আতাউর রহমান খসরু
প্রধান প্রতিবেদক
সম্মিলিত কওমি শিক্ষা বোর্ড আল-হাইআতুল উলইয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশর-এর সদস্য অন্য ৫ বোর্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের মতভিন্নতার বিষয়টি আবারও সামনে এলো।
৫ বোর্ডের অন্যতম জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এক বক্তব্যে এ বিরোধ সবার সামনে এসেছে।
গত রোববার তিনি নিজ বোর্ডের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বেফাকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হাইআতুল উলয়াকে বেফাক ৫ বোর্ডকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে।’
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে যোগাযোগ করলে বোর্ডের মহাসচিব মুফতী মোহাম্মদ আলী আওয়ার ইসলামকে বলেন, শুরু থেকেই বেফাক অন্য বোর্ডগুলোকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। এটাই তো সত্য।
তিনি বলেন, ৫ বোর্ড ছাড়াই তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। অথচ বোর্ড হিসেবে আমাদের অংশদারিত্ব সমান হওয়া উচিৎ। প্রথম থেকেই আমরা তার নিয়মিতান্ত্রিক সব প্রতিবাদই জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ‘হাইআতুল উলয়ার গঠন প্রণালী এমনভাবে প্রস্তুত করেছে যাতে সমস্ত কর্তৃত্ব বেফাকের হাতে থাকে। হাইয়ার চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান সব সময় তাদের থেকে হবে, এমনিতে সদস্য তাদের বেশি আবার কো-অপ্ট করে নেয়া হবে তাদের থেকে, অন্য বোর্ড ছাড়াই কোরামপূর্ণ হয়ে যাবে। এসবই তো কোণঠাসা করার শামিল।
সিলেট আজাদ দ্বীনী এদারায়ে তালিম বোর্ডের প্রতিনিধি মাওলানা এনামুল হাসানও মনে করেন, অন্যবোর্ডগুলোর ব্যাপারে বেফাক যথেষ্ট আন্তরিক নয়। তাদের আচরণে হতাশ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
মাওলানা এনামের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আপনারা এক সময় প্রতিবাদ করেছিলেন। আবার হাটহাজারী মাদরাসার বৈঠকে বেফাকের প্রস্তাব মেনেছিলেন। এখন আবার প্রতিবাদ করছেন কেনো?
উত্তরে তিনি বলেন, হাটহাজারীতে আমরা যথা নিয়মে আমাদের দাবি উত্থাপন করেছিলাম। হাটহাজারী হজরত আমাদের মূল দাবি ‘বিশ্ববিদ্যালয় না করার দাবি মেনে নিয়েছিলেন। তাই তার সম্মানে প্রতিবাদ করি নি। কিন্তু আমাদের দাবি থেকে আমরা কখনো সরি নি।
প্রতিবাদ না করার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তখনও চাই নি এবং এখনও চাই না যে কোনোভাবে স্বীকৃতির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হোক। আমরা চাই স্বীকৃতি যথা নিয়মে হয়ে যাক এবং বেফাক আমাদের দাবি মেনে নিক।
বেফাক যদি না মানে তবে কি করবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মাওলান এনামুল হাসান বলেন, আইন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ করে যাবো এবং আমাদের অভিযোগ ও আপত্তির কথা জানাবো।
দেখুন ও সাবস্ক্রাইব করুন আওয়ার ইসলাম টিভি
তবে ৫ বোর্ডের অভিযোগ আমলে আনতে রাজি নন বেফাকের সহ-সভাপতি মুফতী মোহাম্মদ ওয়াক্কাস। তিনি মনে করেন বেফাকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ যথাযথ নয়।
তিনি বলেন, বেফাকের প্রতিষ্ঠাকাল, অবদান ও অবস্থান বিবেচনায় আনলে বেফাক তার প্রাপ্য থেকে সামান্য বেশিও দাবি করে নি। বেফাকের শিক্ষার্থী ও অবকাঠামো বিচার করলে বেফাকেরই একক নেতৃত্বে থাকা উচিৎ।
তিনি উল্টো ৫ বোর্ডের সদস্যদের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, আমি জানি না তাদের উদ্দেশ্য কী? যখনই স্বীকৃতির অগ্রগতির সংবাদ আসে, তখনি তারা কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে তারা আপত্তি জানান।
আমরা সব জানি। কে কোন কাজ কেন করছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলবো না।
গত ৩ মার্চ আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের ওই বক্তব্য প্রচার হওয়ার পর জনমনে নতুন করে যে আলোচনা উঠেছে এ নিয়ে কওমি মাদরাসার ছাত্রদের দাবি- স্বীকৃতির আইন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই উর্ধ্বতনদের বিরোধ মিটে যাক। না হলে পরবর্তীতে সমস্যায় পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের। যা মোটেও কাম্য নয়।
হাইআতুল উলয়া নিয়ে ফরীদ উদ্দীন মাসউদের দেয়া বক্তব্য