কলম পেষার নেশা যাদের পেশা হয়ে ওঠে তাদের কাছে ডান হাতের তিনটি আঙুল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃদ্ধ, তর্জনি আর মধ্যমা। ডানপন্থীদের জন্য বৃদ্ধ আর তর্জনি ছাড়া কলম চালানো প্রায় অসম্ভব। ছবির মানুষটি এক দুর্ঘটনায় ডান হাতের বৃদ্ধ আঙুলের রগ কেটে যাওয়ার দুঃসংবাদটি যখন মোবাইলে জানান তখন তার কষ্টটা দ্রুতই আমাকেও আক্রান্ত করে ফেলে।
আক্ষেপ করে বললেন, আমি তো এনালগ যুগের মানুষ। তাই পেরেশান লাগছে। তখন হয়তো তার স্মরণে আসেনি যে, ডানপন্থী হোন আর বামপন্থী, ডিজিটাল যুগের মানুষের জন্য দুই হাতের সব আঙুলই জরুরি। কেননা, ডিজিটাল-বোতামগুলো সব আঙুল দিয়েই চাপতে হয়। সে বৃদ্ধই হোক বা কনিষ্ঠ।
মুহম্মদ যাইনুল আবিদীন। প্রাজ্ঞ আলেম, দরদি শিক্ষক, চিন্তাশীল খতিব। সবকিছু ছাড়িয়ে যে মাধ্যমটির দ্বারা অধিক মানুষের মন জয় করতে পেরেছেন সে হলো লেখালেখি। কাগজের জমিনে কলমের লাঙল-চষা সফল চাষী তিনি। বর্তমান সময়ে বিশুদ্ধ বাংলায় সাহিত্য-চর্চাকারী একজন সব্যসাচী আলেম লেখক। সুতরাং ডান হাতের বুড়ো আঙুলটি তাঁর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
গত ১৭ মার্চ (শনিবার) আঙুলটিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। হাসপাতালের বিছানার সামনে যতক্ষণ ছিলাম হাসিমুখটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। তিনিও বিনিময় দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মোবাইলে ধারণ করা ছবিগুলোতে তার মুখাবয়বে চিন্তার ছায়া স্পষ্ট।
সত্যিকার মুক্তচিন্তা, পরিশীলিত সৃষ্টিশীল ও আল্লাহওয়ালা এই মানুষটিকে এর আগে কখনও পেরেশান হতে দেখিনি। কিন্তু সৃষ্টির প্রসব-বেদনায় কাতর কারও যদি তার সুন্দর চিন্তা ও ভাবনাগুলোর ছবি সহজে প্রকাশ করতে না পারার আশঙ্কা দেখা দেয় তাহলে কষ্টটা ভিন্নমাত্রা পায় বৈকি।
আর দুর্ঘটনার কারণ যখন হয় গণপরিবহনের চালকদের রাজপথে রেসিং- তখন আক্রোশে ফেটে পড়তে চাইলেও তা বোবা হয়েই থাকে মরার দেশের বাসিন্দা হিসেবে।
জানতে পেরেছি, ব্যান্ডেজ বাঁধা হাতটি ৬ সপ্তাহ গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে। মহান আল্লাহ তাঁকে ধৈর্য দিন, সাহস দিন আর দ্রুত সুস্থ করে দিন। কওমের নিবেদিতপ্রাণ এমন দরদি লেখকের সুস্থতাসহ দীর্ঘ হায়াত খুবই জরুরি; আল্লাহ কবুল করুন।
সমর ইসলামের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া