রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মান্য করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ঢাকা জেলার এস পি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী
সাভার প্রতিনিধি

পুলিশে মাত্র ১শ’ টাকার বিনিময়ে (ফর্মের দাম) চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে আলোচনায় আসেন ২০ ব্যাচের এক কর্মকর্তা। নিয়োগে স্বচ্ছতায় তার নেয়া প্রয়াস সারা দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। ঘুষবিহীন চাকরি নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার মর্যাদা দিলেন ঢাকা জেলার এস পি শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

ঢাকা জেলাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে প্রার্থীর মেধা আর যোগ্যতা বিবেচনাই ছিলো কনষ্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ার শেষ কথা’-নিজ জেলাতে নিয়োগ নিয়ে বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে এমনটিই বলছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

পুলিশের বিভিন্ন পদে চাকরি ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতার কথা তিনি এভোবেই বলেন, এ নিয়োগের আগে হটাৎ করেই আমার কাছে ফোন আসা বেড়ে গেলো। স্বাভাবিক সময়ে যেসব ফোন আসে তার চাইতে প্রায় তিনগুণ। এর সবই তদবিরের ফোন।

আরো পড়ুন
‘মাওলানা সাদ চাইলে এক মিনিটেই তাবলিগের আগুন নেভাতে পারেন’
পাকিস্তানে মৌখিকভাবে তালাক নিষিদ্ধ
পাকিস্তানে তাবলিগের ইজতেমা ভণ্ডুল করতে আত্মঘাতি হামলা; নিহত ৯

ঘুরে ফিরে সবার একটাই কথা,ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগে তার প্রার্থীকে যেন বিবেচনা করা হয়। সকলকে বিনীতভাবে স্মরণ করিয়ে দিলাম কনস্টেবল নিয়োগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) স্যারের নির্দেশনার কথা। সেই সঙ্গে আমাদের শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখার অঙ্গীকার।

চলতি বছর পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ শারীরিক বাছাই পরীক্ষায় ২২০০ প্রার্থীর মধ্যে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন ১৫১৬ জন।এর মধ্যে পুরুষ (সাধারন) ১৩৫১জন, (মুক্তিযোদ্ধা) ৩৯ জন,(পোষ্য) পুরুষ ২৭ জন, নারী (সাধারন)৯৬ জন,(পোষ্য) নারী ৩ জন।এদের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় পুরুষ (সাধারন)

১০৮৮জন, (মুক্তিযোদ্ধা) ৩৭ জন, (পোষ্য) পুরুষ ২৭ জন,নারী (সাধারন)৯৬ জন, (পোষ্য) নারী ৩ জনসহ মোট ১২৫১ জন উর্ত্তীণ হন।

মৌখিক পরীক্ষা শেষে এদের মধ্যে পুরুষ (সাধারন) ৪৭১জন,(অপেক্ষমান) ৬১ জন (মুক্তিযোদ্ধা) ৩৬জন, (পোষ্য) পুরুষ ২৭ জন,নারী (সাধারন)৮৫ জন,(অপেক্ষমান)১ জন(পোষ্য) নারী ৩ জনসহ সর্বমোট ৬’শ ৮৪ জনকে প্রাথমিকভাবে মেডিকেলের জন্য নির্বাচিত হয়।

যার প্রতিটি স্তরেই বজায় রাখা হয় সর্বোচ্চ সততা,স্বচ্ছতা আর পেশাদারিত্ব- বলছিলেন,নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাইদুর রহমান।

গত বছরের ২১ ডিসেম্বর ১০ হাজার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর। এরমধ্যে সাড়ে ৮ হাজার পুরুষ ও দেড় হাজার নারী সদস্যকে নিয়োগ দেওয়ার কথা ।

গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪ জেলায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত রাখা হয়।

পরে অবশ্য তা মার্চের শুরুর দিকে আবার শুরু হয়।

পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ফি বছর ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রায় গা সওয়া বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

জেলায় জেলায় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে এমপি-মন্ত্রীরা পুলিশ সুপারদের কাছে তালিকা ধরিয়ে দেন।এই বিষয়টিও এখন ওপেন সিক্রেট।

এমন প্রেক্ষাপটে চট্রগ্রামে প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণে আয়োজিত শোক সভায় খোদআওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক,সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কণ্ঠে উঠে পুলিশ নিয়োগে দুর্নীতি আর অনিয়মের চিত্র।

তিনি বলেন,‘যে নেতা পুলিশের কনস্টেবলের চাকরির ভাগাভাগিতে টাকার বিনিময়ে অংশ নেন, গরিব মানুষ থেকে টাকা আদায় করেন, সেই নেতা আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই।’

এরই মাঝে পরিবর্তন আসে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি)পদে। ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী আইজিপির দায়িত্ব নিয়েই পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় শতভাগ স্বচ্ছতা অনুসরণের নির্দেশ দেন।

‘চলমান বাস্তবতায় এটা যে কত চ্যালেঞ্জ আর কঠিন তা আমরা বুঝি। উচ্চ পর্যায় থেকে আসা তদবিরকে মুখের ওপর ‘না’ বলা কিন্তু অত সহজ না। সে ক্ষেত্রে আমাদের সততা আর সাহসই ছিলো একমাত্র অবলম্বন।এর মাধ্যমেই আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আর সততা প্রতিষ্ঠিত করেছি’-বলছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

সাভারে সচেতন নাগরিক কমিটির সংগঠক গোবিন্দ আচার্য্য জানান, একজন কনস্টেবল নিয়োগে ব্যাপক বানিজ্য হয়ে হয়ে থাকে। অনেকে ক্ষেত্রে জেলা ভেদে ৭ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়ে থাকে।

রাজনৈতিক নেতা থেকে মন্ত্রী-এমপিরা পর্যন্ত ডিমান্ড অর্ডার লেটার (ডিও) দিয়ে তদবির করেন।তার বাইরে সুযোগ সন্ধানী প্রতারক চক্রতো থাকেই।এই অনৈতিক কারবারে খোদ পুলিশের অনেকেও সংশ্লিষ্টতাও থাকে।

তার মতে,পুলিশিং ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন হলেও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যেতো। কারণ যারা ৮-১০ লাখ টাকা দিয়ে পুলিশে যোগদান করেন,তাদের প্রধান লক্ষ্যই থাকে সম্ভব দ্রুত সময়ে সেই টাকা তোলা।

এভাবে অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্যরা সেবা দেওয়ার চাইতে অর্থ আয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ায় সমাজে অপরাধ বাড়তেই থাকে।

সেই প্রেক্ষাপটে ঢাকা জেলায় পুলিশে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আর সততা প্রতিষ্ঠা সত্যিই একটা উদাহরণ।সমাজে অচিরেই এর প্রতিফলন ঘটবে। ভিন্ন ধারার পুলিশিং চালু হবে- এটা আশাবাদী হবার মতন বিষয় বলেন তিনি।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ