জাহিদ আহমদ জিয়া
জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় শেষ হতে যাচ্ছে। আজ বুখারি ছানি, অর্থাৎ বুখারি দ্বিতীয় খণ্ড'র দরস শেষ হলো!! ফলে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত ভারাক্রান্ত!
জামিয়া ইসললামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া দক্ষিণ যাত্রাবাড়ি ঢাকা, ‘মাহমুদি কাফেলা’ ছাত্রদের প্রতিটি বুকে, প্রতিটি হৃদয়ে আজ বিদায়ী সুর ভেসে উঠছে। এ বিদায়ী সুর শুধু ‘মাহমুদি কাফেলা’র একা নয়। এ বিদায়ী সুর, বেদনা! প্রত্যেক কওমি শিক্ষার্থীর।
কওমি মাদরাসাগুলোতে শেষ হতে যাচ্ছে দাওরা হাদিস ২০১৭-২০১৮ এর অধ্যায়। ফের ছাত্ররা, অনেকে কর্মজীবনে ব্যস্ত হবে, আবার অনেকে উচ্চতর গবেষণায় নিজেকে সমর্পণ করবে।
আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধন কেমন যেন বিচ্ছেদের পথ খুঁজতে শুরু করেছে!! যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক! আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে এ বন্ধন; শিউলি ফুলের মতো। শরৎ নিশির স্বপ্ন-প্রভাতের বিচ্ছেদ বেদনা!!
কবি বলেছেন, শরৎ নিশি সমস্ত রাত স্বপ্ন দেখেছে শিউলি ফোটাবার। আর ভোর হতেই গাছকে বিচ্ছেদ বেদনা দিয়ে ঝড়ে পড়লো সেই শিউলি। আমাদের ও দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের বন্ধন বিচ্ছেদের পথ খুঁজতে শুরু করেছে, বন্ধন থেকে ঝরে পড়তে।
‘প্রিয় কওমি অঙ্গনের ছাত্রবৃন্দ! তোমাদের ‘জাযাকুমুল্লাহ’ যে তোমরা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ইতি করতে যাচ্ছো। আমি চাইবো তোমাদের কিছু স্পষ্ট কথা বলতে। যা বলবো তা পূর্ণবিশ্বাস ও প্রত্যয় এবং পূর্ণ আস্থা ও স্থিরতার সঙ্গে বলতে পারি।
আমরা কওমি অঙ্গনের প্রতি যে সুধারণা, যে আস্থা ও বিশ্বাসের পরিচয় রেখে যাচ্ছি। এই আস্থা ও বিশ্বাসের দাবি এটাই; আস্থার প্রতিদানের সততা ও সত্যবাদিতা রক্ষা করে ইসলামের সৌন্দর্য আম জনতার সামনে তুলে ধরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী'র বক্তব্য; কওমি সন্তানরা এ দেশকে নেতৃত্ব দেবে। কী মার্জিত কথা।
আলহামদুলিল্লাহ। আমরা যেন আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের মনের আশা পূর্ণ করে পারি। আমাদের যেন; লৌকিকতা সৌজন্যচিন্তা আমাদের কর্তব্য থেকে বিচ্যুত না করতে পারে সেদিকে আমরা যথেষ্ট মনযোগী হবো ইনশা-আল্লাহ।’
‘শোনো প্রিয় কওমি ছাত্রবৃন্দ! একজন কওমি ছাত্র হচ্ছে মানবতার সর্বোচ্চ আদর্শ। মানুষের জন্য সবচে’ পরিপূর্ণ নমুনা ও দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী বলতে পাড়ি মানবতার রোল মডেল।
সুতরাং কওমি ছাত্রদের হাজারো দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্তব্য হলো- 'আকলে
সালিমা’ সুস্থ বুদ্ধির যথার্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাঁরা সবার থেকে এগিয়ে থাকবে। সবার শীর্ষে।
‘তোমরা জীবনের চলার পথে যতো ঘটনা-দুর্ঘটনা এবং বিপদ-দুর্যোগের সম্মুখীন হবে, সহসাই বড়দের পরামর্শে সঠিক নতিজা সিদ্ধান্তে উপনীত হবে আশা করি।
আল্লাহ না করুক, যদি কখন তোমরা বিপদ-দুর্যোগে পড়ে যাও তাহলে সেখান থেকে কঠিনাকারে শিক্ষাগ্রহণ করবে। যেন দ্বিতীয়বার একি গর্তে না পড়ো।
কেননা হাদিসে এসেছে- ‘মুমিন একই গর্তে দু’বার দংশিত হয় না। কেনো হয় না? কারণ পূর্বের
ঘটনা ও অভিজ্ঞতা থেকে সে শিক্ষাগ্রহণ করে। আর বাস্তবতাই এটাই; আকল বুদ্ধি ওয়ালা কওমি ছাত্রবৃন্দ একই গর্তে বারবার দংশিত হতে পারে না।
‘তোমরা শিক্ষাঙ্গনের প্রধান ছাত্র। আমরা তো ভুলতে পারি না, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সেই দিনের দিবালোকের মতো পরিষ্কার বক্তব্যের কথা; কওমি মাদরাসা হলো এদেশের শিক্ষার সূচনা। কওমি মাদরাসা না হলে আমরা কেউ শিক্ষিত হতাম না।
প্রিয় সুহৃদয় কওমি ছাত্রভাই’রা তোমরাই এ দেশের সোনার ছেলে। আসো আমরা শপথ করি ফারেগ হয়ে আমরা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরবো। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বে।
লেখক: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রবাড়ীর দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষার্থী