আওয়ার ইসলাম, ডেস্ক: সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ সহ ৯ রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া আদেশ বাস্তবায়ন ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মালদ্বীপের বিরোধীদলীয় নেতারা।
সঙ্কট নিরসনে দেশটির প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের প্রতি চাপ প্রয়োগ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রতিবেশি দেশগুলোর সহায়তা চেয়েছেন তারা। খবর এএফপি।
গত সপ্তাহে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদসহ বিরোধীদলীয় ৯ নেতাকে মুক্তি দেয়ার আদেশ দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের প্রশাসন বিরোধী দলীয় ৯ রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
এর জেরে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের প্রশাসন মুখোমুখি অবস্থানে যায়। সুপ্রিম কোর্ট বলছে, বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশে করা হয়েছে।
রবিবারও সুপ্রিম কোর্ট ওই আদেশ বাস্তবায়ন করতে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু দেশটির এই প্রেসিডেন্ট নিজ অবস্থানে অনড় থেকে সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে বিরোধীদলীয় দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। রবিবার গভীর রাতে রাজধানী মালেতে বিরোধীদলীয় হাজার হাজার নেতাকর্মী বিক্ষোভ দেখান।
এর আগে রবিবার সকালের দিকে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ অনিল প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করতে সুপ্রিম কোর্ট চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করার পর মালদ্বীপ সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করে।
তার ওই অভিযোগের পর সকালের দিকে দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজধানী মালেতে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবন সিলগালা করার পর দখলে নেয়।
দেশের শীর্ষ আদালতের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের চলমান উত্তেজনার অবসানের লক্ষ্যে মালদ্বীপের বিরোধীদলীয় নেতারা এক চিঠিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহায়তা চেয়েছেন।
চিঠিতে তারা বলেছেন, মালদ্বীপে জনগণের শাসন ফিরিয়ে আনতে ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সম্ভব সবকিছু করতে ভারত, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমরা অনুরোধ করছি।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই সঙ্কটের জেরে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিন। উত্তেজনা না বাড়াতে ও সঙ্কট দ্রুত সমাধানে ব্যবস্থা নিতে ইয়ামিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস।
গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে বিরোধীদলীয় নেতাদের মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া আদেশে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। অতীতে দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা ইয়ামিনের অভিশংসনের চেষ্টা করেছিল; তবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
কিন্তু বহিষ্কৃত ১২ সংসদ সদস্যকে সুপ্রিম কোর্ট স্বপদে বহালের নির্দেশ দেয়ায় পার্লামেন্টে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে ইয়ামিন নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল। রবিবার দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ অনিল সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের যে কোনো ধরনের চেষ্টা হবে অসাংবিধানিক ও অবৈধ।
নির্বাসন থেকে ফেরা বিরোধীদলীয় দুই সংসদ সদস্যকে রবিবার গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সোমবার সকালের দিকে তাদেরকে আদালতে নেয়া হয়। পরে মালের অপরাধ আদালত এক সংসদ সদস্যকে মুক্তি দেয়। অপর সংসদ সদস্যের শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
সোমবার থেকে পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও উদ্ভূত রাজনৈতিক সঙ্কটে অনির্দিষ্টকালের জন্য তা স্থগিত ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন। রবিবার সকালের দিকে মালদ্বীপের পার্লামেন্ট পিপলস মজলিসে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পার্লামেন্ট ভবনের দখল নেয়।
দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা ভিত্তিহীন বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে আদালত। এর ফলে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যত নির্বাচনে অংশ নেয়ার পথও উন্মুক্ত হয়েছে।
২০১৫ সালে সন্ত্রাসবাদের বিতর্কিত অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি নাশিদ। রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া আদেশ না মানায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন অভ্যুত্থান চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মোহাম্মদ নাশিদের মালদ্বীভিয়িান ডেমোক্রেটিক পার্টি বলছে, প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ।
মোহাম্মদ নাশিদের সঙ্গে ২০১৩ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচনে জয় লাভ করেন ইয়ামিন। তবে এই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে দেশের ভেতরে। নির্বাচনে জয়ের পর বিরোধীদলীয় অধিকাংশ নেতাকেই তিনি জেলে পুরেছেন। সুত্র: কালের কন্ঠ।
এসএস/