আবদুল্লাহ তামিম: আগামী সপ্তাহে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যখন হোয়াইট হাউস যাবেন, তাকে একজন সংস্কারক হিসেবে অভিনন্দন জানানো হবে বলেই প্রত্যাশিত। তিনি বিশ্বের কঠোরতম রক্ষণশীল দেশটিতে নারীদের অধিকার আরও বাড়িয়েছেন। নারীদের গাড়ি চালানোর, খেলা দেখার অনুমতি দিয়েছেন।
কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে অন্তত একজন সৌদি নারী রয়েছেন, যিনি প্রিন্সের উত্থানে উপকৃত হননি। আর সেই নারীটি হলেন প্রিন্স সালমানের মা প্রিন্সেস ফাহদা বিনতে ফালাহ আল হাথলিন।
১৪ জন বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মার্কিন গণমাধ্যম এনবিসি নিউজকে জানিয়েছেন, ক্ষমতার জন্য মাকে বন্দি রেখেছে সৌদি প্রিন্স! কিং সালমানের তৃতীয় এই স্ত্রীকে তার সাথে দেখা করতে দিচ্ছেন না। প্রিন্সের শঙ্কা, তার মা তার ক্ষমতা আরোহণের বিরোধিতা করতে পারে এবং সৌদি বাদশাহর উপর প্রভাব খাটাতে পারে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, গোয়েন্দা তথ্য, বিবৃতি ও অন্যান্য দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার করা তথ্যের ভিত্তিতেই তারা মায়ের বিরুদ্ধে প্রিন্সের এই পদক্ষেপের বিষয়ে এমন বিশ্লেষণে পৌঁছান।
দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রিন্সেস ফাহদার রহস্যজনক অনুপস্থিতির জন্য প্রিন্স সালমান বেশ কয়েকটা ব্যাখ্যাও দাঁড় করিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হলো, তার মা চিকিৎসার জন্য। দেশের বাইরে রয়েছেন।
মার্কিন কমকর্তারা জানান, প্রিন্সেস ফাহদাকে কিং সালমানের কাছ থেকে দূরে রাখার এই সিদ্ধান্তটি ওবামা প্রশাসনের সময়েই নেয়া হয়েছিলো। তরুণ প্রিন্স সালমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার জামাতা ও হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জেরেড কুশনারের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এই সপ্তাহেই ঘোষণা আসে, প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার (২০ মার্চ) ক্রাউন প্রিন্সের সাথে দেখা করবেন। বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চায় ট্রাম্প। দেশ দুটির অভিন্ন নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারগুলোকে এগিয়ে নিতে চায়।
৩১ বছর বয়সী প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, যিনি এমবিএস নামেই পরিচিত, গত বছরের জুনে তার চাচাতো ভাইকে সরিয়ে ক্রাউন প্রিন্স হন। এরপর থেকেই তিনি স্পটলাইটে আসেন। এরপর দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার কথা বলে দুই শতাধিক প্রতিদ্বন্দ্বি ব্যবসায়ী ও পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করিয়েছেন তিনি।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছেন তিনি। ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে দেশে ও দেশের বাইরে কিছু কঠোর পদক্ষেপও নিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি সরকারের এই পদক্ষেপগুলোকে সমর্থন জানিয়েছেন। জেরেড কুশনারও এমবিএসকে ঘনিষ্ঠ মিত্র ও মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে আস্থায় নিয়েছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানায়, কিং সালমানকে (৮২) জানানো হয়েছে তার তৃতীয় স্ত্রী এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা জানায়, কিং জানিয়েছেন যে, তিনি তার তৃতীয় স্ত্রীকে মিস করছেন। কিন্তু তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানায়, সৌদি প্রিন্স তার মাকে অন্তত কিছু সময়ের জন্য কিং সালমানের অগোচরে সৌদি আরবের একটি প্রাসাদে গৃহবন্দী করে রেখেছিলো।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে হোয়াইট হাউসের এক বৈঠকে কিং সালমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে জানান, তার স্ত্রী চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে রয়েছেন। কিন্তু তার স্ত্রী যে আসলে নিউইয়র্কে নেই, তা ওবামা কিং সালমানকে জানাননি। কিং সালামনের এই মন্তব্য মার্কিন কর্মকর্তাদের গোয়েন্দা তথ্যকে সমর্থন করে।
২০১৬ সালের শুরুতে মার্কিন কর্মকর্তারা এমন সব যোগাযোগের বিষয়ে জানতে পারেন যেখানে এমবিএস তার মাকে তার বাবার কাছ থেকে দূরে রাখার বিষয়ে কথা বলেছেন। বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা এমনটি জানায়।
তবে ওবামার মুখপাত্র ও দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চায়নি।কুশনারের একজন মুখপাত্রও এবিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি।
তবে ওয়াশিংটনে সৌদি আরবের দূতাবাসের মুখপাত্র ফাতিমা বায়েশিন, এই বিষয়টিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তাকে কোন প্রকার গৃহবন্দী বা স্বামীর কাছ থেকে আলাদা রাখার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন।
সূত্র:এমটিনিউজ২৪