আতাউর রহমান খসরু: ‘কওমি শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে গতকাল ৩১ মার্চ সংবাদিক সম্মেলন করেছেন সংগঠনের সদস্য সচিব মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ।
রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি কওমি শিক্ষাসনদের স্বীকৃতির বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি দাবি করেছেন, বেফাক কওমি কমিশন আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। আর তার নেপথ্যে রয়েছেন বেফাকের দায়িত্বশীল ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ।
মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ মনে করেন, এসব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ হাইআতুল উলয়ায় ২০ দলীয় জোটের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন। তার বাহক হিসেবে ব্যবহার করছেন বেফাককে।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি হাইআতুল উলয়ার অন্য ৫ বোর্ডের দাবিসমূহ মেনে নেয়ারও আহবান জানান।
মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদের এ সাংবাদিক সম্মেলনের উত্তরে বেফাক এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করে নি। তবে অভ্যন্তরীণভাবে বেফাক ও হাইআতুল উলয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে।
মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদের অভিযোগ বিষয়ে বেফাক মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না। শুধু এতোটুকু বলবো, বেফাকের ভেতরে এবং বেফাকের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক এজেন্টা বাস্তবায়নের সুযোগ নেই। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
৫ বোর্ডের দাবি বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সরাসরি ২০ দলীয় জোটের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন বেফাকের সহ-সভাপতি ও হাইআতুল উলয়া সদস্য মুফতী মোহাম্মদ ওয়াক্কাস।
প্রবীণ এই আলেম রাজনৈতিককে মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদের অভিযোগের কথা জানালে তিনি পাল্টা অভিযোগ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘যাদের চোখে রঙিন চশমা তারা পৃথিবীকে সাদা দেখবে কিভাবে? ইয়াহইয়া মাহমুদদের পরিচয় জাতির কাছে গোপন কিছু নয়। তারা কেনো এসব কথা বলছে সচেতন ব্যক্তি মাত্রই তা জানেন।’
তবে ৫ বোর্ড ও বেফাকের মধ্যে বিরাজমান বিবাদকে কওমি শিক্ষাসনদের স্বীকৃতির জন্য হুমকি হিসেবেই দেখছেন বেফাকের সহ-সভাপতি ও হাইআতুল উলয়ার সদস্য আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ।
তিনি বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি আমার কাছে সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না। আমি বিএনপি সরকারের সময়ে স্বীকৃতি সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটিতে ছিলাম। তখন যেসব কারণে এবং যেভাবে স্বীকৃতিকে বাধাগ্রস্থ করা হয়েছিলো এখন সেই আলামতগুলোই ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।
সাবস্ক্রাইব করুন এখনই
তখন যেমন একদল মানুষের বিরোধিতার কারণে স্বীকৃতি হয় নি এখনও হয়তো তাই হবে।’
তবে এখনই চূড়ান্ত কোনো মন্তব্য না করে বরং আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে চান দেশের শীর্ষ এ আলেম।
বেফাকের ব্যাপারে খানিকটা ক্ষেদ ও আক্ষেপ নিয়ে আল্লামা আনোয়ার শাহ বলেন, বেফাকের একদম শুরু থেকে আমি বলে আসছি বেফাকে রাজনীতি করে এমন ব্যক্তিদের না রাখতে।
আপনি হিসেব করে দেখবেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কারণেই বারবার বেফাক প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
তিনি মনে করেন, বেফাকে সংবিধানে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দায়িত্বপালন বিষয়ে যে নির্দেশনা রয়েছে তা পালন করলে আজ যেসব অভিযোগ ওঠানো হচ্ছে তার অনেকগুলো উঠতো না।
আরও পড়ুন: ‘হাইআতুল উলয়ায় সমান পদ ও মর্যাদা চায় পাঁচ বোর্ড’
ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত: যা বললেন ৩ চিন্তাবিদ আলেম