রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

তারেক বিন জিয়াদের জিব্রালটারে কেমন আছে মুসলমান?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু: মুসলিম সেনাপতি তারেক বিন জিয়াদ স্পেন বিজয় করেছিলেন। ইউরোপের মাটিতে প্রথম ইসলামের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন তিনি। উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদের নির্দেশে অগ্রবর্তী দল হিসেবে তারিক বিন জিয়াদ স্পেনে অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি ছিলেন উমাইয়া খেলাফতের আফ্রিকান কমান্ডের একজন সেনাপতি।

এ কমান্ডের মূল দায়িত্বে ছিলেন মুসা বিন নুসাইর। যাকে আফ্রিকা বিজয়ীও বলা হয়। তারিক বিন জিয়াদ প্রাথমিক সাফল্য লাভের পর উমাইয়া খলিফা মূল সেনাদল প্রেরণ করেন।


মানচিত্রে জিব্রালটার।  এখানেই অবতরণ করেছিলেন তারিক বিন জিয়াদ।

তারিক বিন জিয়াদ ২৭ এপ্রিল ৭১১ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের মাটিতে পা রাখেন। তিনি মরক্কো থেকে জাহাজে স্পেনে পৌঁছান এবং জাবালে তারিকে এসে নোঙ্গর করেন। যার বর্তমান নাম জিব্রালটার। জাবালে তারিকের স্পেনিশ উচ্চারণ জিব্রালটার।

পাথুরে পাহাড়ে গড়া জিব্রালটারের পাদদেশে জাহাজ নোঙ্গর করে মুসলিম এ সেনাপতি সৈনিকদের উজ্জীবিত করতে জাহাজগুলো পুড়িয়ে দেন এবং ঐতিহাসিক এক ভাষণ প্রদান করেন। যাতে তিনি বলেন, তোমাদের সামনে মৃত্যু আর পেছনে সাগর অপেক্ষা করছে। মৃত্যুকে জয় করতে না পারলে সাগরে ডুবে মরতে হবে আমাদের।

জিব্রালটারে স্পেনের তৎকালীন শাসক রাজা রডারিকের সঙ্গে তার তুমুল যুদ্ধ হয়। রাজা রডারিকের ১ লাখ সৈনিকের বিরুদ্ধে তিনি মাত্র ৭ হাজার সৈনিক নিয়ে বিস্ময়কর এক বিজয় লাভ করেন। তার নামানুসারে যুদ্ধক্ষেত্রের নাম রাখা হয় জাবালে তারিক বা তারিক পাহাড়।


মদিনায়ে ফাতহ-এর রাজপ্রসাদে এখন উড়ে ব্রিটিশ পতাকা

স্পেনের সীমান্তে সংযুক্ত জিব্রালটারের সৃষ্টি (বিজ্ঞানীদের ধারণা মতে) খ্রিস্টপূর্ব ২০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে। কিন্তু মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন জিয়াদ তা বিজয় করার পূর্বে সেখানে কোনো মানব বসতি ছিলো না। তিনি সেখানে মানব বসতি গড়ে তোলেন। তার হাতে কিছু শহুরে স্থাপনাও স্থাপিত হয় সেখানে। স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান হলে তার স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়।


জিব্রালটারের পাউন্ডে তারিক বিন জিয়াদ

স্পেনে মুসলিম শাসনের ৮০০ বছরের ৭৫০ বছরই জিব্রালটার মুসলমানের শাসনাধীন ছিলো। মুসলিম শাসনের কেন্দ্র গ্রানাডা হওয়ায় জিব্রালটারে উল্লেখযোগ্য কোনো মুসলিম স্থাপনা গড়ে ওঠে নি। খ্রিস্টীয় এগার শতকের শেষভাগে স্পেনের কিছু অংশ উত্তর আফ্রিকার ফাতেমি খলিফাদের অধীনে চলে যায়। মূলত তারা এসেছিলেন স্পেনের মুসলিম শাসন রক্ষার জন্য।

বিশেষত ইউসুফ বিন তাসফিন ইউরোপীয় খ্রিস্টান রাজাদের বিরুদ্ধে উমাইয়া খলিফাদের উদারভাবে সাহায্য করেন।


 মুসলমানদের স্থাপিত কামানটি এখনো জিব্রালটার পাহারা দেয়।

ফাতেমি খলিফা আবদুল মুমিন ১৯ মার্চ ১১৬০ খ্রিস্টাব্দে জিব্রালটারকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। তিনি সেখানে মদিনায়ে ফাতহ বা বিজয়ের শহর গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। শহরের কাজ পরিপুরি শেষ হয় নি বলেই ঐতিহাসিকদের ধারণা।

তার সময়ে স্থাপিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে পাওয়া যায় একটি দৃষ্টিনন্দন গেট (বাবে ফাতহ), মসজিদ, রাজপ্রাসাদ ও পানির ঝর্ণাসমূহ। শহরের নিরাপত্তার জন্য ১৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি সীমান প্রাচীরও গড়ে তোলা হয়।


এক নজরে মদিনায়ে ফাতহ

খলিফা আবদুল মুমিনের মৃত্যুর পর তার ছেলে আবু ইয়াকুব ইউসুফ তার রাজধানী সিভেইলকে রাজধানী ঘোষণা করে। ফলে জিব্রালটারে আধুনিক যে শহর গড়ে উঠছিলো তা থেমে যায়।

১৩০৯ খ্রিস্টাব্দে জিব্রালটার মুসলিমদের হাত ছাড়া হয়। ১৭০৪ সালে দ্বীপটি ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত তা ব্রিটেনের অধীনে রয়েছে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জিব্রালটারের অধিবাসীগণ নামমাত্র রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করে। এখন তারা ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।


রাজপ্রাসাদের গোসলখানা

মুসলিম শাসন অবসানের পর স্পেনের অন্যান্য স্থানের মতো জিব্রালটারকেও সম্পূর্ণ মুসলিমমুক্ত করা হয়। সেখানে আবারও মুসলিম বসবাস শুরু হয়েছে বর্তমানে জিব্রালটারের ৩০ হাজার অধিবাসীর ৮৬ ভাগ অধিবাসী খ্রিস্টান, ৭ ভাগ মুসলিম, ২ ভাগ খ্রিস্টান ও ২.৪ ভাগ ইহুদি।

জিব্রালটারের মুসলিমদের অধিকাংশ মরক্কোর বংশোদ্ভূত। বাকিরা আরব। কিছু সংখ্যক এশিয়ান মুসলিম সেখানে রয়েছে।


ব্রিটিশ দখলে যাওয়ার পর বাব-ই-ফাতহ

সৌদি আরবের মরহুম বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ জিব্রালটারকে পৃথিবীর কাছে নতুন করে পরিচিত করার উদ্যোগ নেন। তিনি জিব্রালটার সফর করেন এবং এখানে বৃহৎ একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।

ইবরাহিম আল ইবরাহিম মসজিদটি ৮ আগস্ট ১৯৯৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয়। তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে মসজিদে ফাহাদ বিন আবদুল আজিজও বলা হয়।

৯৮৫ স্কয়ার ফিটের এ মসজিদটি নির্মাণে বাদশাহ ফাহাদ ৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেন। ধারণা হয়, ইউরোপের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত এ মসজিদে অমুসলিম দেশের সর্ববৃহৎ মসজিদ।

এটিই জিব্রালটারের একমাত্র জুমার মসজিদ। মসজিদটিকে মূলত একটি কমপ্লেক্স হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। যাতে রয়েছে ৪৮০ স্কয়ার ফিটের একটি মূল প্রার্থনা কক্ষ। যাতে ৪ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবে। মহিলাদের নামাজ আদায়ের জন্য রয়েছে ভিন্ন ব্যবস্থা।


মসজিদে ফাহাদের ভেতরের অংশ

এছাড়াও ৬টি ক্লাস রুম, ১টি লাইব্রেরি, ১টি লাশধোয়ার রুম, ১ হলঘর, কর্মকর্তা কর্মচারিদের আবাসিক ব্যবস্থা ও পরিচালনা অফিস।

ইবরাহিম আল ইবরাহিম মসজিদকে জিব্রালটারের অন্যতম পর্যটন স্পট মনে করা হয়। মুসলিম ও অমুসলিম সব দর্শনার্থী এ মসজিদে প্রবেশের অধিকার রাখেন।

জিব্রালটারে মসজিদটি নির্মাণের পর মুসলিমদের ধর্মীয় কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মসজিদ কেন্দ্র করে তারা যেমন ইসলামি শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছে। তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে পারস্পারিক যোগাযোগ ও সৌহার্দ্য। যা জিব্রালটারে ইসলাম প্রসারে ভূমিকা রাখছে।

তারিক জামিলের চোখে জুনায়েদ জামশেদ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ