আওয়ার ইসলাম : আমাদের সমাজে হিজড়া শব্দটা অনেকের কাছে কেমন জানি একটা ঘৃণিত শব্দ। পথেঘাটে চলতে হিজড়া কর্তৃক আমরা অনেক সময় বিব্রতকর সমস্যার সম্মুখীন হই। যার কারণে হিজড়া শব্দটা আমাদের কাছে আতংক ও ঘৃণার। তবে ঘৃণিত হওয়ার পেছনে কারণও আছে।
একজন হিজড়া গুরুমা’র পরিসংখ্যান শুনলে আপনি আঁতকে উঠবেন। গুরুমা বলেন, আমি পঁচিশ বছর ধরে হিজড়াদের সঙ্গে বসবাস করি কিন্ত কয়েকজন ছাড়া কোনোদিন আসল হিজড়া দেখিনি।
বেশির ভাগ হিজড়া বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে ঢাকা শহরে অভিজাত জীবনযাপন করছে। ছেলে আছে মেয়ে আছে কিন্ত দিনের বেলায় বেশভুষা পাল্টে পথে নেমে পড়ে। মানুষকে জ্বালাতন করে, হয়রানি করে।
হিজড়া উপন্যাসটা লেখার ক্ষেত্রে লেখককে তাড়িত করেছে একজন দুঃখী হিজড়ার করুণ ঘটনা। ঢাকার আফতাবনগরে পামেলা নামের একজন দুঃখী হিজড়ার সঙ্গে কথা হয়েছিল লেখকের।
অবাক করার বিষয় হলো, পামেলা নামের হিজড়াটা ধনী পরিবার থেকে এসেছে। জন্মগতভাবে হরমোনে সমস্যা। তার ভবিষ্যৎ চিন্তা নিয়ে আপন মায়ের দিনরাত চিন্তা করার কারণে ব্রেন ক্যান্সারে মৃত্যু।
বাবার দ্বিতীয় বিয়ে কানাডার সিটিজেন একজন ডিভোর্সি নারীর সঙ্গে। বড়লোক বাবা আর সৎমায়ের অনিচ্ছা আর নিষ্ঠুরতার কারণে সভ্যজগৎ থেকে তার ছিটকে যাওয়া তারপর হিজড়ার দলে ভিড়ে যাওয়ার কারণ নিয়ে লেখক লিখেছেন হিজড়া।
দুই শ্রেণির হিজড়া অর্থাৎ আসল হিজড়া এবং নকল হিজড়াকে লেখক আবুদ্দারদা আবদুল্লাহ তার উপন্যাসে দক্ষ হাতে তুলে নিয়ে এসেছেন। নকল হিজড়ার লিডার ছগির মিয়া। গুলিস্তানে নিজের টাকার হালাল ব্যবসায় লাভ নেই দেখে হিজড়া সেজে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, বাচ্চা অপহরণ ইত্যাদি কাজে জড়িয়ে পড়ে।
সরকারের পক্ষ থেকে সে রকম কোনো কড়া আইন না থাকায় ছগির মিয়ার মতো হিজড়ারা লাই পেয়ে যায়। কিছুদিন পরে তার কাজে সহযোগী হিসেবে পেয়ে যায় নূরজাহান নামের স্ত্রীকে। শুরু হয়ে যায় হিজড়া সেজে রমরমা ব্যবসা।
বাচ্চা অপহরণ কাজে সক্রিয় হয়ে উঠে ছগির মিয়া আর তার স্ত্রী। এলাকার বড় ভাই আর থানার ওসি সব তাদের হাতের মুঠোয়। সুতরাং দেখেও দেখার যেন কেউ নেই।
লেখক আবুদ্দারদা আবদুল্লাহ সেসব কথাগুলো সহজ স্বাভাবিক ভাষায় এমনভাবে লিখেছেন, যা পাঠককে মনোমুগ্ধের মতো শুধু কাছে টানে। তার লেখার রম্যরসে পাঠক যেমন হাসতে বাধ্য তেমনি আবার দুঃখে কাঁদতেও বাধ্য। আর একজন গুণী লেখকের সার্থকতা তো এখানেই।
যে জায়গাটা লেখক আবুদ্দারদা আবদুল্লাহ সহজভাবেই পার করে গেছেন।
হিজড়াদের নিয়ে উপন্যাস, গল্প খুব কমই লেখা হয়েছে। সে হিসেবে মাদরাসা শিক্ষার্থী আবুদ্দারদা আবদুল্লাহ ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
বইটা বাজারে এনেছে ঐতিহ্য। পাঠকদের বেশ সাড়া জাগিয়েছে বইটি। ঐতিহ্যের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, কয়েকজন হিজড়াও বইটি সংগ্রহ করেছে।
এই প্রথম ছড়ায় ছড়ায় প্রিয়নবীর পুরো জীবনী