মুহাম্মাদ শোয়াইব
৬০ জন রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মীর নির্বিচারে গ্রেফতারের জের ধরে সৌদি আরবের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদ স্থগিত করার জন্য জাতিসংঘের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক ব্রিটিশ অ্যাটর্নি জেনারেল ও হাউস অফ লর্ডস এর সদস্য লর্ড ম্যাকডোনাল্ড এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী রডনি ডিকসন।
ব্রিটিশ আইনজীবীরা গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের অনুরোধে তাদের সাক্ষের ওপর ভিত্তি করে এবং ব্রিটেনের মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় একটি প্রতিবেদন তৈরি করে জাতিসংঘে জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনটির সারনির্যাস হলো, সৌদি আরবের সাম্প্রতিক গ্রেফতারগুলো ছিল প্রতিহিংসামূলক। গ্রেফতারকৃতদেরকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়া ও সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ আনা ছাড়া গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। তাছাড়া গ্রেফতারকৃতদের অবস্থা সম্পর্কে তাদেরকে স্বজনদেরকে কিছুই জানানো হচ্ছে না। আইনজীবীগণ গ্রেফতারকৃতদের স্বাস্থ্য অবস্থা সম্পর্কে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেন। যেমন সালমান আওদাহ, তাকে কিছু দিন আগে অসুস্থতার কারণে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। অথচ তার পরিবারকে তার স্বাস্থ্যগত কোনো কিছুই জানানো হয়নি।
যারা এই প্রতিবেদন করেন তাদের একজন হলেন লর্ড ম্যাকডোনাল্ড। যিনি সাবেক ব্রিটিশ অ্যাটর্নি জেনারেল, হাউস অফ লর্ডস এর সদস্য ও মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ। আর আরেকজন হলেন রডনি ডিকসন। যিনি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ। তারা দুজন মিলে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে জাতিসংঘে জমা দিয়েছেন।
প্রতিবেদনটির সূচনা হয়েছে এভাবে যে, সৌদি আরব ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কিছু ব্যক্তিকে প্রতিহিংসাবশত গ্রেফতার করা শুরু করে। এই পর্যন্ত ৬০ জনের উর্ধে লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই মানবাধিকার ও রাজনৈতিক সক্রিয় কর্মী।
আইনজীবীগণ বলছেন, তারা এই এই প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছেন গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের অনুরোধে। কেননা গ্রেফতারকৃতদের পরিবার চাচ্ছেন, তাদের স্বজনদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোনো আইন লঙ্গন হয়েছে কিনা? তাছাড়া সৌদি আরব তাদের স্বজনদের সঙ্গে যে আচরণ করছে তার বৈধতা কতটুকু? ইত্যাদি বিষয়গুলো জানতে।
তারা এই প্রতিবেদনটি তৈরি করতে যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাদের কেউেই নাম প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নয়। কারণ তাতে আবার আইনী জটিলতার মধ্যে পড়ে যেতে পারেন। তাছাড়া এ কাজে তারা আরও কিছু মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তবে তারাও তাদের পরিচয় প্রকাশ করেননি।
আইনজীবীরা এই প্রতিবেদনটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যোগ করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যে ৬০ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের গ্রেফতার ছিল প্রতিহিংসাবশত। এতে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্গন ছিল। গ্রেফতারকৃতদেরকে এখনও কোনো অভিযোগ জানানো হয়নি। এমন কোনো তথ্যও জানানো হয়নি, যাতে তাদেরকে গ্রেফতারের কোনো বৈধ্যতা প্রমাণিত হয় না। তারা ঠিক জানে না যে, তারা কী কারনে সাজা ভোগ করছেন।
আইনজীবীগণ আরও জানান, তারা এ বছর জাতিসংঘের কাছে সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতির রেকর্ড পেশ করবেন এবং তাদের প্রতিবেদন বিবেচনায় নেয়ার আবেদন জানাবেন। জাতিসংঘের কাছে তারা আহবান জানাবেন, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে যাদেরকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করা হযেছে তাদের সবাইকে ছেড়ে দিতে সৌদিকে বাধ্য করতে। মানবাধিকার রক্ষায় সৌদির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।
এই প্রতিবেদনে কয়েকটি চুক্তির কথা বলা হয়েছে। যেসব চুক্তি সৌদি আরব বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আরব লীগের সঙ্গে করা ২০০৯ সালের চুক্তি। উল্লেখ্য, সৌদি আরব আরব লীগের সঙ্গে যুক্ত হযেছে ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ সালে। এরমধ্যে আরও রয়েছে ঐতিয্যগত আন্তর্জাাতিক আইন-চুুক্তি। যাতে সৌদি আরবকে মানবাধিকারের মূলনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করার কথা বলা হয়েছে। নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বেশ কিছু রিপোর্ট স্থান পেয়েছে। যা জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় প্রকাশ করা হয়েছে। যার মধ্যে ছিল ২০১২ সালে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রকাশিত অষ্টম প্রতিবেদন। যাতে সৌদি আরবের চারজন নাগরিককে প্রতিহিংসামূলক গ্রেফতারির নিন্দা জানানো হয়েছে। একই বছরের ২২ নং প্রতিবেদন, যাতে ১২ জন মিশরীয় নাগরিককে গ্রেফতার করার নিন্দা জানানো হযেছে। ২০১২ সালেই প্রকাশিত ২৫ নং প্রতিবেদন, যাতে নিন্দা জানানো হয়েছে মুহাম্মাদ আল জাজিরী, আলীজান আল জাজিরী ও হাছম আল লাহিবীর গ্রেফতারের। তাদেরকে প্রায় নয় মাস বন্দি করে রাখাা হয়েছে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করা ছাড়া। প্রথমে মক্কায় এরপর যাহবানে।
সেখানে আরও ছিল ২০১৩ সালের প্রকাশিত ৩২ নং প্রতিবেদন, যাতে খালেদ আল উমায়েরের গ্রেফতারের নিন্দা ছিল। ২০১৩ সালেরই ৪৫ ও ৪৬ নং প্রতিবেদন যাতে নিন্দা ছিল মুহাম্মাদ সালেহ আল জাবিদী ও আব্দুল কারীম আল খুদায়েরের গ্রেফতারের। ২০১৪ সালে প্রকাশিত ১৪ নং প্রতিবেদন, যা করা হয়েছিল যাকায়িয়্যাহ মুহাম্মাদ আলীরে গ্রেফতারের প্রতিবাদে। ২০১৪ সালেল ৩২ নং প্রতিবেদন, যাতে নিন্দা জানানো হয়েছিল তাহের আলী আব্দ জামে এর গ্রেফতারের প্রতিবাদে। ২০১৫ সালের করা ১৩ নং প্রতিবেদন, যাতে তীব্র নিন্দা জানানো হযেছিল মাজেদ আন নাসীফের গ্রেফতারের এবং ৩৮ নং প্রতিবেদন যাতে নয় মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছিল।