আওয়ার ইসলাম
ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক প্রতিবেদনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পররাষ্ট্র নীতির নানা দিক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে লিখেছে "সৌদি পররাষ্ট্র নীতি অকার্যকর ও অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে।"
প্রতিবেদনটির লেখক বিসান ম্যাক রানান বলেছেন, পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে একের পর এক ব্যর্থতার কারণে মোহাম্মদ বিন সালমান কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। লেবানন ও কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য ঘটনাবলীতে তিনি কোনো প্রভাবই বিস্তার করতে পারেননি। দৈনিকটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সৌদি আরব ইয়েমেন যুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি লাভ করেনি বরং ইয়েমেন বর্তমানে সৌদি আরবের জন্য আরেকটি ভিয়েতনামে পরিণত হতে যাচ্ছে।
অতীতেও ইয়েমেনে আগ্রাসীদের পরিণতি ভালো হয়নি। ১৯৬০এর দশকে মিশর ইয়েমেন যুদ্ধের চোরাবালিতে আটকা পড়েছিল। ইয়েমেনে সামরিক আগ্রাসন চালাতে গিয়ে কায়রোকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়েছিল। ওই যুদ্ধে মিশরের ১০ হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছিল এবং দেশটি ঋণভাবে জর্জরিত হয়ে পড়ে। সে সময়ও বলা হত ইয়েমেন মিশরের জন্য ভিয়েতনামে পরিণত হয়েছে। তখন পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো মন্তব্য করেছিল, ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ করে মিশর অনেক বড় ভুল করেছে।
বর্তমানে সৌদি আরব ইয়েমেনে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে নিজের শক্তিমত্বা প্রমাণ করার পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ইয়েমেনের ইতিহাসে কোনো আগ্রাসী শক্তিই সেদেশে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। খুব বেশিদিন সময় লাগেনি ইয়েমেনে আবারো অতীত ঘটনাবলীর পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে। আবারো গণমাধ্যমগুলো বলতে শুরু করেছে, ইয়েমেন হবে সৌদি আরবের জন্য ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার শোচনীয় পরাজয় ঘটেছিল। এরপর মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়েও আমেরিকা ব্যর্থ হয়েছে।
সৌদি আরবও ইয়েমেন যুদ্ধে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। সৌদি আরবের একজন রাজনৈতিক কর্মী মোজতাহেদ বলেছেন, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের সামরিক ও রাজনৈতিক পরাজয় ঘটেছে এবং আনসারুল্লাহ যোদ্ধারা বিজয় লাভ করছে। ইয়েমেন যুদ্ধে সাফল্য অর্জনের জন্য সৌদি আরব সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা চালালেও তাদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করতে রাজি নন রিয়াদের কর্মকর্তারা। কারণ এটা তাদের জন্য অবমাননাকর।
সৌদি আরব গত ২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেনে হামলা শুরু করে। তারা ভেবেছিল খুব অল্প সময়ের মধ্যে আনসারুল্লাহ যোদ্ধাকে হারিয়ে পলাতক প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদিকে ফের ক্ষমতায় বসাতে পারবে। কিন্তু ইয়েমেনের জনগণের পাল্টা প্রতিরোধের কারণে সৌদি আরব নতজানু হতে বাধ্য হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত একটি লক্ষ্যও সৌদি আরব অর্জন করতে পারেনি। ইয়েমেনের চোরাবালিতে পড়ে সৌদি আরব দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
/এটি