আওয়ার ইসলাম
মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো শেষ নেই। প্রত্যেক গ্রাহকের হাজার হাজার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। আর এই অভিযোগের শীর্ষে অবস্থান করছে গ্রামীণফোন! জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে গ্রাহকরা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ জমা দিয়ে থাকেন। অন্যান্য বিষয়ের মত সেখানে মোবাইল অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধেও হাজার হাজার অভিযোগ জমা দিয়েছেন গ্রাহকরা।
যদিও উচ্চ আদালতে রিট করার কারণে গত বছরের মে মাসের পর থেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে পারছে না।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের পহেলা জুন থেকে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ৭৫৮টি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন গ্রাহকরা।
এরমধ্যে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে প্রায় ৩০০টি। অন্য অপারেটরদের চেয়ে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
অভিযোগের তালিকায় গ্রামীণফোনের পরের অবস্থানে রয়েছে এয়ারটেল। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলালিংক। চুতর্থ অবস্থানে রয়েছে রবি। আর সর্বশেষ পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে টেলিটক।
এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে প্যাকেজ প্রতারণা, পর্যাস্ত সেবা না পাওয়া, কল ড্রপ, সময়-অসময়ে এসএমএস’র বিরক্তি, ইমারজেন্সি ব্যালেন্সের নামে অতিরিক্ত টাকা কাটার অভিযোগ, ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ শেষ হয়ে গেলে কোনো সংকেত বা এসএমএস ছাড়া ব্যালেন্স থেকে টাকা কাটার অভিযোগ ইত্যাদি।
জানা গেছে, একটি মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে রিট করার কারণে গত বছরের মে মাসের পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পারেনি। তবে ভোক্তারা এখনো লিখিত অভিযোগ জানাচ্ছেন। রিটের নিষ্পত্তি হলে এসব অভিযোগের সুরাহা হবে।
একটি অভিযোগের বিপরীতে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা আদায় করতে পারে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেই জরিমানার ২৫ ভাগ অর্থ দেওয়া হয় সেই অভিযোগকারীকে।
চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিপরীতে প্রায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যার ২৫ ভাগ অর্থ সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারী পেয়েছেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ভোক্তারা অনলাইনের মাধ্যমেও অভিযোগ জানাতে পারেন। অথবা কার্যলয়ে এসে লিখিত আকারে অভিযোগ জানাতে পারেন। অভিযোগের সাথে প্রতারিত হওয়ার বিভিন্ন নমুনা উপকরণ উপস্থাপন করতে হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ভোক্তারা প্রতারিত কিংবা হয়রানির শিকার হয়ে অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু একটি মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে রিট করায় গত বছরের ২৮ মের পর থেকে অধিদপ্তর এ সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পারেনি। আর রিটের কারণে এখন অপারেটরদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে আইনি জতিলতা দূর হলে গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে অপারেটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, যত দিন যাচ্ছে মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তত বাড়ছে। তাদের প্রতারণাও তত বাড়ছে। তাদের জবাবদিহিতার কোনো জায়গা নেই। তাদের অভিযোগগুলো দেখার কেউ নেই। যার ফলে দিন দিন তারা বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গ্রামীণফোনের অবস্থা তো আরো ভয়াবহ। কোম্পানিগুলো প্রতারণা করে দেশের সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। সরকারের উচিৎ এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।
বিটিআরসির কাছে ইন্টারনেট ও কল ড্রপের পরিমাণ নিরূপণের যন্ত্র নেই এমন অভিযোগ করে মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, দেশে ইন্টারনেটের গতি ৫ এমবিপিএস বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে মোবাইল ইন্টারনেটে তা আরও অনেক কম। ২ থেকে ৩ এমবিপিএস হতে পারে। বিটিআরসির কাছে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি মাপার যন্ত্র কিন্তু নেই। কল ড্রপ কত হয় তা মাপার যন্ত্রও নেই।
বিটিআরসি একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মহিউদ্দীন আহমেদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমরা অপারেটরগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে, কোনো ভাবেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বরদাস্ত করা হবে না। তাদেরকে অবশ্যই গ্রাহকদের সেবাটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অপারেটরগুলোর কল ড্রপ, প্রতারণার বিষয়ে ডাক টেলিযোযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, এই ধরনের অভিযোগের বিষয়ে বিটিআরসিকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। কল ড্রপের ব্যাপারে আমি বিটিআরসিকে নিজে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি।
তিনি বলেন, আমি বিটিআরসিকে বলেছি এ ধরনের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে। অতীতে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সেটা আমি জানি না। আমি কালও স্পষ্ট করে বলেছি কোনো অবস্থাতেই টেলিকম কোম্পানিগুলোর সেবার মান আমার কাছে ভালো মনে হয়নি।
মন্ত্রী বলেন, আমি এখানে দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র একমাস হলো। তবে আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, খুব দ্রুত আমাদের আইনের বিধান অনুযায়ী যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেটা নেয়া হবে।