আওয়ার ইসলাম: কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচিতে উস্কানি দিয়ে সরকার নিজেরাই দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পুলিশের ছোঁড়া টিয়ারশেলে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে ‘হিটলারের গ্যাস চেম্বারের মতো’ এক বিভৎস পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
আজ শনিবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আপনারা সব দেখেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিনা উস্কানিতে এই কর্মসূচিতে অতর্কিতে হামলা করে। এই অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা সারাক্ষণ চেষ্টা করছে উস্কানি দিয়ে এবং এই ধরনের নির্যাতন-অত্যাচার চালিয়ে পুরো পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে ফেলছে। পুরো পরিস্থিতিকে তারা নিজেরাই এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাইছেন যে, সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।’
‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বিএনপি সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস করে এবং বিশ্বাস করছে। সেই ভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে আসছে।’
সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচি পণ্ডের পর বেলা ১২টায় কার্যালয়ের তিন তলায় সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের এই কর্মসূচি ছিলো সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। রাস্তা ব্লক না করে কালো পতাকা প্রদর্শনের ব্যবস্থা আমরা করেছিলাম। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই কর্মসূচিতে অতর্কিতে হামলা করে। পুলিশ নেতা-কর্মীদের বেপরোয়াভাবে গ্রেপ্তার করে, টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলে। তারা লাঠিচার্জও করে।’
‘আমি পুলিশ সদস্যদের এহেন আচরণের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা এর কোনো জবাব না দিয়ে রঙিন পানি ছুঁড়তে থাকে এবং বেধড়ক লাঠিচার্জ ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখে। রঙিন পানিতে আমাকেসহ দলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ ও উপস্থিত অসংখ্য নেতাকর্মীকে সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দিয়ে লাঠিচার্জ করতে থাকে।
এর কিছুক্ষণ পর আমাদের কার্যালয়ে টিয়ারগ্যাস ছুঁড়লে ভেতরে দম বন্ধ করা হিটলারের গ্যাস চেম্বারের মতো এক বীভৎস পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিনা উস্কানিতে বিএনপির কর্মসূচিতে আক্রমণ করে তারা আবার প্রমাণ করলো, দেশ এখন দুর্বিনীত দুঃশাসনের করাল গ্রাসে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রের শেষ নিশানাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যই সরকার এই অগণতান্ত্রিক ও দমনমূলক পন্থা অবলম্বন করেছে। একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনে বিরোধী দল ও তাদের সমালোচনাকে বিপদজনক মনে করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে এই গণবিরোধী শক্তি।’
‘সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, এখন প্রজাতন্ত্রের মালিক আওয়ামী লীগ ও তাদের সাজানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই মহা তাণ্ডবের আমরা নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই নির্যাতন বন্ধ করুন। নইলে এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘মহিলাদের কী নির্মমভাবে পুলিশ আক্রমণ চালিয়েছে। তাদেরকে পুরুষ পুলিশরা ধরে গ্রেপ্তার করেছে। এটা আগে কখনো দেখিনি। অফিসের ভেতর ঢুকে গলায় পাড়া দিয়ে থেকে টেনে হিঁচড়ে গ্রেপ্তার করেছে। আমাদের দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের ওপর পুলিশ এমনভাবে আক্রমণ করেছে সে গুরুতর আহত হয়।
মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে নিচে ফেলে দিয়ে পিটিয়ে তাকে গাড়িতে তোলা হয়েছে। সে এক সময়ে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এই যদি এই অবস্থা হয় এদেশে, তারা যখন গণতন্ত্রের কথা বলে সেই গণতন্ত্র মুনাফেকি ছাড়া আর কিছু নয়।’
কালো পতাকা প্রদর্শনের এই কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ অসংখ্য মহিলা ও পুরুষ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব। একই সঙ্গে এই ঘটনা আটক নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিও জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন যে, প্রতিটি বক্তব্যে তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা বিভিন্নভাবে কথা বলছেন। তাদের প্রতিটি বক্তব্য উস্কানিমূলক। বিএনপি সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস করে এবং বিশ্বাস করে চলেছি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই আন্দোলন গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন, এই আন্দোলন দেশনেত্রীকে মুক্তি করে আনার আন্দোলন। একই সঙ্গে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে করতে হবে।’
পুলিশ বলেছে আপনারা এই কর্মসূচির অনুমতি নেননি- এ প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এই কর্মসূচিতে অনুমতি লাগবে কেনো? সব কর্মসূচিতে অনুমতি লাগবে কেনো? আমরা তো রাস্তা ব্লক করেনি, মিছিল করেনি, ১৪৪ ধারা ভাঙিনি।
সভা-সমিতি করা যাবেনা, ঠিক আছে। কিন্তু ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কালো পতাকা দেখানো যাবে না। এটা কীভাবে হয়? এটা একটি মৌলিক অধিকার। তাহলে কি সংবাদ সম্মেলন করতে অনুমতি লাগবে, আমার বাড়িতে কয়েকজন নেতার সাথে আলাপ করতে অনুমতি লাগবে?’
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, রুহুল আলম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, গোলাম আকবর খন্দকার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, হারুনুর রশীদ, তাইফুল ইসলাম টিপুসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কার্যালয় থেকে বের হলে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর বেলা দেড়টা দিকের দুইটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত মহিলা নেতা-কর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয়।
এইচজে