আসাদুযযামান: অবিলম্বে কওমি মাদরাসার শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি ও কওমি শিক্ষার সর্বোচ্চ অথরিটি হাইআতুল উলয়ায় পাঁচ বোর্ডের দাবি বাস্তায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে কওমি শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ।
আজ ৩১ মার্চ রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনের সদস্য সচিব মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্বীকৃতির পথে কিছু মানুষ অন্তরায় এবং হাইআতুল উলয়ায় বেফাক আধিপত্য বিস্তার করছে বলে অভিযোগ করেন। তবে তিনি নির্দিষ্ট করে কারো নাম উল্লেখ করেননি।
মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ বলেন, আসহাবে সুফ্ফার অনুসরণে ধর্ম, দেশ ও জাতি ও সম্প্রীতি সুরক্ষার নিমিত্তে ১৮৫৭ সালে ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ সূচনা হয় কওমি মাদরাসার। ব্রিটিশ বেনিয়াদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলো এই কওমি মাদরাসার উত্তরসূরিরা।
দেশ, সমাজ ও সংস্কৃতি বাঁচানোর আন্দোলনে কওমি মাদরাসার অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
অবশ্য মুসলিম বিশ্বে সর্বপ্রথম বাগদাদে নিজামুল মূলক তূসী ‘মাদরাসা-ই নিজামিয়া’ নামে মাদরসা শিক্ষার সূচনা হয়। এর আগে মসজিদভিত্তিক ছিলো এই শিক্ষাব্যবস্থা। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো- যুগ যুগ ধরে এই কওমি মাদরাসাকে নিয়ে চলে আসছে ষড়যন্ত্র।
তিনি বলেন, দীর্ঘ পথপরিক্রমার পর দেশের বর্ষীয়ান উলামায়ে কেরামের সদিচ্ছার কারণে বিভিন্ন মত ও পথের সবাইকে নিয়ে একত্রে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গ্রহণ করেছি কওমী মাদরাসার শিক্ষাসনদের সরকারি স্বীকৃতি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করছি, আজ স্বীকৃতি বাস্তবায়নের পথে ঘাঁপটি মেরে থাকা সেসব ২০ দলীয় জোটের লোকেরাই স্বীকৃতিকে সরকারের একটি বুমেরাং কার্যক্রম হিসেবে দেখাতে চায়। তারা মূলত ২০ দলীয় জোটেরই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। তারা সরকারের সুফল ও সফলতাকে নষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন সাহেব পরামর্শ দিয়েছিলেন পাঁচ বোর্ডেও পক্ষ থেকে একজনকে কো-চেয়ারম্যান নেয়া হবে। পরিতাপের বিষয় হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিবের কথাকেও তোয়াক্কা না করে তারা নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, স্বীকৃতির পেছনে কারা অবদান রেখেছেন তা জাতি জানে। জানেন প্রধানমন্ত্রী নিজেও। নতুন করে আর বলতে চাই না। তবে সংখ্যালঘুর মতো আচরণ আমরা সহ্য করবো না। বিগ ব্রাদারসুলভ আচরণ আমরা কোনোভাবেই মানতে চাই না। ছয়বোর্ডকে সমান মার্যাদায় হাইয়াতে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ ৫টি দাবির কথা উল্লেখ করেন। এগুলো হলো-
১. কওমী মাদরাসার যে ছয় বোর্ডকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে প্রত্যেক বোর্ডকে সমান মর্যাদা দিতে হবে।
২. হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান পদে যোগ্য হিসেবে পদায়নের শর্ত আরোপ করতে হবে।
৩. অন্তত বেফাক ছাড়া অন্যান্য বোর্ড থেকে দুজন কো- চেয়ারম্যান নিতে হবে।
৪. কোরামপূরণে অন্যান্য বোর্ডের সদস্যদের আবশ্যকীয় হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
৫. হাইয়াতুল উলইয়াকে সব বোর্ডের কেন্দ্রীয় অফিস হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। বেফাকের অঙ্গসংগঠন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ ও বক্তব্য শেষে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরের জবাব দেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক রোকন রাইয়ান প্রশ্ন করেন বেফাক একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭৮ সালে। কওমি মাদরাসা নিয়ে বেফাকের পরিশ্রম অনেক। সেখানে পাঁচ বোর্ড- যাদের পরিচিতি তুলনামূলক অনেক কম এবং একটি বোর্ড বছর দুয়েক আগে গঠিত, সে হিসেবে হাইআতুল উলয়ার কমিটিতে সবার সমান অংশগ্রহণ অযৌক্তিক কিনা?
এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সমান অংশগ্রহণ চাইনি, বলেছি সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু হাইআতুল উলয়ার আইনে দেখা যাচ্ছে মিটিংয়ে যে কোনো ১১ জন উপস্থিত থাকলে কোরাম পূর্ণ হবে। সেখানে বেফাক ব্যতীত অন্যবোর্ডের সদস্য উপস্থিত না থাকলেও যে কোনো আইন তারা পাশ করতে পারবে। অথচ পৃথিবীর কোনো যৌথ সংগঠনের ক্ষেত্রে এমন নিয়ম নেই।
উর্ধ্বতনরা তো মনে করেন এই ১১ সদস্যের মধ্যে সব বোর্ডের প্রতিনিধি আছেন, থাকবেন- আপনারা নিজেদের আলাদা মনে করছেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা তো মনে করার সুযোগ নেই। সেখানে আনুপাতিক হারে হিসাব করাটা জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা আবদুল আলীম ফরিদী, মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন, মাওলানা মাসউদুল কাদির প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উলামায়ে কেরামের উপস্থিতিতে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদকে মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) এর সমমান প্রদানের ঘোষণা দেন। এরপর ৬ টি বোর্ড নিয়ে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ অথরিটি আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া গঠন করা হয়।
বোর্ডগুলো হলো, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা, ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া চট্টগ্রাম, আযাদ দ্বীনী এদারা বোর্ড সিলেট, তানযীমুল মাদারিসিল কওমিয়া বাংলাদেশ, জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিবের সঙ্গে দুপুরে ৫ কওমি শিক্ষাবোর্ডের বৈঠক