আওয়ার ইসলাম: সরকারের শেষ সময়ে ৩০০ জন এমপিকে নিজ নিজ আসনের মাদরাসার অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি গৃহীত হলে প্রত্যেক এমপি তাঁর আসনের ছয়টি করে মাদরাসা উন্নয়নে সাড়ে ২২ কোটি টাকা পাবেন।
সেই হিসাবে প্রতিটি মাদরাসা উন্নয়নে খরচ হবে পৌনে চার কোটি টাকা। সমতল কিংবা পাহাড়ি এলাকা যেখানেই হোক না কেন, মাদরাসা ভবনগুলো ছয়তলা করতে হবে। মোট এক হাজার ৮০০টি মাদরাসার উন্নয়নে চার বছরে এই অর্থ ছাড় দেওয়া হবে।
এমপিদের পছন্দের এই এক হাজার ৮০০ মাদরাসার সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব পছন্দের আরো ২০০টিসহ মোট দুই হাজার মাদরাসার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সাত হাজার ৮৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবটি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
‘নির্বাচিত মাদরাসাগুলোর উন্নয়ন’ শিরোনামের প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে এমপিদের জন্য এটি হবে বর্তমান সরকারের আমলে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত। তবে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের এ উন্নয়নকাজের বাইরে রাখা হয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে তৈরি হওয়া প্রকল্পটি পর্যালোচনা করে বিস্মিত ও হতবাক পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা। প্রস্তাবিত প্রকল্পে নানা ধরনের অসংগতি খুঁজে পেয়েছেন কমিশনের কর্মকর্তারা। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব পদমর্যাদা) ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ প্রস্তাবটি পেয়ে সব মাদরাসার তালিকা জানতে চান। কিন্তু কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ সব মাদরাসার তালিকা দেখাতে পারেনি।
মাদরাসার নাম ফাঁকা থাকলে সেখানে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ থাকে বলে মত দেন তিনি। সরকারের নিয়মানুযায়ী, ২৫ কোটি টাকার বেশি কোনো প্রকল্প নেওয়া হলে তার সমীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে এত বড় প্রকল্পটি নেওয়ার আগে কোনো ধরনের সমীক্ষা করা হয়নি। কমিশন থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্রতিটি আসনে কিসের ভিত্তিতে ছয়টি মাদরাসা বাছাই করা হয়েছে।
কারণ, কোনো সংসদ সদস্যের আসনে মাদরাসা আছে ৫০টি। আবার কোনো আসনে আছে ১০টি। আবার পার্বত্য জেলায় দেখা গেল, ছয়টি মাদরাসা নাও থাকতে পারে। আসন ভিত্তিতে জনসংখ্যারও তারতম্য আছে। প্রতিটি আসনে ছয়টি করে মাদরাসা ছয়তলা ভবন করার ক্ষেত্রেও ভারসাম্য থাকে না বলেও মত কমিশনের কর্মকর্তাদের। তাদের মতে, সমতলে ছয়তলা, আবার পাহাড়েও ছয়তলা ভবন নির্মাণ যৌক্তিক হতে পারে না।
এর আগে ২০১৬ সালের মে মাসে সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ আসনের রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণে ছয় হাজার ১৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। ওই প্রকল্পের আওতায় একজন সংসদ সদস্য প্রতিবছর পাঁচ কোটি টাকা করে চার বছরে মোট ২০ কোটি টাকা পাবেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে সংসদ সদস্যদের পছন্দের মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ নির্মাণে ৬৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আলাদা একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল সরকার।
সেই প্রকল্পের আওতায় একজন সংসদ সদস্য দুই কোটি টাকা করে পাওয়ার কথা। আর সব শেষ গত বছরের শেষ দিকে সংসদ সদস্যদের পছন্দের গ্রামীণ হাট-বাজার উন্নয়নে এক হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল একনেক সভায়। ওই প্রকল্পের আওতায় একজন সংসদ সদস্য সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার বেশি পাওয়ার কথা। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মাদরাসা নির্মাণে যে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে, বরাদ্দের দিক থেকে এটি নজিরবিহীন।
এইচজে