আওয়ার ইসলাম
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘ইচ্ছায়’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম।
তিনি বলেন, ‘ঢাকার দুই পাশে দুটো সুন্দর জেলখানা ছিল- কাশিমপুর এবং কেরানীগঞ্জ। সেখানে না নিয়ে বেগম জিয়াকে একাকী রাখার জন্য, মানসিকভাবে টর্চার করার জন্য নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।’
‘আমার মনে হয়, এরশাদ এতে সম্পৃক্ত রয়েছেন। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এটা করা হয়েছে। কারণ, তাকেও নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে রাখা হয়েছিল’ যোগ করেন এলডিপি চেয়ারম্যান।
রাজধানীর নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিবর্তন ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অলি আহমদ।
কর্নেল অলি ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপিতে যোগ দেন। ওই বছরের মার্চে চট্টগ্রাম-১৩ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া) আসনের উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রতিমন্ত্রী হন। এরপর আরও চার দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন একই আসন থেকে।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সংস্পর্শে থেকে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করেছেন তিনি। ১৯৮৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। অলি আহমদ ’৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে যোগাযোগমন্ত্রী, ’৯৬ সালে প্রথমে কৃষি, খাদ্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী এবং পরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রী হন।
অবশ্য ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে দলের সঙ্গে মতভেদ সৃষ্টি হয়। চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে এসে ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর অলি আহমদ বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে এলডিপি গঠন করেন।
ওই সময় বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ জোটের সঙ্গে মিলে আন্দোলন করলেও পরে বিএনপি জোটে ফেরেন অলি আহমদ। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিকে পরিণত হন তিনি।
জোটনেত্রীর মুক্তির দাবিতেও তিনি সোচ্চার। খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো প্রসঙ্গে এলডিপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা মনে করি, দেশের জনগণ এটা গ্রহণ করেনি।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া শুধু একটি বৃহৎ দলের নেত্রীই নন, তিনি একজন সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী। মেজর জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে সংকটময় মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাধীতার ঘোষণা করেছিলেন এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তার স্ত্রী খালেদা জিয়া নিজেও তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেত্রী তিনি। এক ধরনের বিনা অপরাধে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে।’
অলি আহমদ বলেন, ‘আজকে খালেদা জিয়া ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য একটা চক্রান্ত চলছে। অতীতেও এমন চক্রান্ত জনগণ প্রতিহত করেছে। আগামীতে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ বেগম জিয়ার এই ইস্যুকে কেন্দ্র ঐক্যবদ্ধভাবে চক্রান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির আন্দোলনকে এলডিপি পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার নেতাকর্মীকে কোনো মামলা ছাড়াই আটক করা হচ্ছে। এতে বুঝা যায় সরকার কতটা আতঙ্কে।’
এলডিপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি ক’দিন আগেই দলের বর্ধিত সভায় বলেছিলাম, একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বেগম জিয়াকে জেলে রেখে তারা একটা একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়াকে জেলে নেয়ার সঙ্গে নির্বাচনের অনেক সম্পর্ক রয়েছে। সরকার পূর্বপরিকল্পতি একটি রায় দিয়েছে বিএনপি এবং জাতীয়তাবাদী শক্তি ধ্বংস করার জন্য। এটা সঠিক হয়নি। গণতন্ত্রের পথে আগানো উচিত, তাতে দেশের মঙ্গল হবে।’
সরকার প্রতি আহ্বান জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, ‘সরকারেকে এটা অনুধাবন করতে হবে- আমরা চাই না দেশের পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করুক। দেশ আমরা স্বাধীন করেছি উন্নয়নের জন্য, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য। সরকার যদি দেশে শান্তি চায় তাহলে তাদের উচিত হবে অনতিবিলম্বে বেগম জিয়াকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া।’
খালেদা জিয়াক নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত জেলখানায় নিয়ে গিয়ে সমগ্র জাতিকে অপমানিত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে সংকটের দিকে যাচ্ছে। সরকার বলছে, এখানে তাদের কোনো হাত ছিল না। কিন্তু বৃহস্পতিবার তারিখ ধার্য করাটা পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল। সরকার সব কিছু জানতো, যে কারণে তারা ১৫ দিন পূর্ব থেকেই নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত জেলখানা সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে।’
সাবেক এই প্রভাবশালী মন্ত্রী বলেন, ‘দুই পাশে দুটো সুন্দর জেলখানা ছিল- কাশিমপুর এবং কেরানীগঞ্জ। সেখানে না নিয়ে বেগম জিয়াকে একাকী রাখার জন্য, মানসিক টর্চার করার জন্য নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তাতে আমরা মনে হয়, এরশাদ সম্পৃক্ত রয়েছেন। তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এটা করা হয়েছে। তাকেও নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে রাখা হয়েছিল।’
এরশাদ সম্পর্কে এলডিপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘তিনি ছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত ব্যক্তি। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে (খালেদা জিয়া) এভাবে অপমান করার অধিকার কারও নেই।’
একজন নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এটাই প্রথম সাজা- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা কোনো বিচার হয়নি। সংবিধান লংঘন করা হয়েছে। আইনের লংঘন করা হয়েছে। প্রহসনের বিচার হয়েছে। এটা সরকারের লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়েছে। এ সাজা ক্রিমিনাল অফেন্স যারা করেন তাদেরকে দেয়া হয়। এখানে কোনো ক্রিমিনাল অফেন্স হয়নি। টাকার কোনো তছরুপ হয়নি।’
‘কিন্তু বর্তমান সরকারের সময় বিভিন্ন ব্যাংকের টাকাগুলো লুট করা হচ্ছে। তিন লাখ হাজার কোটি টাকার উপরে বিদেশে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রতিনিয়িত বিদেশে টাকার পাচার করা হচ্ছে...। এটা দেশের স্বার্থের পরিপন্থী। বর্তমান সরকার এর সঙ্গে জড়িত না থাকলে কোনো ব্যবসায়ীর এ ধরনের ব্যবসায় লিপ্ত হওয়া সম্ভব ছিল না’ যোগ করেন অলি আহমদ।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে অলি আহমদ বলেন, ‘অবশ্যই কঠোর আন্দোলন হবে। তবে সেই আন্দোলন হবে গণতান্ত্রিক উপায়ে এবং সাংবিধানিক উপায়ে। আমরা কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘দেশ গড়ার জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়েছিলাম। বিএনপি এবং এলডিপি মুক্তিযোদ্ধাদের দল। সুতরাং আমরা কখনো দেশের মানুষের কষ্ট দিযে কোনো কাজ করতে চাই না। বেগম জিয়াকে মুক্ত করার জন্য দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে আসবে, সেদিন বেশি দূরে নয়।’
উল্লেখ্য, নাজিম উদ্দিন রোড থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার দুই বছর আগে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ায় পুরনো কারাগারে এখন খালেদা জিয়াই একমাত্র বন্দি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।