আতাউর রহমান খসরু
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নিয়ে মানুষের অভিযোগ অনেক। ফেসবুক মানুষকে আত্মমুখী, একঘেঁয়ে ও অসামাজিক করছে। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে যোগ হয় আরেকটি গুরুতর অভিযোগ। ফেসবুক বাংলা ভাষার সর্বনাশ করছে।
ইংরেজি বর্ণে বাংলা লেখা, শব্দের বিধিত সংক্ষেপণ, বিভাষী শব্দের সঙ্গে বাংলা শব্দের মিশ্রণ, ভুল বানান ও অশুদ্ধ বাক্যের প্রচার এমন অনেক অভিযোগ আছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে।
একুশে বইমেলার যে কোনো বই দেখতে ও কিনতে ক্লিক করুন
তবে সমালোচকদের সমালোচনা যে কিছুটা হলেও একপেশে তা সচেতন ব্যক্তি মাত্রই বুঝতে পারবেন। কারণ, ফেসবুকে ভাষার অপব্যবহার যেমন হয়, তেমন হয় ভাষার শুদ্ধ চর্চাও।
ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ভাষার জন্য কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে, সাহিত্য পত্রিকা, বানান চর্চা ও ব্যাকরণিক কার্যক্রমের অসংখ্য পেইজ ও গ্রুপ।
যারা তরুণ প্রজন্মকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশুদ্ধ বাংলা চর্চার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। এমন কয়েকটি গ্রুপ/পেইজের পরিচয় ও কার্যক্রম তুলে ধরছি আজ।
বাংলা বানান নিয়ে কাজ করছে এই পাবলিক গ্রুপটি। ‘বানান ভুল ভাষার জন্য চরম অপমান! আসুন, ভাষাকে ভালোবেসে শুদ্ধ বানান লিখি!’ স্লোগানে কাজ করছে তারা।
ফেসবুক গ্রুপটির ওয়াল দেখে বোঝা যায় শুধু নামে নয়, আন্দোলনের আমেজও রয়েছে তাদের কাজে। রাজনৈতিক ব্যানার থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বানান অসংগতি তুলে ধরেন তারা।
সাথে সাথে বানান বিষয়ক প্রশ্ন ও তার উত্তর পাওয়া যায় এ গ্রুপটিতে।
কুষ্টিয়া থেকে পরিচালিত ‘বানান আন্দোলন’ পাবলিক গ্রুপের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৫৭৪। পেইজের ৩জন এডমিন ও ১জন মডারেটর রয়েছেন। তারা হলেন, Suraïya, Rejbul, Oahad ও Neel।
‘বানান আন্দোলন’ ইতিমধ্যেই একবছর পূর্ণ করেছে।
বাংলা ভাষা ও বানান নিয়ে কাজ করছে পাবলিক গ্রুপ ‘ভাবা’। পেইজের পরিচিতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলা ভাষা ও বানান বিষয়ে জরুরি, প্রয়োজনীয়, একাডেমিক ও নিতান্ত সাধারণ আলোচনার জন্য এই গ্রুপ।
এ বিষয়ে লিখতে, পড়তে ও মতামত জানাতে চান এমন যে-কেউ এই গ্রুপের সদস্য হতে পারবেন।’
উপরের বিবরণ থেকেই বোঝা যায় গ্রুপটি মূলত বানান এবং ভাষার নানান দিক নিয়ে কাজ করছে। তবে গ্রুপের পোস্টগুলো যাচাই ভিজিটরদের বুঝতে অসুবিধা হবে না যে, এখানে বানানের চেয়ে ভাষা নিয়েই বেশি আলোচনা হয়।
আবার বানান বিষয়ক আলোচনাটাও এখানে একটু বিস্তারিতভাবে করা হয়। সাথে সাথে তুলে ধরা হয় ভুল বানানের দৃষ্টান্ত।
Sompadona, শিশির ও Rakhal পরিচালিত এ গ্রুপের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৪৭৪ জন।
বাংলা শুদ্ধ বানান ও উচ্চারণ চর্চা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও আবৃত্তি শিল্পী জুয়েল আদীব ‘বাংলা শুদ্ধ বানান ও উচ্চারণ চর্চা’ পাবলিক গ্রুপটি পরিচালনা করেন। তার সঙ্গে মডারেটর হিসেবে কাজ করছেন Tahiya ও Soumitra।
গ্রুপ পরিচয়ে লেখা হয়েছে, ‘বাংলা বানান ও উচ্চারণ নিয়ে আমরা কথা বলবো। আপনারাও বলবেন এবং লিখবেন জানার ও জানানোর বিষয়।’
পরিচালক জুয়েল আদীব একজন আবৃত্তি শিল্পী হওয়ায় এ গ্রুপে উচ্চারণের উচ্চারণটাই বেশি হয়। তিনি তার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা উজার করে দেন সদস্যদের জন্য। উচ্চারণ বিষয়ক অধিকাংশ পোস্ট তার।
তবে বানান ও ভাষা বিষয়ক সাধারণ কিছু আলোচনাও ভিজিটরদের চোখে পড়বে।
জনপ্রিয় এ গ্রুপের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৫৪২৬জন।
‘শুদ্ধ বানান শিখব, শুদ্ধ ভাষা লিখব’ শ্লোগানে ‘বাংলা বানানচর্চা’ পাবলিক গ্রুপটি ২০১২ সাল থেকে কাজ করে আসছে। শুরুতে শুধু ‘বাংলা বানান’ নাম থাকলেও পরবর্তীতে তাতে চর্চা সংযুক্ত করা হয়।
অর্ধলক্ষ সদস্যের পেইজটি পরিচালনা করেন এমএ, Hafijur Rahmanও বাংলা। আর মডারেটর হিসেবে কাজ করেন Devadatta, মোঃ ও Munshi।
ভাষা, বানান ও উচ্চারণ বিষয়ক একটি সমৃদ্ধ গ্রুপ ‘বাংলা বানানচর্চা’। নামের প্রতি সুবিচার করে গ্রুপে বানান বিষয়ে আলোচনা বেশি হলেও ভাষার অন্যান্য উপাদান নিয়ে কথা হয় বেশ।
বর্তমানে গ্রুপের সদস্যা সংখ্যা ৫৭৪৯৪ জন।
ফেসবুক মানুষের মধ্যে যোগাযোগকে উন্নত করতেই তৈরি হয়েছিল। এখন সেখানে যুক্ত হয়েছে নানা মাধ্যম। আপনি চাইলে সেখানে কল্যাণকর কাজের নানা ক্ষেত্র রয়েছে। কিন্তু আপনি সেটাকে যদি সময় নষ্টের কাজে ব্যবহার করে অপ্রয়োজনীয় বস্তু ভাবেব তাহলে ভুলই হবে।
তাই ফেসবুকে অযথা সময় বিনিময় না করে কাজে লাগাতে পারেন যে কোনো ক্ষেত্রে। সেটা হতে পারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির একটা প্লাটফরম তৈরি করেও।
যাদের ভাষা ও বানানে দুর্বলতা রয়েছে তারা ফেসবুকের এ গ্রুপগুলোতে জয়েন করতে পারেন। প্রতিটি নামের মধ্যে লিংক দেয়া আছে ক্লিক করলেই আপনাকে গ্রুপে নিয়ে যাবে।
ভাষা চর্চা নিয়ে তিন আলেমের ৩ বই