আওয়ার ইসলাম: দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজের জিম্মাদার মাওলানা সাদ কান্ধলভী বাংলাদেশে আগমন নিয়ে আলেমদের কটাক্ষ করায় কুমিল্লা শাসনগাছা দাওয়াতুল হক মাদরাসার মুহতামিম মুফতি ইয়াহ ইয়া মাহমুদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে কুমিল্লা জেলা কওমি মাদরাসা সংগঠন।
বুধবার সকাল ৯ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত চলা এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয় কুমিল্লা জেলা কওমি মাদরাসা সংগঠন নেতৃবৃন্দ।
সংগঠনের সভাপতি মাওলানা নূরুল হকের সভাপতিত্বে সংগঠনের কার্যালয় জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলূম মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হয় এ বৈঠক৷
বৈঠকে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের কটাক্ষ করায় মুফতি ইয়াহ ইয়া মাহমুদকে কুমিল্লা জেলা কওমি মাদরাসা সংগঠন থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কয়েকটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়৷
সিদ্ধান্তগুলো হলো, এক. যতক্ষণ পর্যন্ত মুফতি ইয়াহ ইয়া মাহমুদ উলামায়ে কেরামের কাছে ক্ষমা না চাইবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অবাঞ্ছিত থাকবে।
দুই. ইয়াহইয়া মাহমুদ যতদিন শাসনগাছা দাওয়াতুল হক মাদরাসার মুহতামিম হিসেবে থাকবেন ততদিন ওই মাদরাসার ছাত্ররা সংগঠনের কোনো ইভেন্ট ও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না৷
এ নির্দেশনা মুফতি ইয়াহ ইয়া মাহমুদ মুহতামিমের পদ থেকে বহিস্কৃত না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
এছাড়া তাকে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) হতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার কার্যকারী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংগঠনটিকে আবেদন করবে কুমিল্লা জেলা কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড।
বৈঠকে অংশ নেয়া আলেমদের থেকে জানা যায়, মুফতি ইয়াহ ইয়া মাহমুদ তাবলিগ জামাত ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে আলেমদের কটাক্ষ করেছেন। যে কারণে জেলার ধর্মপ্রাণ মানুষ ও আলেমগণ তার প্রতি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষিপ্ত।
ধরণ পাল্টে ভয়াবহ রূপে যৌতুক; বিলুপ্ত হচ্ছে না কেনো?
সম্প্রতি মুফতি ইয়াহ ইয়া মাহমুদ নিজের ফেসবুক পোস্টে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও আকাবির উলামাদের শানে অরুচিকর মন্তব্য এবং ‘রাজাকার’ বলেও গালি দেন। যারা মাওলানা সাদের বিপক্ষে বিক্ষোভ করেছেন তাদেরকে জালেম বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এমন মন্তব্য ও ভ্রান্ত অবস্থানের জের ধরেই বিতর্কিত ইয়াহ ইয়া মাহমুদকে কুমিল্লা জেলা কওমি মাদরাসা সংগঠন থেকে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে।
এর আগেও তিনি চিংড়ি মাছ খাওয়া না জায়েজ ফতোয়া দিয়ে ব্যাপক বিতর্কিত হয়েছিলেন কুমিল্লায়।
কুমিল্লা জেলা কওমি মাদরাসা সংগঠনের এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা জেলা কওমি মাদরাসা সংগঠনের সভাপতি ও কুমিল্লা বট্রগ্রাম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা নুরুল হক, কুমিল্লা কাসেমুল উলূম মাদরামার মুহতামিম মাওলানা আবদুর রাযযাক, রানীর বাজার মাদরসার মুহতামিম মাওলানা মুনীর আহমদ, নন্দনপুর মাদরাসার মুহাতামিম হাফেজ ওয়ালিউল্লাহ, কাসেমুল উলুম মাদরাসার শিক্ষাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা মুনীরুল, মুফতী তাওহীদ মাওলানা মুফিযসহ কুমিল্লার শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম।
বিষয়টি বিস্তারিত জানতে প্রথমে কুমিল্লা জেলা কওমি মাদরাসা সংগঠনের সভাপতি মাওলানা নূরুল হককে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
একই বিষয় নিয়ে কাসেমুল উলুম মাদরাসার শিক্ষাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুসকে ফোন করা হলে তিনিও কথা বলেননি। তবে আগামীকাল ফোন করলে বিস্তারিত জানাবেন বলে প্রতিবেদককে আশ্বাস দেন।
এদিকে অবাঞ্ছিত করা বিষয়ে মুফতি ইয়াহ ইয়া মাহমুদকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, কারা কেন অবাঞ্ছিত করেনছেন আমি জানি না। তবে আমি দাওয়াত ও তাবলিগের পক্ষের লোক। আমি সাদ সাহেবের বিপক্ষে বলি না বলেই হয়তো তারা এমনটি করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমি যদি আল্লাহর কাছে অবাঞ্ছিত না হই তাহলে দুনিয়ার মানুষ অবাঞ্ছিত করে কী ক্ষতি করতে পারবে? আমি আমার কথায় অটল আছি।
আলেমদের ‘রাজাকার’ বলেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন।
কেন রাজাকার বললেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাইকে বলিনি একজনকে বলেছি।
এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সমাধান করতে গিয়ে কাউকে ব্যক্তি আক্রমণ করা উচিত কিনা জানতে চাইলে তিনি নিজের ভুল স্বীকার করেন।
তবে তিনি তার কথায় জোর দিয়ে বলেন, মাওলানা সাদ যে ভুল করেছেন তা আমি মানি, তিনি কিছু বিষয় থেকে রুজু করেছেন, ভবিষ্যতে পুরোটাই করবেন বলে আমরা আশাবাদী। কিন্তু তার আগে তার বিরুদ্ধে সম্মানহানীকর কিছু করা উচিত নয়।
আরও পড়ুন: মাওলানা সাদ চাইলে মিনিটেই এ আগুন নেভাতে পারেন
-রোরা