রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

মসজিদের রাজধানীতে একটি থানা মসজিদশূন্য হয়ে যাচ্ছে, আর আমাদের ঘুমই ভাঙছে না!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ: আমাদের জন্য এতো সহজে সাহায্য আসবে না। সাহায্য তো দুর্বলের জন্য। আমরা কি দুর্বল? বাংলাদেশ ৯২% মুসলমানের দেশ। পীর-আওলিয়ার পূণ্যভূমি এ ভূখন্ড। ওলামাপ্রিয় এ দেশে মাদরাসার কমতি নেই। মসজিদের রাজধানী বলা হয়ে থাকে আমার সোনার রাজধানী ঢাকাকে। সে দেশকে কি দুর্বল বলার সুযোগ আছে?

পুরো বিশ্বে মুসলিমদের দুর্বল বলার সুযোগ আছে? ইসলামের শুরুর দিকে মুসলিমদের সংখ্যা ছিলো কম, বিজয়ের সংখ্যা ছিলো বেশী। কিন্তু বর্তমানে মুসলমানের সংখ্যা বেশী বিজয়ের সংখ্যা কম। কেনো? সে কারণ কি একবারও খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি?

কোন ভুলের কারণে একটি সফল জাতি এতো পিছিয়ে? নিজেদের ব্যর্থতা না দেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া কতোটুকু যুক্তিযুক্ত? আরাকান ধ্বংস হলো। ফিলিস্তিন ধ্বংস হলো। ধ্বংস হলো ইরাকও। কৈ? আমরা তো কিছুই করতে পারলাম না। অথচ হজ্বের মৌসুমে কোটি মুসলিম জড়ো হয় বাইতুল্লাহ চত্বরে। মাজলূম দেশগুলির রক্ষায় সেসব মুসলিমদের কি কোনো দায়িত্ব নেই?

আমরা মুসলিম দেশগুলি জ্বলতে দেখেছি। জ্বলতে দেখেছি নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের। কিন্তু দেখেনি অন্যান্য মুসলিম দেশকে তার প্রতিবাদ করতে। এমনকি আরব দেশগুলিকেও নয়। আমরা পাশ্চাত্যের তাবেদারী নিয়ে ব্যস্ত। আমরা চোখ বন্ধ করে আছি। স্মরণ রাখা উচিত, যতোই কৌশল করি না কেনো, দুশমন থেকে আমরাও বাঁচতে পারবো না। অতএব সময় থাকতে বিশ্বব্যাপী মুসলিম ঐক্য না হলে এভাবেই আমাদের রক্ত নিয়ে খেলবে ওরা।

একটি গল্প শোনাই! (বদলে যাও বদলে দাও থেকে)
বাঘটির প্রচণ্ড ক্ষিধে পেয়েছে। চারদিকে খাবার খুঁজতে শুরু করলো। কিন্তু কোনো খাবার খুঁজে পেলো না। প্রচন্ড ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। ঠিক এমন সময় একটি শেয়াল বাঘটির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো। বাঘ শেয়ালটিকে খাবার মনস্থির করার মুহুর্তে শেয়াল বাঘকে বললো, তুমি আমাকে খেতে সাহস করো না। কেননা, বনের রাজা আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন এবং তিনি আমাকে শতো পশুর রাজার পদ দিয়েছেন। তুমি আমাকে খেয়ে ফেলার সাহস করলে রাজার আদেশ লঙ্ঘন হবে।

বাঘটি শেয়ালের কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি। আবার একেবারে ফেলেও দিতে পারছে না। শেয়াল বাঘের দ্বিধা লক্ষ্য করে বাঘকে বললো, তুমি আমার কথা বিশ্বাস করছো না? তুমি মনে করছো আমি মিথ্যা বলছি! আচ্ছা চলো। আমি তোমার সামনে যাচ্ছি আর তুমি আমার পেছনে থাকো। দেখবে বনের পশুরা আমাকে দেখে কীভাবে পালিয়ে যায়!

বাঘ সরলমনে শেয়ালের কথা অনুসারে তার পেছনে হাঁটতে শুরু করলো। বাঘটি লক্ষ্য করলো, বনের পশুরা সত্যিই শেয়ালকে দেখে ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে! বাঘ তো জানে না, পশুরা শেয়াল দেখে নয়, বরং শেয়ালের পেছনে থাকা বাঘ দেখেই পালাচ্ছে।

আজ মুসলিমজাতির ঠিক একই অবস্থা। আমরা পাশ্চাত্যের উন্নতিতে তাদের তাবেদারী করার পথ বেছে নিয়েছি। বিজ্ঞানের আবিস্কারে মনে করছি ওরাই সর্বেসর্বা। অথচ, কোরআনের রিসার্চ ব্যতীত বিজ্ঞান অচল। অচল বৈজ্ঞানিক অবকাঠামোও। বিশ্বের নেতৃত্বে যেখানে মুসলিম শাসকদের অধিষ্ঠিত হবার কথা, সেখানে আমরা গোলাম হয়ে বসে আছি। কেননা, পাশ্চাত্যের কুটকৌশল আর মিথ্যাচারকেই সত্যি বলে ধরে নিয়েছি।

এবার আসি হাতিরঝিল মসজিদ উচ্ছেদ নিয়ে
বাংলাদেশের মুসলমান কি দুর্বল? এতো এতো ইসলামী দল ও কাফেলা থাকতে আল্লাহ সাহায্য পাঠাবেন কেনো? নাকি কুফরী গণতেন্ত্রর ধারক-বাহকদের তাবেদারীতে ব্যস্ত আমরা? মসজিদের রাজধানীতে একটি থানা মসজিদশূন্য হয়ে যাচ্ছে, আর আমাদের ঘুমই ভাঙছে না!

এভাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যদি ঘরে বসে হাত উঠাই! সে হাত কোনো কাজে লাগবে বলে মনে হয় না। বান্দার চেষ্টা যেখানে শেষ, আল্লাহ’র সাহায্য সেখান থেকে শুরু। বিষয়টি এমন নয়, বান্দার ঘুম যেখান থেকে শেষ, আল্লাহ’র সাহায্য সেখান থেকে শুরু।

বরং বলতে পারি, ইসলামের বিপর্যয় দেখেও যারা চেষ্টা ব্যতীত শুধু দোআর মাধ্যমে দীন কায়েম করতে চায়, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে বিজয়ের, তাদের ঘুম আর দোআ যেখানে শেষ, আল্লাহ’র গজব সেখান থেকে শুরু। আমরা ভুলে গেছি স্বয়ং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রক্ত ঝড়ানোর কথা। আমরা আছি পরস্পর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই নিয়ে। বাতিলের মোকাবেলায় আজও এক হতে পারলাম না।

মসজিদ আল্লাহ’র ঘর। রক্ষা করার দায়িত্বও আল্লাহ’র। কিন্তু তা কখন? যখন আমরা অক্ষম হয়ে পড়বো। আমাদের চেষ্টা শেষ হবে। আমরা তো চেষ্টা ছাড়াই ওদের হাতে মার খাচ্ছি। মারই যেহেতু খাচ্ছি সেহেতু চেষ্টাটা করলে ক্ষতি কী? সিরিয়ার মানুষ দৈনিক জীবন দিচ্ছে, আর বিশ্বমুসলিম মোকাবেলার পরিকল্পনা না করে যার যার জায়গায় বসে দোআ করছে, তাতে কি অত্যাচার বন্ধ হবে? আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

ঐতিহাসিকদের মতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের ৫০-৫৫ দিন পূর্বে ২২ মুহাররম ইয়ামানের বাদশা আবরাহা পবিত্র বাইতুল্লাহ শরিফ গুড়িয়ে দিতে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা দেয়। তৎকালীন বাইতুল্লাহ’র মুতাওয়াল্লী ও কুরাইশদের চেয়ারম্যান ছিলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাদা আব্দুল মুত্তালিব। কুরাইশরা আবরাহার ঘটনা সম্পর্কে আব্দুল মুত্তালিবকে জানায় এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি নিবে কি না সে ব্যাপারে মতামত চায়।

আব্দুল মুত্তালিব বললেন, তোমরা যার যার আবাস্থলে গিয়ে নিরাপদ থাকো। বাইতুল্লাহ আল্লাহ’র ঘর। আল্লাহ’র ঘর আল্লাহই রক্ষা করবেন। আবরাহা বাইতুল্লাহ অভিমুখে যেতেই আল্লাহ তা’আলা আবাবীল নামক এক ঝাঁক পাখি পাঠালেন। যে পাখিগুলির ঠোঁটে ও দুই পায়ে কঙ্কর ছিলো। আবরাহা বাহিনী ধ্বংস হলো।

কিন্তু হাতিরঝিলের জন্য তো আবাবীল পাঠালেন না আল্লাহ। মসজিদও উৎখাত হয়ে গেলো। কারণ আমাদের মোকাবেলা করার শক্তি থাকা সত্বেও আমরা তা করিনি। এভাবেই একদিন আমরাও উৎখাত হবো। আমার সামনে আমর মা, বোন, স্ত্রী শ্লীলতাহানীর শিকার হবে কিন্তু আমাদের কিছুই বলার থাকবে না।তাই সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হবার সময় এখনই।

এইচজে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ