মাহমুদুল হাসান, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: মাদরাসাকে কটাক্ষ করে বক্তব্য প্রদান করায় ঢাবির ইতিহাসের শিক্ষক ড. মেজবাহ কামালের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন হাফেজ কারী মাওলানা যুবায়ের আহমাদ।
অধ্যাপক মেসবাহ কামালকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, 'আপনি বলেছেন মাদরাসার ছাত্ররা ইংরেজি জানে না। ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন কিন্তু আপনারাই করেন। আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, অধিকাংশ বছরই ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় মাদরাসার ছাত্ররা ফার্স্ট হচ্ছে। ফার্স্ট হওয়া মাদরাসা ছাত্র আব্দুর রহমান ইংরেজিতে ৩০ এ পেয়েছিল সর্বোচ্চ ২৮.৫০ নম্বর। যা কোনো কলেজছাত্র পায়নি।
এরপরও যদি আপনারা মাদরাসা নিয়ে যাচ্ছেতাই বলেন, তাহলে মনে রাখবেন, আমরা এদেশে ভাড়া থাকি না। আমাদের টাকা দিয়ে আপনাদের বেতন দেয়া হয়। এদেশে থাকতে হলে মাদরাসা, কোরআন হাদিসকে মেনে নিয়েই থাকতে হবে।
অন্যথায় এদেশের ১৭ কোটি তাওহিদী জনতা এ পবিত্র বাংলার এক ইঞ্চি মাটিও আপনাদের জন্য ছেড়ে দেবে না।' এ সময় উপস্থিত হাজার হাজার জনতা এ বক্তব্যকে সমর্থন করে মুহূর্মুহ শ্লোগানে।
গতকাল কিশোরগঞ্জ বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত ইসলামী মহাসম্মেলনে বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন বেফাকের সহসভাপতি আল্লামা আজহার আলী আনোয়ার শাহ (দা. বা.)। প্রধান আলোচক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও দায়ী মাওলানা শরীফ মুহাম্মাদ।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এ মাওলানা, 'আগামী প্রজন্মকে জঙ্গিবাদ থেকে বাঁচাতে তাদের ইসলামী শিক্ষা প্রদানের বিকল্প নেই' উল্লেখ করে সম্প্রতি ড. আবুল বারাকাত ও মেসবাহ কামালের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে এর কড়া জবাব দেন।
মাওলানা যুবায়ের বলেন, ২৮ জানুয়ারি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয় যে, ড. আবুল বারকাত বলেছেন, 'মাদরাসা শিক্ষা জঙ্গিত্বে উর্বর'। অথচ হলি আর্টিজনে হামলাকারী জঙ্গিদের সবাই সাধারণ শিক্ষিত। ৪ জনই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। শোলাকিয়ায় হামলাকারী জঙ্গিরাও ছিল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
গত ২৮ জানুয়ারি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুয়ায়ি ঢাকার এক সমাবেশে বাংলাদেশের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, যারা মাথায় কোরআন ধারণ করেন, তারা কখনো সন্ত্রাসী হতে পারেন না।
ড. বারকাত বলেছেন, মাদরাসায় পড়ে নাকি ছাত্ররা বেকার থাকে। অথচ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ১০-১২-২০১৬ এর এক রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের ৪৭% স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার। এদেরই একটি অংশ ছিনতাই ও মাদকের সঙ্গে জড়িত।
ঢাবি থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেও চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করছে স্নাকোত্তর ডিগ্রিধারীরা। দৈনিক প্রথম আলোর ২৭ মার্চ ২০১৭ এক রিপোর্টে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে মাস্টার্স পাশ করা তারেক আজিজ চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করেছিল।
অথচ টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত খুঁজলে একজন দাওরা পাশ লোকও এমন পাওয়া যাবে না যে তিনি চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের প্রশংসা করে মাওলানা যুবায়ের বলেন, বাংলাদেশের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাদরাসা শিক্ষার পক্ষে বার বার বক্তব্য প্রদান এবং কোনো জঙ্গি কর্মকাণ্ডে মাদরাসা পড়ুয়াদের জড়িত না থাকা সত্বেও 'জঙ্গিত্ব উৎপাদনে এ শিক্ষা উর্বর', 'এরা বেকার' বলায় ড. বারকাতের মানসিক ভারসাম্য ঠিক আছে কি-না তা যাচাই করা প্রয়োজন।
মাওলানা বলেন, মাদরাসা শিক্ষাকে বিষোদগার করে ড. বারকাতের 'বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার রাজনৈতিক অর্থনীতি' নামক কল্পিত বই বাজেয়াপ্ত করে তা ময়লার ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করতে হবে। এ সময় হাজার হাজার শ্রোতা আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে কাঁপিয়ে তোলে পুরো এলাকা।
এসএস/