'এতগুলো লাশ সামনে নিয়ে জানাজায় অংশ নেয়া জীবনে এই প্রথম। ভয়াবহ অবস্থা। লাশগুলো নিতে আসা স্বজনদের আহাজারি, লাশের কফিনের সারিতে দুটো ছোট কফিন... ভাবা যায় না।'
গতকাল নেপালের বিমানবন্দরে বসে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টেলিফোনে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আবাসিক সার্জন হোসাইন ইমাম।
তিনি ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে ২৩ জনের প্রথম জানাজায় অংশ নিয়েছেন। সোমবার সকালে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসে তাদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ৯টার দিকে জানাজা হয়।
দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশ থেকে যে প্রতিনিধি দল নেপালে গিয়েছিল, সে প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য হোসাইন ইমাম। সোমবার দুপুরে প্রতিনিধি দলের দুই পুলিশ সদস্য ছাড়া বাকি ছয়জন দেশে ফিরছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ উড়োজাহাজে করে গতকাল ২৩টি মরদেহ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়।
হোসাইন ইমাম বলেন, 'আমি চিকিৎসক। অসুস্থ মানুষ নিয়েই কাজ করি। আমাদের সামনে রোগী মারাও যায়। কিন্তু চোখের সামনে নিজ দেশের এতগুলো লাশের কফিন দেখাটা খুবই 'ভয়ানক'। ছোট দুটি কফিনের দিকে তাকানোই যাচ্ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে আমাদের নেপাল পাঠিয়েছেন। হাসপাতাল ঘুরে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলাসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু কী যে মন খারাপের মধ্যে কাজ করেছি, তা শুধু আমরাই জানি। এখানে আমরা যারা প্রতিনিধি দলে ছিলাম বা নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের, সবার অভিজ্ঞতাই ছিল একই রকম।'
হোসাইন ইমাম জানান, তিনি সরাসরি কোনো লাশ দেখেননি। লাশ শনাক্তকরণসহ অন্যান্য কাজ করেছেন প্রতিনিধি দলের অন্যরা। তিনি বলেন, 'কফিনগুলো দেখেই সহ্য করা যাচ্ছে না।'
হোসাইন ইমাম জানান, আহত বাংলাদেশি রোগীদের মধ্যে এখন আর নেপালে কেউ থাকল না। সোমবার ইয়াকুব আলীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দিলিস্ন পাঠানো হয়েছে। আহত আরেক রোগী কবির হোসেনকেও দেশে নিয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের তিনজনের লাশ শনাক্তকরণসহ কিছু কাজ বাকি থাকায় দুই পুলিশ সদস্য নেপালে অবস্থান করছেন। সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হোসাইন ইমাম কফিনের সাদাকালো ছবি দিয়ে লিখেছেন, 'আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারি নাই...।'
১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার ড্যাস ৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত্ম হয়। ৪ ক্রুসহ উড়োজাহাজে ছিলেন ৭১ যাত্রী। তাদের মধ্যে ২৬ বাংলাদেশি, ২২ নেপালি, ১ জন চীনাসহ ৪৯ জন নিহত হন।
আর ১০ বাংলাদেশি, ৯ নেপালি, ১ মালদ্বীপের নাগরিকসহ ২০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের কাঠমান্ডুর তিনটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সূত্র : প্রথম আলো।