আওয়ার ইসলাম
‘দেশের পরীক্ষা নেয়ার প্রাচীন পদ্ধতি ডিজিটাল যুগে অচল হয়ে যাবে’- এমন মন্তব্য করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘মানুষের ধারণা ইন্টারনেট প্রশ্ন ফাঁস করে। কিন্তু ইন্টারনেট প্রশ্ন ফাঁস করে না, করে মানুষ।’
বুধবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা- ২০১৮’ উপলক্ষে ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম, ডাটাকার্ড প্রকাশ ও জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবহনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ডাক বিভাগের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের (এমওইউ) জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফাঁসকারীদের ধরা কি সম্ভব- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁস কেমন করে হয় এবং এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবেন।
আমাদের দিক থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার তা হলো, প্রচলিত যে পদ্ধতিতে আমরা পরীক্ষা গ্রহণ করি, প্রশ্ন যেভাবে প্রস্তুত করি, প্রশ্ন প্রস্তুত করা থেকে পরীক্ষার্থী পর্যন্ত যেভাবে পৌঁছায়; প্রক্রিয়াটি এমন যে এতসব মানুষ এত স্তরে যুক্ত আছেন, এটি যে কারো জন্যই একটি চ্যালেঞ্জ। পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বিধান করা। এটা সত্যি সত্যি দুরুহ একটি কাজ।’
‘আমাদের মধ্যে ধারণা জন্ম নিয়েছিল যে, ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁস হয়। ধারণা জন্মেছিল ইন্টারনেট প্রশ্ন ফাঁস করে। বিষয়টি খুব সিম্পল, না ফেসবুক, না ইন্টারনেট, না হোয়াটস অ্যাপ প্রশ্ন ফাঁস করে। প্রশ্ন ফাঁস হয় মানুষের হাতে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষে হাতে যখন প্রশ্ন ফাঁস হয় তথন আমাদের ইন্টারনেটের ওপর দায়টা আসে। কারণ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য থেকে রাষ্ট্রীয় তথ্য পর্যন্ত প্রচারের জন্য ব্যবহার হয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য প্রচারের দায়টা যদি প্রযুক্তির ঘাড়ে দিতে চান তবে তাকে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু বস্তুত পক্ষে আমি বিশ্বাস করি, যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হয়, যে পদ্ধতিতে প্রশ্ন তৈরি হয়, যে পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের চেষ্টা হয়, আমার মনে হয় সেটা নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। আমরা যদি নতুন করে না ভাবি তবে শত শত বছরের প্রাচীন পদ্ধতি ডিজিটাল যুগে অচল হতে পারে।’
‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেয়ার উপায় আছে’ জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘সেই উপায় আমাদের হাতে আছে তবে তা প্রয়োগ করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। লাখ লাখ শিক্ষার্থী, লাখ লাখ শিক্ষকের মধ্যে কারো পক্ষে প্রশ্ন ফাঁস করা সম্ভব হবে না। তবে ইন্টারনেট বন্ধ করা কিংবা ফেসবুক বন্ধ করা সমাধান নয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমরা যে কাউকে ট্রেস করতে পারি। প্রযুক্তিতে যেভাবে সরাসরি চিহ্নিত করার সুযোগ আছে, আবার ফাঁকি দেয়ার সুযোগও আছে। আমার কাছে যদি কোনো রিয়েল আইপি অ্যাড্রেস থাকে তবে তাকে আমি খুব সহজেই শনাক্ত করতে পারব। কিন্তু ভিপিএন ইউজ করা হলে শনাক্ত করা ডিফিকাল্ট হয়ে যাবে।’
‘ফাঁকিটা রোধের জন্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বিষয় আছে। আমাদের এখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে, বলতে গেলে বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেই জায়গায় যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে ওঠার দরকার ছিল সেভাবে আমরা গড়ে উঠতে পারিনি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সামগ্রিক কাজগুলো দ্রুত করার চেষ্টা করছি, আমরা চ্যালেঞ্জটা বুঝতে পারছি। চ্যালেঞ্জটা মোকাবেলার সক্ষমতা সরকারের আছে।’
এখন কি তবে প্রশ্ন ফাঁস রোধে কিছুই করার নেই- এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এখন যে মুহূর্তের মধ্যে আছি, সেই মুহূর্তে যে ধরনের প্রযুক্তিগুলো আমাদের হাতে থাকা দরকার সেই প্রযুক্তিগুলো যেমন ধরুন যিনি ফেসবুক থেকে প্রশ্ন ফাঁস করেছেন তার আইপি অ্যাড্রেস পেতে আমার ফেসবুক থেকে তথ্য পাওয়া দরকার। আমাদের যদি ফেসবুকের সঙ্গে সরাসরি এমওইউ না থাকে, যদিও ইতোমধ্যে ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে, কিন্তু ওই অ্যাড্রেস পেতে আমাদের যে সময় লাগবে ওই সময়টুকুর মধ্যে আমার ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে যায়। সমস্যাটা হচ্ছে সেই জায়গায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশ্বস্ত করতে পারি। আমরা ইনফ্যাক্ট তিনদিক থেকে কাজ করছি- আমাদের বিটিআরসি কাজ করছে, আইসিটি ডিভিশন কাজ করছে, পুলিশ বাহিনী কাজ করছে। এর মধ্যে একটা সমন্বয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। যে সমস্যাটা, সেটা যাতে প্রকৃত সমাধানের জায়গায়... শুধু প্রশ্ন ফাঁসের বিষয় নয়, বস্তুত পক্ষে আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পুরো ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে নিরাপদ করা।’
‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা- ২০১৮’ উপলক্ষে ১০ ও ৫ টাকা মূল্যমানের দুটি স্মারক ডাকটিকিট, ৫ টাকা মূল্যমানের একটি স্যুভেনির শিট, ১০ টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম ও ৫ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটাকার্ড প্রকাশ করেন মোস্তাফা জব্বার।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পরিবহনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ডাক বিভাগের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জাতীয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাঈদুল ইসলাম ও ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মণ্ডল সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
এসমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ডাক বিভাগ জাতীয় পরিচয়পত্র জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন কমিশন অফিসে পৌঁছে দেবে।