শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


সাব্বির জাদিদের পাপ নিয়ে আলাপ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যিয়াদ বিন সাঈদ: সাব্বির জাদিদ। ভিন্নতর এক সঙ্গীতের চয়ন অথবা বংশীবদনে এক নতুনত্ব নিয়ে হুরহুর করে নেমে পড়া একজন লেখকের নাম। খড়খড়ে এ উজার মাইদানে যুদ্ধ যুদ্ধ মনোভাব নিয়ে নীরবে বিপ্লব গড়ে তুলবার মতই অনবদ্য তিনি।

তিনি যেভাবে অন্যরকম কিংবা তিনি যেভাবে বৈপ্লবিক সুরের স্রষ্টা, অথবা হৃদয়ের সুরম্য মিনারে তার আহ্বান যেমন করে এতটা মধুর; সে আলাপ করতেই নেমে এলাম এখানে। নেমে এলাম 'পাপ' এর পদভারে পিষ্ট হ'তে হ'তে।

মেলার শুরু সময়ে, বাসায় এসে টেবিলে খুব যতন করে গিফট প্যাপারে মোড়ানো একটি বই দেখে আমার ভেতরে পুলক অনুভব হলো। হৃদয়ের আছে যত কান্না, থেমে গেল হুট করে এবং পরপর আরও বিস্মিত হলাম, বইটিতে যে নামলিপি দেয়া আছে, তা-ই 'পাপ'।

যেন এ পাপ হাসছে। প্রথম প্রেমিকার মত লজ্জানত হয়ে। বিস্ময়ের প্রাচুর্য আরও প্রলম্বিত হলো এ ভেবে, বইটির নির্মাতা স্বয়ং সাব্বির জাদিদই আমাকে গিফট করেছেন এবং ভালোবাসার অক্ষরে প্রেম ঢেলে দিয়েছেন। সে থেকেই আমি ঋণী।

কিন্তু ঋণেজড়িত আমি মিথ্যার ভেতর আশ্রয় নিয়ে একটুও 'পাপ' করতে চাই না। আমি আরও পষ্ট করে বলতে চাই আমার ভেতরে জমে থাকা 'পাপ'এর আলাপ।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮ তে প্রকাশিত সাব্বির জাদিদের প্রথম উপন্যাস এ 'পাপ'। গ্রন্থটি গতানুগতিক সব ধারা ছাপিয়ে এক নতুন কিছু বলে মনে হয়েছে। যেন এখানে দেখা গেছে সাব্বির জাদিদের পুরোনো অবয়ব ধূলোয় মিশে গিয়ে উদ্ভাবিত এক নতুন সাব্বির জাদিদকে।

এমন প্লটে বাংলা সাহিত্যে কোনো কাজ হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। এমন নতুন স্বাদের বোধ পাঠকের মনে নিশ্চিত আনন্দ দিতে পেরেছে। অন্তত আমাকে পেরেছে।

সাব্বির জাদিদের ভাষারূপ কেমন, এটা নিয়ে বিস্তর কোনো আলাপের প্রয়োজন নেই। এখন সময় যেমন, সৃজনশীল কোনো ধারাকে একমাত্র উপজীব্য করে লিখছেন। অন্যের অনুকরণ একটা সংকট বলা যেতে পারে। অনুকরণবৃত্তি সবাইকে পেয়ে বসছে।

কেউ হুমায়ূন অথবা কেউ আজাদের রীতিনীতি ধারণ করে নেমে আসছে প্রতিনিয়ত। সাব্বির জাদিদ এমনই এক স্রোতের বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়ে সংগ্রামশীল লেখকের পরিচয় দিয়ে যেতে পারছেন ক্রমাগত।

ভিন্নতা, সৃষ্টিশীলতা এবং একান্তভাবে নিজেকেই স্রষ্টা মনে করে এগিয়ে যাচ্ছেন সামনে। অদূরবর্তী সফলতার প্রাচুর্যে। 'পাপ'র ভেতর স্পষ্টতই এগুলো ফুটে উঠেছে। ভালোভাবেই বোঝা গিয়েছে।

সাব্বির জাদিদ ঔপন্যাসিক হিসেবে চতুরতার পরিচায়ক যেভাবে, তা নিয়ে একটু আলাপ করি। যতদূর জানি, সাব্বির জাদিদের পাঠক সর্বমহলেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ফলে অনিশ্চিত সম্ভাবনা নয় যে, তার পাঠকের অনেক বড় একটি অংশ ঠিক পাঠক হিসেবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। এ মাত্রার পাঠক যখন এসব দীর্ঘ উপন্যাসের দ্বারস্থ হবেন, তারা ক্লান্ত হয়ে উঠবার শঙ্কা অবশ্যই রয়ে যায়।

সাব্বির জাদিদ ঠিক এখানে এসে যা করলেন; তিনি মানবিক যত জৌলুস আছে ভেতরে, সব উথলে দিতে চাইলেন। শব্দের ঝনঝনানির ভেতর নীরবে নীরবে তিনি হৃদয়ের ঝনঝনানি তুলে দিয়ে পাঠককে আঁকড়ে রাখতে চাইলেন।

যেন-বা মনে হচ্ছিলো আজাদ পত্রাবলী পড়ছি। কিংবা রুদ্র আমাকে প্রেমের গান শোনাচ্ছেন। লেখকের এ চতুরতা বহুমাত্রিক এবং সূক্ষ্মতর এক সাফল্য।

'পাপ' উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে একটি সুন্দর দিক আমার অনুভূত হয়েছে। এ বইটি বয়সের সহিংসতাবিরোধী। একজন শিশুকে এ বই দিলে তারই চিন্তার উৎকর্ষতা অনুযায়ী নিশ্চিত সে আনন্দ পাবে। মনে হবে তার, সে রুপকথার গল্প পড়ছে।

এমনই এক জগতে সে চলে এসেছে, যেখানে ঠাকুরমার ঝুলি বসেছে। অভিনব পরিবেশে এ জগতের বিস্তৃতি আরও বিস্তর হচ্ছে। ক্রমাগত। এরপর এ বইটি যখন চোখেমুখে তরুণতা খেলে যাওয়া একটি বয়সের হাতে আসবে, সেও একে ফেলে দিতে পারবেনা।

স্পর্শী শৌর্যবীর্য আরও শালিত হবে। তাকে আনন্দ দিতে থাকবে। সাব্বির জাদিদকে একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে খুব ধুরন্ধর মনে হয়েছে এসব বিষয় দেখে দেখে।

সবশেষে আমার কানে যে বার্তাটি এসে পৌঁছেছে 'পাপ'র মলাটে আবৃত হয়ে, তা কিছুটা নাজুক অথবা আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে কিছুটা ভয়াবহ। এটা বুঝাবার ক্ষেত্রে আমাকে বইয়ের পাতা কিছুটা ওল্টাতে হবে।

আমরা যে জগতে বসবাস করছি, নিশ্চিত 'পাপ'র বোঝা এখানে আমাদেরকে সইতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত আমরা কর্ম অকর্ম করে পাপের বোঝা আরও ভারী করছি।

সাব্বির জাদিদ আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে এ 'পাপ'র সঙ্গে আমাদের আরও আবৃত করে যখন ছেড়ে দিলেন ভিন্ন একটি জগতে; যে জগতে 'পাপ' বলতে কিছু নেই। নেই কোনো হাঙ্গামা।

যেন শুধুই শুদ্ধতায় ভরা। তখন সবচাইতে মজাদার যা উপলব্ধ হয়, আমাদের এ অবয়ব কতটা নিকৃষ্ট। কতটা হীন আমাদের যাপিত জীবন। শুদ্ধতার সন্ধান দিতে সাব্বির জাদিদের এ শ্রম সফলতার আকাশে উড়ে যেতে পারলেও এক জায়গায় এসে একটু ক্ষান্ত হতে হবে।

পাঠকের কপোলে একটু ভ্রুকুঞ্চন দেখা দিবে। সেটা ঠিক কীভাবে তা বলি; এইযে 'পাপ' এর নায়ক এবং নায়িকা যেভাবে স্থিত হলো 'পাপ'কে না জানা এক জগতে, এবং সে জগতের স্বাভাবিকতা কে তাড়িয়ে দিয়ে তারা যখন উদ্ভব করলো এক নতুনের, এটা ঠিক কোন আদলে সাব্বির জাদিদ উপস্থাপন করেছেন, তা একটু ঘেটে দেখতে ইচ্ছে হয়েছে আমার।

সাব্বির জাদিদ গল্পের ভেতর দিয়ে যে বার্তাটি দিতে চাইলেন বলে মনে হলো, 'পাপ'কে না জানা এক জনগোষ্ঠীকে তুমুল সংকটাপন্ন করবার জন্যে যেসব কারণ দাঁড় করানো যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো ধর্মের পালন।

ধর্মেরগ্লানি কিংবা ভেদাভেদ ভুলে একরকম অধর্মী মানসিকতাই পারে একটি জনগোষ্ঠী কে সুস্থ রাখতে। সাব্বির জাদিদ কি আসলেই এমন কোনো ইঙ্গিত এখানে করেছেন? আমার মনে হয় না।

সুচারু রূপে ধর্মের পালন, হোক সেটা একেকরকম, তাই তো কেবল পারে শুদ্ধতার সন্ধান দিতে। সাব্বির জাদিদ হয়তোবা ইসলামকে আরও শক্তিসম্পন্ন রূপে মোহিত করবার জন্যে এমন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছেন। বাকিটা খোদা মা'লুম।

কিন্তু গভীর দৃকপাত যে এসব ভুল ভাঙাতে পারবে, তার একটি নিশ্চয়তা আমি দিতে পারছি অনায়াসেই। এবং এর জন্যে আমার বলতে ইচ্ছে করছে, একদম অক্ষরজ্ঞানহীন কেউ সাব্বির জাদিদের পাঠক হবার যোগ্য নন। তাকে পাঠ করতে হলে প্রয়োজন আরও গভীরতা।

মোদ্দাকথা, সাব্বির জাদিদের 'পাপ' উপন্যাসটি এমন ভিন্নত্ব বয়ে যে গর্ব আমাদের বুকে ঢেলে দিতে পেরেছে, আমরা তারই প্রতীক্ষায় ছিলাম এতটা সময়।

আলোচনা সমালোচনার ভেতর দিয়ে 'পাপ' যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এদিকওদিক তা নিশ্চিত ঈর্ষার জন্ম দিয়েছে অন্য অন্য পাড়ায়। মহলে। যুগ যুগ জিইয়ে থাকুক 'পাপ'। এবং সে 'পাপ'র মোচন হোক যুগে যুগে এমনই সাব্বির জাদিদদের হাত ধরে ধরে।

পাপ । সাব্বির জাদিদ
প্রকাশক: ঐতিহ্য । প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ

মুদ্রিত মূল্য: ২৫০। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঘরে বসে বইটি পেতে অর্ডার করুন রকমারিতে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ