শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
‘জুলাই বিপ্লবে আলেম-শিক্ষার্থীদের অবদান ও প্রত্যাশা’ নিয়ে আলোচনা সভা সোমবার সিলেটে অনুষ্ঠিত বিহানের ‘লেখালেখি ও এডিটিং কর্মশালা’ দেশে ফিরে কর্মফল ভোগ করুন, শেখ হাসিনাকে জামায়াতের আমির রাষ্ট্র সংস্কারে ইসলামবিরোধী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না: জাতীয় পরামর্শ সভা যাত্রাবাড়ীতে জাতীয় পরামর্শ সভায় গৃহীত হলো ৭ প্রস্তাব বারিধারায় হেফাজতে ইসলামের পরামর্শ সভা শুরু ফ্যাসিবাদী সরকারের মূল দায়িত্বের কর্মকর্তারা এখনও অটল রয়ে গেছে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছি: ডিসি ওয়ারী খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি পরিদর্শনে যাচ্ছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল আল্লামা মাহমুদুল হাসানের আহ্বানে সর্বস্তরের আলেমদের নিয়ে পরামর্শ সভা শুরু

কেমন আছে পূর্ব গৌতার নারীরা! কী তাদের আহবান!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুজাহিদুল ইসলাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

‘বায়ান হুতি’

বিমান হামলা ও ধংসস্তুপের মাঝেই হাজার হাজার মানুষের অবরুদ্ধ শহর পূর্ব গৌতার বাড়িগুলোর ভূগর্ভস্হ সেলের মাঝে ঘুরে ফিরছেন এক নারী সেবিকা; আহতদের সাহায্য করছেন,অসুস্হদের সেবাশুশ্রসা করছেন আর এভাবেই চলছে বছরধরে চলতে থাকা অবরুদ্ধ ও যুদ্ধেবিপর্যস্ত পূর্ব গৌতার এক সংগ্রামী নারী ’উম্মেদিয়াত’এর সংগ্রাম।

যখন বিশ্বনারীরা ‘আন্তর্জাতিক নারীদিবসে’জাকজমকপূর্ণ হলরুমে পাশ্চাত্য স্টাইলে নারীদিবস পালন করছে, তখন জাকজমকপূর্ণ হলরুমের বাইরে পূর্ব গৌতার নারীরা আঠার দিন থেকে মাটির নিচের সেলে জীবনযাপন করছে এবং মৃত্যু তাদের স্হায়ী সাথী।

চল্লিশের কোঠায় থাকা এই ‘গৌতাসেবী’নারী বিমান হামলায় তার সব সন্তান হারিয়ে শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করে এ অঞ্চলের বিপর্যস্ত মানুষের সেবার প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছেন।

তিনি সব সময় তার ব্যাগে আবশ্যিক চিকিৎসা সরন্জামাদি নিয়ে ঘুরতে থাকেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তিনি বলেন, “ভূতের শহরে ঘুরে ফিরে চলছেন তিনি, যেখানে মৃত্যু ও ধ্বংস্তুপ ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না।”

উম্মেসামিহ

পূর্ব গৌতার আরেক নারী ‘উম্মেসামিহ’ যিনি এ অঞ্চলের মানুষের কষ্টহ্রাসে কাজ করে চলছেন; অনেক পরিবার বোম্বিং চলাকালে তার সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করে, যে মৃত্যু তাকে তাড়িয়ে ফিরছে তার ভয় উপেক্ষা করে তিনি তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।

‘লায়লা বাকরি’

একনারী কর্মী ‘লায়লা বকরী’ ‘উম্মেসামিহ’ সম্পর্কে বলেন, আমার পক্ষে বা যেকোনো মানুষের পক্ষে উম্মে সামিহকে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়; সে চরম প্রতিবাদী, দাতাদের থেকে সহযোগিতা গ্রহণ করে ভূগর্ভস্হ সেলের মানুষের কাছে খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌছে দেয়।

আলজাজিরাকে দেয়া একসাক্ষাৎকারে ‘বাকরি’ গৌতার নারীদের অবস্হার বর্ণনা দেন; বর্তমানে এখানে নারীদের অবদানই সবচে বড়, কারণ পুরুষরা হয় আটক নয় নিখোজ অথবা শহীদ কিংবা লড়াইয়ের ময়দানে!

তিনি আরো বলেন, কিছু নারী লড়াইয়ের ময়দানে সাহায্য করছে, কিছু নারী চিকিৎসার কাজে আছে আবার কিছু নারী ভূগর্ভস্হ এক সেল হতে আরেক সেলে আহতদের ড্রেসিং ও রোগীদের শুশ্রসার জন্য নিয়োজিত রয়েছে!

তা ছাড়া আরো বড় একটি কাজ যা গৌতার নারীরা করছে, বিভিন্ন সেলে ঘুরে ঘুরে নারী ও শিশুদের বৈঠক করে তাদের চাপ কমানো এবং মানসিক শক্তি বাড়ানোর কাজ করছেন, পাশাপাশি রাসায়নিক হামলা হলে কীভাবে আত্নরক্ষা করতে হবে সেটাও তারা তাদের শিক্ষা দিচ্ছে।

‘বাকরি’ দুই বছর আগে অবরোধের মাঝে জন্ম নেয়া তার শিশু সন্তান‘ইলিনা’কথা বলেন, “আমার কাছে সবচে কঠিন বিষয় হলো, যখন বিমান হামলার আওয়াজ শুনি তখন আমি আমার শিশু সন্তানকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করি যে, এটা তার কোনো ক্ষতি করবে না অথচ আমি জানি এটা তার ক্ষতি করবে; আমি তার ভয় দূর করার চেষ্টা করি অথচ আমি নিজেই ভীত।”

আন্তর্জাতিক নারীদিবসে ‘লায়লা বকরি’ বিশ্বের কাছে আহবান জানান, “আমরা মানুষ, আমাদের আছে আকাংঙা, আছে জীবন; আমরাও বেচে থাকতে চাই, এখনো যৌবনে আছি, আমরা আমাদের কথা প্রকাশ করতে চাই, আমাদের পড়াশোনা সম্পন্ন করতে চাই আর দশজন মানুষের মতে বেচে থাকতে চাই”।

তিনি আরো বলেন, যুদ্ধের সময় জন্ম নেয়া আমাদের সন্তানরা স্বাভাবিক জীবন-সম্পর্কে কিছুই জানে না, ফলমূল কী তা তারা চেনে না; আমার সন্তান কলা চেনে না, কেবল সে ক্ষেপণাস্র ও পাখির আওয়াজের মধ্যেই পার্থক্য করতে পারে!

হামলার সময় বার বার বলতে থাতে “আল্লাহ! আল্লাহ! আমাদের রক্ষা করো ! আমি দরজায় দাড়ানো থাকলে আমাকে ঘরের ভেতরে ধরে নিয়ে যায়।

‘নিফেন হুতরি’

এই নিফেন হুতরি! বিশ্ব যার ফেইসবুক একাউন্টের মাধ্যমে পূর্ব গৌতার সংবাদ জানতে পারে তিনি আলজাজিরাকে বলেন, গৌতার নারীরা তাদের সামর্থের বেশি ভার নিয়ে ফেলেছে; স্বামী মারা যাওয়ার পর তারাই এতিম সন্তানদের বাবা মা আবার স্বামী থাকতেও নিজেদের পয়সা হতে স্বামী ও পরিবারের জন্য খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে, কারণ অবরোধের ভার সবচে বেশি পড়েছে নারীদের ওপর।

কারণ,বিদুৎ ও জ্বালানি মতো আবশ্যিক অধিকাংশ জিনিস সেখানে নেই। হুতরি বলেন,অবরুদ্ধ নারীদের সবার অবস্হা একই রকম; দৈনিক হামলা একস্হানে তাদের একত্র করে। আমাদের মতো নারীরা অবরুদ্ধ নারীশিশুদের কাউন্সিলিং করছি, অথচ আমাদেরই এখন কাউন্সিলিং দরকার!

মাঝে মাঝে যখন নিজের বাচ্চাদের মানসিক সাপোর্ট দেই তখন আমরা আমাদের বাচ্চাদের থেকেই মানসিক সাপোর্ট গ্রহণ করি। তিনি আরো বলেন, উত্তম ও উজ্জ্বল আগামীর আশা হতে নিজেদের সামলে নেই।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তিনি বিশ্বের কাছে আহবান জানান, “পূর্ব গৌতার নারীরা প্রতিবাদী; আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা বাক স্বাধীনতার দাবি করেছি, এর বদলা পেয়েছি আটক, বিমানহামলা ও অবরোধ।

হে বিশ্ব! যদি বাক স্বাধীনতায় আমাদের সাথে একাত্ব হও তো আমাদের সহযোগিতা করো; তোমরা আমাদের আওয়াজ তোমাদের দেশের দায়িত্বশীলদের কাছে পৌছে দাও!”

নিফেন, লায়লা, বায়ান, উম্মে সামিহ ও উম্মে দিয়াতের মতো আরো অনেক নারী আশাহীন অন্তরে আশার বীজ বপণ করে চলছেন যেখানে হাজার হাজার মানুষ মাটির নিচে বিমানহামলায় মৃত্যু বা উচ্ছেদের অপেক্ষায় অবরুদ্ধ রয়েছে!

সূত্র: আলজাজিরা

https://www.facebook.com/LiberatedT/videos/228659787679225/?t=77


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ