রকিব মুহাম্মাদ
আওয়ার ইসলাম
ফিনল্যান্ড হচ্ছে উত্তর ইউরোপের একটি দেশ। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে এ দেশের অবস্থান ৬৫তম। আর ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে অষ্টম। দেশীয় ভাষায় ফিনল্যান্ডের নাম হচ্ছে ‘সুওমি’। ‘সুওমি’ শব্দের অর্থ ‘হ্রদ ও দ্বীপভূমির দেশ’। এদেশের আয়তন ৩ লক্ষ ৩৮ হাজার ১শ ৪৫ বর্গকিলোমিটার।
বর্তমানে ফিনল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা ৫৪ লক্ষ । জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে দেশটি ১১১ নম্বরে রয়েছে। গড়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৬ জন বসবাস করে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন জনসংখ্যার দিকে দিয়ে ফিনল্যান্ডের অবস্থান তৃতীয়।
সম্প্রতি জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্কের (এসডিএসএন) বার্ষিক প্রতিবেদনে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
মাথাপিছু আয়, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও গড় আয়ু, সামাজিক স্বাধীনতা এবং দুর্নীতির মাত্রা মতো কয়েকটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতি বছর এ তালিকা করছে এসডিএসএন।
এবারের তালিকায় শীর্ষে থাকা ফিনল্যান্ড পয়েন্ট কুড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৩। সামাজিক নিরাপত্তা, শিশুদের প্রতি যত্ন, মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিনা খরচে চিকিৎসার মতো বিষয়গুলো তাদের পয়েন্ট বাড়িয়েছে।
বুধবার প্রকাশিত এ তালিকায় সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে সবার শীর্ষে ফিনল্যান্ডের নাম থাকার কারণ কী? এর ব্যাখ্যায় ডেনমার্কের হ্যাপিনেস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মেইক উইকিং বলেন, সুখের দেশের তালিকায় ফিনল্যান্ড সবার ওপরে রয়েছে। এটি খুবই উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
তিনি বলেন, দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) পার্শ্ববর্তী নরডিক দেশগুলোর তুলনায় কম। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় যা আরও কম। তারা তাদের সম্পদ কল্যাণমূলক কাজে বেশি ব্যবহার করতে পারছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিনল্যান্ডে পাড়ি জমানো ব্রায়ানা ওয়েনস বলেন, আমি তো অন্য আমেরিকানদের মজা করে বলি- আমরা যে আমেরিকার স্বপ্ন দেখি, তা আছে এই ফিনল্যান্ডে। গত বছরের তালিকায় দেশটি ছিল পাঁচ নম্বরে।
জাতিসংঘ এই প্রথমবারের মতো জানিয়েছে, তারা প্রতিটি দেশের অভিবাসীদের সুখের মাত্রা নিয়ে জরিপ চালিয়েছে। ফিনল্যান্ডে সেই মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেফরি সাচ রয়টার্সকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে আমরা আসলেই একটি সামাজিক সমস্যায় রয়েছি, এখানে বৈষম্য বাড়ছে, বিশ্বাস কমছে। সরকারের উপর নাগরিকদের আস্থা এখন সবচেয়ে কম।”
“এটা (তালিকা) দেখিয়ে দিল, আমরা সম্পদশালী হচ্ছি, কিন্তু সুখী হচ্ছি না। এটা বেশ খারাপ ইঙ্গিত,” বলেন এই অধ্যপক।
প্রসঙ্গত, এবারের তালিকায় তাদের পরের স্থানগুলোতে রয়েছে- ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন ও অস্ট্রেলিয়া। ১৫৬টি দেশের এই তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ১১৫তম স্থানে। বাংলাদেশের পয়েন্ট ৪ দশমিক ৫০।
তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান রয়েছে ৭৫তম স্থানে (পয়েন্ট ৫ দশমিক ৪৭), ভুটান ৯৭তম স্থানে (৫ দশমিক ০৮), নেপাল ১০৮তম স্থানে (৪ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট), শ্রীলংকা ১১৬তম স্থানে (৪ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট), ভারত ১৩৩তম স্থানে (৪ দশমিক ১৯ পয়েন্ট), মিয়ানমার ১৩০তম স্থানে (৪ দশমিক ৩০ পয়েন্ট)।
উল্লেখ্য, অতীতের বছরগুলোর মতো এবারের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টটিও তৈরি করেছে জাতিসঙ্ঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন)।