আওয়ার ইসলাম
দলীয় সরকারের অধীনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ভোট বর্জন করে অধিকাংশ ইসলামী দল। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং আন্দোলন দুটিকে সামনে রেখেই এগোচ্ছে তারা। শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি দল ও সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন ভাবনা।
ক্ষমতার রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলোর তেমন গুরুত্ব না থাকলেও ভোটের মাঠে তাদের একটা প্রভাব আছে। সঙ্গত কারণে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়ে ইসলামী দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছে। বিএনপিও জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দলের পাশাপাশি ছোট কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে প্রথমে চার-দলীয় জোট, পরে ১৮-দলীয় জোট এবং বর্তমানে ২০-দলীয় জোট করে রাজনীতির মাঠে আছে। এর বাইরে ইসলামী বিভিন্ন দল ও সংগঠনকে নানা ইস্যুতে সমর্থন দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টাও করেছে বিএনপি। আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ বরাবরই ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি সামনে রাখায় ইসলামী দলগুলোর সমর্থন নিয়ে বিএনপি নিশ্চিন্ত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ইসলামী দল এবং সংগঠনগুলোর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে উদ্যোগ নেয়ায় দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে বিএনপি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জোটের অন্যতম শরিক হলেও যুদ্ধাপরাধ বিচার ইস্যুতে দলের শীর্ষ নেতাদের বিচার প্রক্রিয়ার সময় বিএনপির নীবরতার কারণে জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। যুদ্ধাপরাধী নেতানির্ভর এই রাজনৈতিক দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আন্দোলনে রাজপথের সুবিধা আদায় এবং নির্বাচনে জামায়াতর ভোট ব্যাংকের কারণে এত দিন বিএনপি তাদের ব্যবহার করেছে। কিন্তু জামায়াতের দুর্দিনে কোনো সহযোগিতা ও সমর্থন পায়নি বিএনপির কাছ থেকে।
অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন যুদ্ধাপরাধী ইমেজের কারণে জামায়াতকে সঙ্গে রেখে তাদের শুধু ক্ষতিই হয়েছে। পাশাপাশি জামায়াতবিরোধী অনেক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল তাদের কাছে ভিড়ছে না। এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে দুই দলের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেড়েছে। তবে আরও বড় রাজনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কায় প্রকাশ্যে বিপরীতমুখী অবস্থানের বিষয়টি জানান দেয়নি দল দুটি।
অন্যদিকে জোটের শরিক ইসলামী ঐক্য জোটের মূল অংশ বের হয়ে গেছে বিএনপি জোট থেকে। এদিকে ২০১৩ সালের ৫ মে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামীর কর্মসূচির প্রতি সমর্থন দিয়ে বিএনপি এই সংগঠনের মন জয় করে। পরবর্তীতে ভোটের মাঠে এর সুবিধা পাওয়া নিয়েও নিশ্চিত ছিল বিএনপি। আর ওই কর্মসূচিতে হেফাজতের অসংখ্য নেতাকর্মী হতাহত হওয়ার গুজব শাসক দলের সঙ্গে সংগঠনের শুধু দূরত্বই বাড়ায়নি, একেবারে শত্রুতেও পরিণত করেছিল। বিএনপির কর্মসূচিতে হেফাজতের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবেন এমন সমঝোতাও হয়েছিল বলে শোনা যায়।
কিন্তু সম্প্রতি ক্ষমতাসীনরা হেফাজতের বিভিন্ন দাবি মেনে নিয়ে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সংবাদে বিএনপির দুঃশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। সঙ্গত কারণেই ইসলামী দলগুলোকে নিজেদের অনকূলে রাখতে নানামুখী পরিকল্পনা করছে বিএনপি।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামী দল ও সংগঠন নিয়ে শাসক দলের তৎপরতা বিএনপিকে ভাবনায় ফেলছে। এর প্রমাণ পাওয়ায় যায় সম্প্রতি দেয়া দলটির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে। বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন। দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অনুভূতিকে এক্সপ্লয়েট করার জন্য শেখ হাসিনা ভারত সফরের আগে আলেম সম্মেলন করেন। ফিরে এসে আবার হেফাজতে ইসলাম প্রভাবিত কওমি মাদ্রাসার ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
আলেমদের সঙ্গে তার অতীত আচরণ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর ক্রমাগত আঘাতের কথা দেশবাসী নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি। এখন তিনি নিজেই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন। অতীতেও তাই করেছেন। একইভাবে আগামী নির্বাচনে ‘মুসলিম ভোট’ হাতে নিতেই প্রধানমন্ত্রী হেফাজতে ইসলামের সাথে সখ্য করছেন বলে অভিযোগ করে বক্তব্য দিয়েছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রিজভী আহমেদসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন