রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

দেওবন্দের ফতোয়া নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে ভারতীয় মিডিয়া!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: ভারতীয় বেশ কিছু মিডিয়ায় বিগত কয়েকদিন ধরে দারুল উলুম দেওবরন্দের দুটি ফতোয়া নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে সমালোচান চলছে। সাধারণদের অনেকে দেওবন্দকেই দোষারোপ করছে। দেওবন্দ কর্তৃপক্ষক সংকীর্ণ দৃষ্টির বলেও মন্তব্য কারো কারো।

কিছু টিভি চ্যানেল তো তিন তালাকের মতো ফতোয়াকেও নিষিদ্ধ করার দবি তুলছে।

দেওবন্দের স্থানীয় একজন সাংবাদিক বিষয়টির বাস্তবতা যাচাই করতে গিয়ে বলেছেন, মিডিয়া যে ফতোয়ার সমালোচনা করছে বাস্তবে তেমন কোন ফতোয়ার সন্ধান পাওয়া যায় নি। বরং ভিন্ন একটি বিষয়ের ফতোয়া টেনে এনে দেওবন্দের বদনাম কারার চেষ্টা চলছে।

একুশে বইমেলার যে কোনো বই ঘরে বসে পেতে অর্ডার করুন রকামারিতে

২০১৭ এর শেষে দিকে দেওবন্দ ব্যাংকে চাকরি বিষয়ে একটি ফতোয়া প্রকাশ করে। প্রশ্নকারী জানতে চেয়েছিলেন, ব্যাংকে চাকরি করে এমন বাবার মেয়েকে বিয়ে করা জায়েজ হবে কিনা? জবাবে দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগ থেকে জারি করা ফতোয়ায় বলা হয়, ব্যাংকে চাকরি করে এমন বাবার মেয়েকে বিয়ে করা জায়েজ। তবে পরহেজ করা ভালো।

দ্বিতীয় ফতোয়ায় একজন জানতে চেয়েছিলেন, এমন ঘর থেকে আমার বিয়ের পয়গাম আসছে যাদের অধিকাংশই ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট। এটাই তো স্বাভাবিক যে সে বাড়ির শিশুদের লালন পালন সুদ বা হারাম টাকার মাধ্যমে হয়েছে। তো আমার জন্য কি এমন ঘরে বিয়ে ঠিক হবে?

জাবাবে ফতোয়ায় বলা হয়, এমন ঘরে বিয়ে করা অনুত্তম ও পরহেজগারিতার খেলাফ। যাদের লালন পালল অবৈধ টাকার মাধ্যমে হয় সাধারণত তারা প্রকৃতিগতভাবে বিশুদ্ধ ও ভালো মানুষ হয় না। তাই এর থেকে বেঁচে থাকাই শ্রেয়, এবং কোন দ্বীনাদার ফ্যামিলিতে বিয়ে করা উচিত।

উপরের দুই ফতোয়ার কোথাও এ কথা বলা হয় নি যে ব্যাংকারের মেয়েকে বিয়ে করা নাজায়েয এবং হারাম! অথচ এ সাধারণ কথা নিয়ে মিডিয়াগুলো আকাশ মাথায় তুলে নিয়েছে। তারা পরহেজগারিতাকেই হারাম বলে চালিয়ে দিয়েছে।

দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া ১০০% সঠিক। পৃথিবীর সব দেশে প্রচলিত ব্যাংকগুলো ইসলামি অর্থনীতির বিপরীতে চলছে। এ ক্ষেত্রে দেওবন্দ পরহেজগারিতার ফতোয়া দিয়ে মোটেও ভুল করেনি।

দারুল উলুম দেওবন্দ ইসলামের দৃষ্টিতে যাকে সঠিক মনে করেছে ফতোয়ায় তাই লিখে দিয়েছে। এখন এর ওপর যদি কারো আমল করা সম্ভব না হয় তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু যদি কেউ শরিয়তের বিধান জানতে চায় তখন কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী যা সঠিক তাই তাকে বলা হবে। ইসলামি বিধান ছেড়ে প্রচলিত রেওয়াজ মেনে নেয়ার কোন সুযোগ নেই।

ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এর যাবতীয় ব্যাংকিং কার্যক্রম সুদের ওপর ভিত্তিশীল। সুতরাং একাউন্ট খোলা বা টাকা হেফাজতের জন্য ব্যাংকের সহযোগিতা নির্দিষ্টি পদ্ধতিতে সহযোগিতা নেয়ার সুযোগ থাকলেও এর থেকে বেঁচে থাকাই উত্তম।

এমনিভাবে দারুল উলুম দেওবন্দ কিছু দিন আগে মুসলিম নারীদের জন্য টাইটফিট, রঙ চড়া বোরকা এবং চমকদার পোশাক পরা ইসলামসিদ্ধ নয় এবং তা পরিধান করাও জায়েয নয় বলে মতামত দিয়েছে। সেটা নিয়ে মিডিয়ার সমালোচানার শেষ নেই!

অথচ হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় নারীদের এমন পোশাক পরা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যা পরিধান করলে নারীদের অঙ্গপ্রতঙ্গ বাইর থেকে বুঝা যায়।

ফতোয়ায় বলা হয়েছে, ইসলাম নারীদের যথা সম্ভব ঘরের বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ দেয়। আর যখন প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাবে তখন পূর্ণ পর্দাবৃত হয়ে বের হবে। এবং এক্ষেত্রে ঢিলেঢালা ও সাধারণ পোশাক পরা। এমন কোন বোরকা বা পোশাক না পরা যা পুরুষদের আকৃষ্ট করে থাকে।

দেওবন্দের দারুল ইফতায় এক প্রশ্নের জবাবে ওই কথা বলা হয়। অবশ্য এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোন প্রেস নোটিশ জারি করা হয় নি।

এদিকে ফতোয়া প্রকশের পর অন্য দেওবন্দি উলামায়ে কেরাম দেওবন্দের এই ফতোয়াকে জোরদার সমর্থন জানিয়েছেন।

কিন্তু প্রশ্নকারী কর্তৃক ফতোয়াটি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার পর ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বিশেষত উগ্র হিন্দু সংগঠন আরএসএস এবং মুসলিম বিরোধী অন্যান্য সংগঠন দেওবন্দের কড়া সমালোচনা করে। শুধু তাই নয়, এই ফতোয়াকে নারী স্বাধীনতা বিরোধী ও নারী অধিকারে হস্তক্ষেপ উাল্লেখ করে ফতোয়া প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও হুমকি দেয়।

অপর দিকে গণমাধ্যমে দেয়া এক সক্ষাতকারে উলামায়ে কেরাম বলেছেন, দেওবন্দ যে ফতোয়া জারি করেছে তা সঠিক। তবে এটা মানা না মানা ব্যক্তিগত ব্যাপার। ফতোয়া কোন আদেশ নয়। বরং প্রশ্নকৃত বিষয়ে ইসলামি শরিয়তের আলোকে জবাব প্রদান।

বাস্তবতা হলো মিডিয়গুলো কেবল সমালোচানার জন্যই সমালোচনা করে। প্রতিটি ধর্মেরই নির্দিষ্ট কিছু বিধান রয়েছে যা সে ধর্মের অনুসারীদের মেনে চলা আবশ্যক। সুতরাং মিডিয়াগুলোর উচিত ইসলামের দৃষ্টিতে বিষয়গুলোর বিচার করা।

অপর দিকে শিখ ধর্মেও তো নারীদেরকে আবৃত থাকার কথা রয়েছে। তাছাড়া কয়েকজন বিজেপি ও আরএসএস নেতা তো মিডিয়াতেই বলেছেন, নারীদের টাইটফিট ও জিন্স পরার কারণে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। ভারতের হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশের কয়েক জায়গায় তো মেয়েদের জন্য জিন্স পরা ও মোবাইল ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব সত্বে কেন শুধু শুধু দারুল উলুম বা ইসলামের বিধানের পেছন পড়া?

পশ্চিমা বিশ্বে যে হাজার হাজার নারী ইসলামের দিকে ধাবিত হচ্ছে তার বড় একটি কারণ হলো ইসলাম  নিরে্শিত শালীন পোশাক। তারা যখন হিজাব ধারণ করেন তখন তারা আত্মিক প্রশান্তি লাভ করেন বলে বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে বহুবার।

সূত্র: মিল্লাত টাইমস, নিউজ ১৮ উর্দু


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ