহিংসতা চলার আসানসোলের চান্দমারি শিবমন্দির এলাকার বেশ কিছু দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। দোকান হারিয়ে নিঃস হয়ে পড়া এমন ১২ জন ব্যবসায়ীকে সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন আসানসোলের কুরাশি মহল্লার মুসলিম ব্যবসায়ী হাজি নাহনানে খান।
সোমবার তিনি বলেন, ‘আমরা এ এলাকায় অনেক দিন ধরে একসঙ্গে ব্যবসা করছি। সহ-ব্যবসায়ীদের সহায়তা দিতে আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস, অন্য এলাকার মানুষরাও তাদের প্রতিবেশীদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে।’
সহায়তা পাওয়ার পর পান দোকানের মালিক উমা শঙ্কর গুপ্ত, মনোজ যাদব এবং নিরঞ্জন শাহু নাহনানে খানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। নিরঞ্জন বলেন, ‘দোকান ভেঙে যাওয়ার পর তিনি আমাদের কাছে এসেছিলেন। নতুন করে ব্যবসা শুরু করার মতো অর্থকড়ি আমাদের কাছে ছিল না। নাহনানে খান আমাদেরকে বললেন মনোবল না হারাতে। আমাদেরকে অর্থ সহায়তা দিতে চাইলেন তিনি এবং জিজ্ঞেস করলেন আমরা তা নিতে চাই কিনা। আমরা রাজি হলাম।’
নাহনানে খান যখন ওই হিন্দু ব্যবসায়ীদের অর্থ সহায়তা দিয়েছেন তখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়নি। পরে অবশ্য, আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি নিহতদের জন্য ২ লাখ রুপি এবং যাদের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য ১০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন।
এদিকে ভারতের ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন (এনএইচআরসি) রানিগঞ্জ-আসানসোল এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে এবং এক মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন চেয়েছে। জনগণের অভিযোগকে উল্লেখ করে কমিশনের নোটিশে বলা হয়, সহিংসতার সময় পুলিশের হেল্পলাইন ১০০-তে ফোন করা হলেও সহিংসতা কবলিত এলাকায় পুলিশদের আসতে দেখা যায়নি।
ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন তার তদন্ত সংক্রান্ত মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছে যেন একটি তদন্ত দল গঠন করে আসানসোল-রানিগঞ্জ এলাকায় পাঠায়। ওই তদন্ত দলকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলতে হবে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউন/এইচজে
আরো পড়ুন ইমদাদুল্লাহ রশিদি আধুনিক ভারতের মহানপুরুষ, সম্প্রীতির মুখ