আওয়ার ইসলাম : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ দিন ধার্য করেন। এদিন জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় হাজিরা প্রদান করেন বেগম খালেদা জিয়া। বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। বেলা ৩টা ২৭ মিনিটে আদালত ত্যাগ করেন।
রায়ের তারিখ ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আমরা সকল প্রকার অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। মামলার রায়ে তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
এ মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বলে জানা গেছে।
অপরদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান ও ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। মামলায় বেগম খালেদা জিয়া খালাস পাবেন।
এদিন মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দ্বিতীয় দিনের মত যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী আহসান উল্লাহ। তিনি কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে আজ যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।
মামলায় বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ তিনজন পলাতক থাকায় আইন আনুযায়ী তাদের পক্ষে যুক্তি উপস্থানের সুযোগ নেই।
বুধবার( ২৪ জানুয়ারি) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন আইনজীবী আহসান উল্লাহ। এরপর মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন তিনি। তার যুক্তি উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের জন্য আজ (বৃহস্পতিবার) দিন ধার্য করেন আদালত।
শরফুদ্দিননের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয় ১৬ জানুয়ারি। এরপর যুক্তি শেষ না হওয়ায় ১৭, ১৮, ২২, ২৩ ও ২৪ যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী।
২০ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। এরপর ২১, ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর এবং ৩, ৪, ১০, ১১ ও ১৬ জানুয়ারি খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা।
এর আগে ১৯ ডিসেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় একটি মামলা করে দুদক। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটি এর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।