ডেস্ক: মহাখালী রাজধানীর গুরুত্ব-পূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা। তবে বিভিন্ন সময় সংবাদের শিরোনাম হয়েছে এই এলাকার সাততলা বস্তি। ঠিকাদারী, মাদক ব্যবসা ও এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একের পর এক হত্যাকান্ড সংঘঠিত হয়েছে এখানে।
নব্বই দশকে এই বস্তি ছিল নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অন্যতম ‘আখড়া’। সেই সময় এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর। ২০০৪ সালে এই এলাকায় ক্রসফায়ারের শিকার হয় চার শীর্ষ সন্ত্রাসী। কিন্তু এরপরও মহাখালীর অবস্থা এখনও আগের মতোই রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
তারা জানান, কালা জাহাঙ্গীর নেই কিন্তু তার উত্তরসূরী ‘ভাগ্নে বাহিনী’ এখন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা বলেন, নাম বলার প্রয়োজন হয় না। ভাগ্নে বলতেই বোঝা যায়, কে ভাগ্নে বাহিনী প্রধান।
তারা আরও জানান, শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের অস্ত্র ভান্ডারও এরা নিয়ন্ত্রণ করছে। সর্বশেষ গত রবিবার এ গ্রুপের ইন্ধনেই মহাখালীর দক্ষিণপাড়ায় ঠিকাদার নাসির কাজী নিহত হয়েছেন। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ গতকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
এলাকাবাসী জানান, ২০০৬ থেকে ২০০৮ এর মধ্যে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় কালা জাহাঙ্গীরের সহযোগী খ্রীস্টান বাবু, হুজুর শামীম, শাহিন ও চঞ্চল। আত্মগোপন করে কালা জাহাঙ্গীরের অন্য সহযোগীরা। ফলে এলাকায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে।
কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ভোল পাল্টিয়ে এলাকায় ফিরতে শুরু করে। ফলে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা।
ওই বছর ১৯ জুলাই বক্ষব্যাধী হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহের ঠিকাদারী ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে মহাখালী আমতলী এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ঢাকা উত্তর যুবলীগের তত্কালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন পাশা ওরফে লিটন।
এলাকাবাসী জানান, যে কারণে যুবলীগ নেতা লিটন খুন হয়েছিলেন, ঠিক একই কারণে খুন হয়েছেন নাসির কাজী। কারণ হত্যাকান্ডের আগে এলাকার সিসি টিভি ক্যামেরা লাইন কেটে ফেলা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব না।
তারা জানান, প্রায় দুই বছর ধরে বনানীর মহাখালী দক্ষিণপাড়া এলাকা ২৬টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। ভাগ্নে বাহিনীর হাতে রয়েছে নাইন এম এম পিস্তলসহ বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র। এ
রা কিছু দিন আগে মহাখালী হাজারীবাড়িতে শাহিন নামে এক যুবককে গুলি করে। প্রায় একই সময় দক্ষিণ মহাখালী এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দিদারকে গুলি করে।
এ ঘটনা সিসিটিভিতে ধরা পড়ে। ফলে নাসির হত্যার আগে তারা ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার তার কেটে রাখে। যাতে কোন প্রমাণ না থাকে।
আর এসব ঘটনা তদন্ত করলেই নাসির হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। তাদের দাবি, বর্তমানে ভাগ্নে বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে জনস্বাস্থ্য ও পশু হাসপাতাল, সিটি কর্পোরেশন অফিসের ঠিকাদারী, ডিশ-ইন্টারনেট ও মাদক ব্যবসা (ইয়াব)।
এদের বিস্তৃতি সাততলা বস্তি, খ্রীষ্টানপাড়া, ভূইয়া পাড়া, মহাখালি দক্ষিণ পাড়া ও রসুলবাগ এলাকায়।
সিটিটিভি ক্যামেরা সম্পর্কে নাসির হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, এসব ক্যামেররা এলাকাবাসীর উদ্যোগে বসানো হয়েছিল। ফলে এর নিয়ন্ত্রণও এলাকার লোকজনের হাতে।
ঘটনার সময় কেন ওই এলাকার ক্যামেরা অকেজো ছিল তা খতিয়ে করে দেখা হচ্ছে। নাসির হত্যা মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, গতকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। সুত্র: ইত্তেফাক।
এসএস/