আওয়ার ইসলাম: রাজধানীতে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম বর্বরতা’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
গতকাল বুধবার বেলা ১২টায় রাজধানীর পল্টনে পুষ্পদাম পার্টি সেন্টারে বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
এতে দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক, চিন্তক আলেম, লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক মাওলানা উবায়দুর রহমান নদভীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বইটির তত্বাবধায়ক লন্ডন প্রবাসী আলেম, লন্ডন ইক্বরা টেলিভিশনের ভাষ্যকার, জামিয়াতুল খাইর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাওলানা মুফতি আবদুল মুনতাকিম।
রোহিঙ্গা বিষয়ক তথ্য সমৃদ্ধ গবেষণা ও পর্যালোচনা মূলক এ বইটি মুফতি আবদুল মুনতাকিম প্রতিষ্ঠিত সিলেটের উচ্চতর গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘জামিয়াতুল খাইর আল ইসলামিয়া, সিলেট’ কর্তৃক প্রকাশিত হয়।
বইটি সম্পাদনা করেছেন কবি লেখক ও গবেষক মাওলানা মূসা আল হাফিজ। এতে দেশে বিদেশের বিভিন্ন লেখক, কলামিস্টদের লেখা ও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনের সংকলন করা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুফতি আবদুল মুনতাকিম বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা ও বর্বরতা বর্ণনা করার ভাষা আমার নেই। যে ভয়াবহ অমানবিক ও পাশবিক অত্যাচার চলছে পৃথিবীর ইতিহাসে ইতোপূর্বে তা ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই।
এর জন্য মুসলমানদের অনৈক্য ও মতভেদকে দায়ি করে তিনি বলেন, তাতাড়ীরা যখন বাগদাদে মুসলমানদের উপর আক্রমণ করে তার পূর্বে মুসলমানরা কাক হালাল নাকি হারাম প্রাণি এ নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিলো।
তিনি এর থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরোমকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ছোটখাটো মতভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে নয়তো আমাদের পরস্থিতি যে এমন হবে না তা বলা যায় না।
আবদুল মুনতাকিম বলেন, গত ২৫ আগস্ট মুজলুম রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে এদেশে আশ্রয় নেয়ার পর থেকে এবং এরও পূর্ব থেকে ওলামায়ে কেরাম তাদের পাশে দাড়িয়ে সাহায্য সহযোগীতা করে আসছেন। জামিয়াতুল খাইরও রোহিঙ্গাদের পাশে আছে শুরু থেকেই।
মুফতি আব্দুল মুনতাকিম জানান জামিয়াতুল খাইরের ব্যাবস্থাপনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শরণার্থীদের জন্য দীনি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রয়োজন পূরণে মসজিদ, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়াও ফ্রি চিকিৎসা ও নগদ অর্থ প্রদানসহ নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা উবায়দুর রহমান নদভী বলেন, চিন্তক গবেষকরা সামাজিক পতনের আগাম বার্তা দিয়ে থাকেন এবং এর থেকে উত্তরণের পথও জানিয়ে দেন।
১৯৬১ সালে এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রহ. রোহিঙ্গাদের আজকের এই পরিস্থিতির পূর্ব সতর্কতা দিয়ে গেছেন। উত্তরণের বার্তাও দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন শত্রু এবং মিত্র চিনে চলতে হবে।
কিন্তু দূর্ভাগ্য আজকে আমাদের রোহিঙ্গাদের প্রতি এমন বর্বরতা প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে।
মাওলানা নদভী বলেন, কোনো বিষয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য আর বাস্তবতা এক নয়। যারা রাজনীতিতে আগ্রহী, তরুণ উদ্যমি রাজনীতিবিদ, এমপি মন্ত্রী হওয়ার জন্য বিভোর আপনারা বক্তব্য দেয়ার সময় লাগাম টেনে বক্তব্য দিবেন।
মাওলানা নদভী হিংসাত্মক ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান রেখে চিন্তক, মুরুব্বী ব্যক্তিদের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান করেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জাতির প্রতি নির্মম বর্বরতার কথা আমাদের জানতে হবে, আমাদের প্রজন্মকে জানাতে হবে।
রোহিঙ্গাদের পক্ষে জনমত গঠনে এই নির্মমতার কথা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে এতো বেশি তথ্য সমৃদ্ধ ও গবেষণামূলক বই সম্ভবত এটাই প্রথম। এরকম আরো বেশি বেশি বই হওয়া চাই । যা আগামী প্রজন্মের জন্য গবেষণার পাথেয় হবে।
রেডিও একাত্তরের আরজে মামুন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা তাফাজ্জুল হক অাজিজ, গল্পকার রুহুল অামিন সাদী, পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতী ইমরানুল বারী সিরাজি, উস্তাযুল হুফফাজ মাওলানা কারী সালামাতুল্লাহ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর প্রধান পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌস, পাক্ষিক সবার খবর পত্রিকার সম্পাদক আব্দুল জব্বার, ইনসাফ২৪ সম্পাদক সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার, আওয়ার ইসলাম২৪ এর সহ-সম্পাদক শাহনূর শাহীন, তরুন লেখক অাফজাল হুসাইন প্রমুখ।
এসএস/