শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

ছেলে হারানো সেই ইমামের কাছে হেরে গেলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের সঙ্গে আসানসোলের সাম্প্রদায়িক হামলায় সন্তান হারানো ইমামের তুলনামূলক অবস্থানকে উপজীব্য করে একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সে দেশের সংবাদমাধ্যম ইনিউজরুম।

২৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাবুল সুপ্রিয় যেসব টুইট ও রিটুইট করেছেন তার সঙ্গে ওই ইমামের ভূমিকার তুলনা করে ওই সংবাদমাধ্যম দেখিয়েছে, কী করে অখ্যাত ওই ব্যক্তি তার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মন্ত্রীকে ছাড়িয়ে গেছেন।

বাবুলের টুইটে মিলেছে দোষারোপের রাজনীতির আলামত। বিপরীতে সংঘাতে কিশোর সন্তানকে হারানো ওই ইমাম ডাক দিয়েছেন শান্তির।

হিন্দু দেবতা রামের জন্ম বার্ষিকী উদযাপনের রাম নবমীর র‍্যালি থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা শুরু হয়। গত রবিবার শুরু হওয়া এই দাঙ্গায় এখন পর্যন্ত ৫ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজন আসানসোলের নূরি মসজিদের ইমাম মওলানা ইমদাদুল্লাহ রশিদির কিশোর সন্তান হাফেচ সিবগাতুল্লাহ।

বাবুল সুপ্রিয় আসানসোল থেকে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সংসদ সদস্য। সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সময়েও তিনি টুইট করেছেন পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী ও স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য তিনি এদেরকেই দায়ী করছেন। বাবুলের অবস্থান পর্যালোচনা করে সংবাদমাধ্যম বলছে, সংঘাতের পঞ্চম দিনেও ভারতীয় এই প্রতিমন্ত্রী এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে সংঘাতকবলিত আসানসোল ও রাণিগঞ্জের দুই সম্প্রদায়ের মানুষকে ঘৃণা-বিদ্বেষ ভুলে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাননি।

কিন্তু  ছেলে হত্যার প্রতিবাদে কোনও পদক্ষেপ না নিতেও মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মানুষ যদি শান্ত না হয় তাহলে শহর ছেড়ে চলে যাবেন।

২৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাবুল অনেকগুলো টুইট করেছেন। কিন্তু সেগুলোর কোনটিতেই শান্তি ও সম্প্রীতির আহ্বান নেই। তার অনেক টুইটে উল্লেখ করা হয়েছে, সংখ্যালঘু ও হিন্দুরা। ইনিউজরুম বলছে, বাবুলের টুইট উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ঘি ঢালছে। একটি টুইটে বাবুল চামড়া উঠিয়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। বক্তব্য পর্যালোচনা করে ইনিউজরুম বলছে, বলিউডের গায়ক থেকে রাজনীতিক হওয়া এই নেতা প্রমাণ করেছেন, তিনি শুধু একটি সম্প্রদায়ের নেতা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আসানসোলের এই এমপি তার অবস্থানের কারণে বেশ কয়েকজন টুইটার ব্যবহারকারীর সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তারা তাকে মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তিনি সেখানকার সব মানুষের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধি, শুধুই একটি সম্প্রদায়ের নেতা নন।

এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতেই ১৬ বছরের ছেলেকে হারিয়েছেন এই ইমাম। ছেলের জানাজা ও দাফনের সময় ক্ষুব্ধ ও প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণকারী মানুষদের থামিয়ে শান্ত করেছেন তিনি। ছড়িয়েছেন শান্তির বাণী। ইনিউজরুম বলছে, সুমধুর কণ্ঠ দিয়ে লাখো মানুষের মন জয় করা বাবুল সুপ্রিয় হেরে গেছেন নূরি মসজিদের ইমাম মওলানা ইমদাদুল রশিদির কাছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া দাঙ্গায় বৃহস্পতিবার ইমদাদুল খবর পান, দুইদিন ধরে নিখোঁজ থাকা ছেলের লাশ পড়ে রয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে ছেলেকে শনাক্ত করলেন ক্ষত-বিক্ষত লাশ, নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত, আধপোড়া লাশটি দেখে মনে হয়, পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।

বিবিসি বাংলাকে ছেলে হারানোর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এই ইমাম বলেছেন, ছেলেটা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল, একই সঙ্গে নানা জায়গায় কোরান পড়তেও যেত। বুধবার যখন দাঙ্গা শুরু হয়, তখন নেহাতই কৌতূহলবশে দেখতে গিয়েছিল। আমার বড় ছেলে খবর দেয় যে, একদল লোক ওকে টেনে নিয়ে গেছে। খুব যন্ত্রণা দিয়ে মেরেই তো ফেলেছে ছেলেটাকে। পরে দেহটা জ্বালিয়েও দিয়েছিল। এটা কেন করল ওরা!

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছেলে হারানোর শোক ভুলে ইমদাদুল যে বলিষ্ঠ অবস্থান নেন তা আসানসোলকে আরও বড় বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়েছে। এই ভয়ংকর ঘটনার পরও এলাকায় আরও দাঙ্গা অথবা কোনওরকম সাম্প্রদায়িক অশান্তি ঠেকানো গেছে তার দৃঢ়তার কারণেই। গ্রামের হিন্দু ও মুসলমান পরিবারগুলো বহু বছর ধরে যেমন ছিল তেমনই রয়েছে, মসজিদ-মন্দির অক্ষত আছে।

এইচজে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ