গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ডসহ সব ধরনের নম্বর ও নেমপ্লেটে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে কোনও উদ্যোগ না থাকলেও সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
অন্যদিকে এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উল্লেখযোগ্য কোনও উদ্যোগ চোখে না পড়লেও সংস্থাটি বলছে, তারা উদ্যোগ নিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই তা বস্তবায়ন শুরু করা হবে।
২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জনস্বার্থে দায়ের করা একটি রিটের আদেশে গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বরপ্লেট, বিভিন্ন দপ্তরের নামফলকে পরবর্তী একমাসের মধ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন।
এছাড়া অনতিবিলম্বে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭ (১৯৮৭ সালের ২ নং আইন) বাস্তবায়নে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭ বাংলাদেশের সর্বত্র অনুসরণ করার জন্য কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। জনস্বার্থে দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এরপর প্রায় চার বছর অতিবাহিত হলেও সংস্থা দুটির কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে এ মাসের শুরু থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকার দোকানপাট, অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে বাংলা ছাড়া ভিন্ন ভাষার সাইনবোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযান করেছে ডিএনসিসি। অভিযানে সাইনবোর্ড ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী শুধু বিদেশি দূতাবাস, বিদেশি সংস্থা ও তাদের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র ছাড়া সব প্রতিষ্ঠানের নামফলক, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার ইত্যাদি বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক।
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে হাইকোর্টের আদেশটি ডিএনসিসি এলাকায় বাস্তবায়নের দায়িত্ব ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়। এরপর আমরা গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ডিএনসিসির এলাকার যেসব প্রতিষ্ঠানের নামফলক, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার বাংলায় লেখা হয়নি, তা অবিলম্বে স্ব-উদ্যোগে অপসারণ করতে সাত দিনের সময় দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি মাইকিং করা, ডিএনসিসির ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজেও বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করেছি। এরপরও পরিবর্তন না হওয়ায় আমরা নিয়মিত অভিযান শুরু করেছি। এতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়।’
এ ব্যাপারে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. বলেন, ‘এটা আমাদের নিয়মিত কাজ। যেহেতু হাইকোর্টের একটি আদেশ রয়েছে তা বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা প্রায় সময়ই অভিযান করে থাকি। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা মামলাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করবো।’
তবে ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলা ব্যবহার নিশ্চিত আমাদের কোনও অভিযান শুরু না হলেও কাজ চলমান রয়েছে। আমরা ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার সময় ডিএসসিসি এলাকার যে কোনও দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন অফিসের সাইনবোর্ড, ব্যানার, নামফলক, বিলবোর্ড বাংলায় লেখার বিষয়ে অবহিত করি। প্রত্যেকটি নামফলক, সাইনবোর্ড ইত্যাদিতে বাংলা ভাষা নিশ্চিত করতে ডিএনসিসির উচ্ছেদ অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত অব্যাহত থাকবে।’
উল্লেখ্য, সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। এ বিধান যথাযথভাবে কার্যকর করতে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন করা হয়। উল্লিখিত আইনের ৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এ আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস-আদালত, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জওয়াব এবং অন্যান্য আইনানুগত কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে।’ ওই ধারায় আরও বলা হয়েছে, ‘উল্লিখিত কোনও কর্মস্থলে যদি কোনও ব্যক্তি বাংলা ভাষা ব্যতীত অন্য কোনও ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন, তাহলে তা বেআইনি ও অকার্যকর বলে গণ্য হবে।’ সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন।
এসএস/