শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘দেওবন্দ ছেড়ে যাওয়া আমাদের জন্য ছিল অত্যন্ত কঠিন’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

[জামিয়া দারুল উলুম করাচির মুখপাত্র ‘ماہنامہ البلاغ মাহনামা আল-বালাগ’ এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বিশ্বনন্দিত আলেম, স্কলার আল্লামা তাকি উসমানির আত্মজীবনী আওয়ার ইসলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।

এ বিষয়ে আল্লামা তাকি উসমানি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ার ইসলামকে ভাষান্তর করে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি জামিয়া দারুল উলুম করাচির তাখাসসুস ফিল ইফতার শিক্ষার্থী, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের শুভাকাঙ্ক্ষি উমর ফারুক ইবরাহীমীর মাধ্যমে আল্লামা তাকি উসমানি ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মজীবনী ‘ইয়াদে’ অনুবাদের অনুমতি চাওয়া হলে তারা খুশি মনে রাজি হন এবং আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানান বাংলাভাষায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য।

আল্লামা তাকি উসমানির নতুন ধারাবাহিক আত্মজীবনী “یادیں ইয়াদেঁ ” মাহনামা আল-বালাগে সফর ১৪৩৯ হিজরি, নভেম্বর ২০১৭ ইংরেজি মাস থেকে। আওয়ার ইসলামে লেখাটি সপ্তাহে দুদিন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে। আজ প্রকাশ হলো ১৯ তম কিস্তি। অনুবাদ করেছেন মাওলানা  উমর ফারুক ইবরাহীমী।]

আব্বাজান মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ.এর জন্য স্থায়ীভাবে দেওবন্দ ছেড়ে পাকিস্তান আসা, বিভিন্ন কারণে নেহাত দুষ্কর ছিলো।

প্রথমত: দেওবন্দে আব্বাজানের নানাবিধ ব্যস্ততা ছিলো,মুহুর্তেই সেগুলো ছেড়ে দেয়া অতো সহজ ছিলো না।

দ্বিতীয়ত: আমাদের দাদি সাহেবা রহ. তাঁর সাথেই থাকতেন। দাদিকে দেওবন্দে একা রেখে আসাটা দুরূহ ব্যাপার ছিলো। আবার সঙ্গে করে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়াটাও ছিলো মুশকিল।

কারণ, তখন তিনি ছিলেন অতিশয় বৃদ্ধা। নিরাপত্তার দিক থেকে পরিস্থিতি ছিলো বড় ভীতিকর।অপরদিক বিবাহিতা দুই কন্যাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়াটা ছিলো অসম্ভবপ্রায়। সেকালে সন্তানাদি ভিনদেশে থাকার কল্পনাটাও বড় কষ্টের ছিলো।

তৃতীয়ত: দারুলউলুম দেওবন্দ থেকে অবসর গ্রহণের পর, ঘরোয়া প্রয়োজন মেটানোর একমাত্র মাধ্যম ছিলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কুতুবখানা দারুল ইশা'আত।

তখনকার ঝঞাট ও ফ্যাসাদকালীন সময়ে সেটাকে পাকিস্তান হস্তান্তর করা ছিলো অসাধ্য ব্যাপার।

চতুর্থত: সে সময়ে দেশের বিভিন্নস্থানে চলছিলো, হিন্দু-শিখ কর্তৃক সম্মিলিতভাবে মুসলিম গণহত্যা। পাকিস্তানে আগমনকারী মুহাজিরদের, কদমে কদমে খুনদরিয়া পাড়ি দিতে হতো।

পঞ্চমত: পাকিস্তানে আমাদের ভরণপোষণের কোনো স্থায়ী সমাধান ছিলো না। সমূহ কারণে তখন পরিবারের সবার আলোচ্য বিষয় ছিলো একটিই যে, আমাদের পাকিস্তান যাওয়া মুনাসিব কিনা?

হযরত মাওলানা ইহতিশামুল হক থানবি রহ.যিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা লাভের পূর্বে দিল্লি সেক্রেটারিয়েট মসজিদের খতিবের দায়িত্বে ছিলেন, তিনি হযরত আল্লামা শাব্বির আহমাদ উসমানি রহ. এর প্রায় কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তান চলে এসেছিলেন।

আল্লামা উসমানি রহ.তাকে হযরত আব্বাজান রহ.এর নিমন্ত্রণের জন্য দেওবন্দ পাঠালেন।

এদিকে উপরোল্লিখিত কারণে, খান্দানের অধিকাংশের মতামত ছিলো ভিন্ন। তবে- অবশেষ আব্বাজান ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলেন, যেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকরণের কাজে এখনো পর্যন্ত তাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, তার সঠিক উন্নতি, অগ্রগতি করণার্থে সেখানে নিজের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।

বিশ্বের অালোচিত ১০ ইসলামিক বই; যা অবশ্যই পড়া উচিত

এটি আব্বাজানের জন্য ছিলো অত্যন্ত কঠিন সিদ্ধান্ত। কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা তাকে অস্বাভাবিক শক্তি, সাহস দান করেছিলেন। তাই তিনি সকল সমস্যা থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ঘরের সবাইকে সোজাসাপ্টা হিজরতের কথা জানিয়ে দিলেন এবং প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বললেন।

বয়স স্বল্পতার দরুন সমস্যাদির কথা তো আমার কিছুই জানা ছিলোনা, তবে ঘরোয়া পরিবেশে সবার আনন্দ-বেদনার বহিঃপ্রকাশের অনুভব করতে পারতাম।

আব্বাজান রহ.তখনো পর্যন্ত জীবনের সিংহভাগ অংশ নিজের পৈতৃক ভিটেবাড়ির একটি ছোট্ট কুটিরে অতিবাহিত করছিলেন। বছর কয়েক আগে, সবেমাত্র আগ্রহভরে নিজের ঘরের সেই আবাসস্থলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করিয়েছেন।

অপরদিকে বাগবাগিচার প্রতিও তার বেশ শওক ছিলো। তাই তিনি দেওবন্দের জি.টি রোডের কাছে একটি বাগান করেছিলেন। নিজের ইলমি ব্যস্ততার ফাঁকে একটুখানি ফুরসত মিলে গেলেই তিনি বেশিরভাগ আসরের পর সেখানে চলে যেতেন।

কখনো আমিও আব্বাজানের সঙ্গী হতাম। সেই বাগানে বিশেষত তিনি আমের চাড়া লাগাতেন।

হিজরতের বছরই সেগুলোতে, প্রথম ফল আসছিলো। বাগানে তিনি একটি কুঠরিও বানিয়ে ছিলেন। কখনো ঘরের সবাই সেখানে সমবেত হয়ে, সবুজ শ্যামল বাগান থেকে প্রমোদিত হতাম।

এসবকে এক মূহুর্তে ছেড়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে বৃহৎ ধৈর্যের পরীক্ষা ছিলো। কারণ, ছেড়ে যাবার অর্থ ছিলো, এ সকল জায়গাজমি, ঘরবাড়ি সরকারের দখলে চলে যাওয়া।

হযরত আব্বাজান এতকিছু ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়ার পর বলতেন- ‘যেদিন আমি এই বসতবাড়ি, বাগবাগিচা থেকে কদম উঠিয়েছি, এগুলো আমার দিল থেকেও বেরিয়ে গেছে।’

বাস্তবতা হচ্ছে, যুহদ (দুনিয়া বৈরাগ) এর ব্যাখ্যা পরবর্তীকালে বিভিন্ন গ্রন্থে পড়েছি। বুজুর্গদের মুখে শুনেছি, ‘মানুষ দুনিয়ার সম্পদের প্রতি মন দেবে না। যদি সম্পদ থাকে, তবে তার মোহকে মনে স্থান দেবে না’।

এ কথার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ আমরা আব্বাজানের জীবনের পরতে পরতে দেখেছি। আল্লাহ্‌ তা'আলা তাকে স্বীয় রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দেন।আমিন! চলবে ইনশাআল্লাহ...

আগের পর্ব: ‘প্রতি রাতে চাউর হতো, মুসলিমদের উপর আক্রমণ হবে’

-রোরা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ