আহমাদ হাবীব শাকির : যাইনুল আবিদীন লেখক মানুষ। যতদূর জানি, একজন বিবেক এবং বুদ্ধিসম্পন্ন বিজ্ঞ-আলেমেদীন। জেনেছি খাদিমুল হাদীসও।
মানুষ জ্ঞানী হয়, অনেক মানুষ। এই জ্ঞানের পূর্ণতা কমনসেন্স ছাড়া পূর্ণতা কিম্বা যৌবণ পায় না। কমনসেন্স শব্দের বাংলা তর্জমা করলে অর্থ আসে, কান্ডজ্ঞান। এই কথাটাই কচ্ছি। যৌবণ না পেলে মৌবন হয় না, চিরায়ত বাস্তব।
কথা প্রসঙ্গে আইনস্টাইনের একটা কেচ্ছা কওয়া যায়। গেলো শুক্কুরে 'কালের খেয়া'য় পড়া এই আখ্যান মজার সাথে শেখারও কিছু দিয়ে যায়।
আলবার্ট আইনস্টাইন বিগত কালের শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানী। সর্বকালের আমি মানি না। ভবিষ্যত বলার আমি কেউ নই, আলিমুল গায়েবই সর্ববিদিত।
একটা প্রোগ্রামের কথা। স্যার আইনস্টাইন গাড়িতে বসা। ড্রাইভার বললো, স্যার! আপনি তো সম্মানী মানুষ। দুনিয়ার পুব-পশ্চিম আপনাকে চেনে। বিশ্বময় শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর অভিধায় বরিতও আপনি। আমার যদি এমন ভাগ্য হতো!
স্যার আইনস্টাইন বললেন- ঠিকাছে আজকের সেমিনারে তুমিই আইনস্টাইন হয়ে ওয়াজ ফরমাইবা। এখানকার কেউ পূর্বে আমাকে দেখে নি। নো প্রবলেম।
সেমিনার শুরু- 'বিজ্ঞানের আগামী ও বৈশ্বিক প্রভাব'- শীর্ষক। পরিকল্পনা মোয়াফেক চালক সাব ডায়াসে উঠলেন। বক্তৃতা করলেন আইনস্টাইনের শৈলীতেই। অমিত প্রশংসিতও হলেন।
এরপর প্রশ্নোত্তরপর্ব। বিজ্ঞানবিষয়ক নানান প্রশ্নের যখন সম্মুখীন হলেন চালক, সহাস্যমুখে জবাব দিলেন- এই গুলান? আমি কেনো, আমার ড্রাইভারই তো নিটোল বলতে পারবে বলে চালককে ডাকলেন। আইনস্টাইন এসে সবগুলোর জবাব দিলেন। একদিকে যেমন বিস্ময়ে 'থ' শ্রোতারা, আইনস্টাইনও ড্রাইভারের বুদ্ধির তারিফ না করে যান কই?
এই যে কওয়া, এটাই কান্ডজ্ঞানের সংজ্ঞা। অধুনাকালে কান্ডজ্ঞানহীন লেখকদের বাজার যদিও গরম, মুহাম্মদ যাইনুল সেইসব বিভ্রান্তদের দলে নয় আমি মনে করি। এই বাসন্তী কুকিলদের আকাশ যদিও কালেভদ্দরে রোদেলা হয়, তথাপি ছন্দপতনেরও সীমান্ত আছে বলে খুব বিশ্বাস হয় না।
আমি সমালোচক নই, সমালোচনা জিনিসটাও আমার কাছে ভালো না লাগার একটা সাবজেক্ট। এইটা যদিও ক্যাটাগরি হিসেবে পড়ে যায়, মাফ চাওয়ারও মুখ আছে।
মুহাম্মদ আবিদীন প্রবেশিকা হলেও, রচনা আর সপথে নেই- সত্য। আবিদীন যে পথের মৌয়াল, সে পথ যদিও বন্ধুর- আমি সে পথকে ঘৃণা করি না বলেই তাঁকে ভালো লাগে।
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীনের একটি বই আমাকে তার কাছে টেনেছে। রচনার গুণমুগ্ধ শ্রোতায় পরিণত করেছে। যদিও শ্রোতা হিসেবে আমি পরিণত নই। চোখ থাকলেই যেহেতু পাঠক হওয়া যায়, সে হিসেবে আমি পাঠক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি বলা যায়।
ইসলামিধারার লিখনী-বারান্দা এখন ঋদ্ধ। রচনা সমৃদ্ধ নয়, এটা বাস্তব কথা। বাংলাভাষায় অলঙ্কারসমৃদ্ধ ইসলামি বই অগণিত নয়। যে ক'টা বই ছাগলামি টাইপের নয়, আবিদীনের 'বড় যদি হতে চাও' এর একটা হিসেবে আমি গণ্য করি। এই ব'য়ের ভাষা এবং রচনার শৈলী নদীময়। ভাবের পারস্পরিক কথোপকথনও মসৃণ পেলবতায় টইটুম্বুর।
রসিকজন কয়ে থাকেন, 'এই দেশে কবির সংখ্যা কাকের চেয়েও বেশি'। আল মাহমুদসহ অনেকেই যেহেতু এটাকে ইতিবাচক হিসেবে মনে করেন, লেকিন বাউন্ডুলে কান্ডজ্ঞানহীন লেখকসম্প্রদায় যেমন ক্ষতিকর দেশ, দশ ও ধর্মের জন্য- তেমনি বিপজ্জনক পরিবেশের জন্য। দেশ আর ধর্মের বড় ক্ষতিটা এদের কমনসেন্স-বিবর্জিত কু-প্রতিভারই প্রসব। এই বিষয়টা তো আল মাহমুদরা অস্বীকার করবেন না।
বাংলাদেশে 'ইসলাম-ঘেঁষা সাহিত্যের বিপ্লব' বলে মিথ্যুক হবার শখ না থাকলেও, সুন্নতি লেবাসধারি সেলফিবাজ ময়দা-চেহারার তথাকথিত লেখকদের সংখ্যা কম না বলে অত্যাধিক বলতে দ্বিধা নেই। আর এরাই ছড়াচ্ছেন নচ্ছারি আর বিচ্ছিরি। নষ্ট করছেন আমাদের মৌলিকত্ব। আবিদীন সেই ক্রান্তিলগ্নে সম্পূর্ণ আদর্শবাদী সারথি হয়ে সুন্নতি চেতনার শরাবান তহুরার বিজ্ঞাপন নিয়ে উপস্থিত হলেন মিছিলের পয়লা সারিতে।
আবিদীন রোড-অ্যাক্সিডেন্টে আহত। হসপিটালে চিকিৎসাধীন। যেই শুনেছি, আমার ভেতরটা কেমন কেঁপে উঠেছে। বাদলাদিনের এই প্রতিভাধর রঙফানুসের নেক-জীবনের সাথে সুস্থ হয়ে আমাদের মিছিলে ফিরে আসুন, সূর্য উঠার এই সময়ে গেয়ে উঠুন মুহম্মদি তারান্নুম, কামনা করি।