আতাউর রহমান খসরু: আমি তখন সম্ভবত শরহে বেকায়া জামাতের ছাত্র। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের ‘ভালোবাসার সাম্পান’ বইটি কিনে পইপই করে বইমেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছি।
হঠাৎ স্যারের সঙ্গে দেখা। অটোগ্রাফের জন্য বই মেলে ধরতে তিনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালেন। বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, হুজুররাও দেখি আমার বই পড়ে! আমি বললাম, স্যার! আমি একা না আমার মতো অনেকে আপনাকে চেনে, আপনার বই পড়ে।
স্যারের পাল্টা প্রশ্ন : মাদরাসায় বাংলা পড়া যায়? স্যারকে আশ্বস্ত করে বললাম, শুধু পড়া যায় তা না পড়লে পুরস্কারও দেয়া হয়। বছরে ৩টা বাংলা দেয়ালিকা প্রকাশিত হয়। স্যার খুশি হলেন, আমাকে আশির্বাদ দিলেন।
আমি তখন জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া মাদরাসায় পড়ি। আমাদের মাদরাসায় বছরে ৩টি দেয়ালিকা বের হতো, বছরের সেরা ৩ পাঠককে পুরস্কার দেয়া হতো তবুও শুধু বইমেলায় আসতাম বলে ছেলেরা আমাদের ভিন্ন চোখে দেখতো। কারো চোখে থাকতো বিস্ময়, কারো চোখে বিদ্রূপ। আর আমাদের মনে থাকতো ভয় কখন জানি দায়িত্বশীল শিক্ষক আবার আমাদের অপকর্মের কথা! জেনে না যান।
এক যুগের ব্যবধানে চিত্রটা কতো পাল্টে গেছে! আমি জানার মতে, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এখন অনেক মাদরাসা শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, তাদের প্রতি সুধারণা রাখেন। তখন বইমেলার ভিড়ে নিজেদের ভিনগ্রহের প্রাণীর মতো অদৃশ্য মনে হতো আর এখন বইমেলায় মাদরাসাপড়ুয়া পাঠকের ভিড়ই বাড়ছে না বাড়ছে লেখকের ভিড়ও।
বইমেলায় আসলে ফেসবুক ওয়াল ভরে আমাদের ছেলেদের বইয়ের মোড়কে। মেলার মোড়ে মোড়ে চোখে পড়ে তাদের সজীব আড্ডা। গতবার দেখলাম, একজন মাদরাসা শিক্ষক নিজের ছাত্রদের নিয়ে এসেছেন বইমেলায়। স্টল ঘুরে ঘুরে তিনি বই কিনে দিচ্ছেন তাদের।
বাঙালির প্রাণের মেলায় আমাদের তরুণ লিখিয়েদের এ ভিড় হৃদয়কারা, ভালোলাগার অনুভূতি অনন্য।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছেন আয়েশা