ডেস্ক: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ‘অসমাপ্ত’ কাজ দ্রুত গতিতে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।
একই সঙ্গে উত্তর সিটি নিয়ে তার বেশকিছু যুগোপযোগী নতুন পরিকল্পনা আছে বলেও জানান তিনি।
গুলশানের একটি কার্যালয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া বিএনপির নির্বাহী কমিটির এই তরুণ সদস্য বলেন, গত নির্বাচনের আগেও আমি একটি যুগোপযোগী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম। এবারও আরও কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে আদর্শ ঢাকা সিটি গড়ার লক্ষ্যে ইশতেহার দেব। সেটা ধরেই কাজ করব।
সেক্ষেত্রে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক যেসব ইতিবাচক প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে ওইসব প্রকল্পকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাব। আর তিনি যেসব উদ্যোগ নিতে পারেননি সেগুলো নিয়ে আমি কাজ করব। ঢাকার নাগরিকদের একটি সুন্দর সিটি উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে উত্তর সিটিকে নিয়ে আমার নতুন কিছু চিন্তাভাবনাও আছে।
সেগুলো আমি আমার ইশতেহারে ঘোষণা করব। এই মুহূর্তে করছি না, কৌশলগত কারণেই। বিগত সিটি নির্বাচনেও আপনি লড়েছেন, এবারও লড়ছেন। কেমন সাড়া পাচ্ছেন এমন প্রশ্নে তাবিথ আউয়াল বলেন, তফসিল ঘোষণা হওয়ার আগে থেকেই আমি বিএনপিসহ অন্যান্য দল এবং সর্বস্তরের মানুষের সাড়া পাচ্ছি। এ
টা আমার জন্য নয়, নতুন আইনে দলীয়ভাবে নির্বাচন হচ্ছে। দলীয় প্রতীকও পাচ্ছি। এক্ষেত্রে যে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, সেই দল থেকে আমি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এখন আনুষ্ঠানিক প্রচারের অপেক্ষায় আছি। নির্বাচন কমিশনের বিধি মোতাবেক প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামব। বিএনপি গণতান্ত্রিক দল।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতীক পাওয়ার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামবে। অতীতের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে তাকালে কি মনে হয়, সরকার ও নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে? এ প্রশ্নে বিএনপির তরুণ প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, অতীত অভিজ্ঞতাকে মনে রেখেই সামনে এগোচ্ছি।
বিগত সিটি নির্বাচনে কীভাবে ভোট ডাকাতি হয়েছে তা সবাই দেখেছে। কেন আমরা নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হলাম তাও জনগণ জানে। এখন নির্বাচন কমিশন যতটুকু আশ্বাস আমাকে দেবে, সেভাবেই আমার গতি বাড়বে। আমি আশা করি, নতুন নির্বাচন কমিশন অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে। নতুন কমিশন আশ্বাস দিয়েছে, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবে। সব দলকেই সমান সুযোগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রেখেই আমি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আশা করছি। তারা যদি ফেয়ার নির্বাচন না করেন, তাহলে তা গণমাধ্যমের মাধ্যমে সবাই দেখবে।
বিগত নির্বাচনে ভোটের দিন সাড়ে ১০টায় নির্বাচন বর্জন করেছিলেন, এবার কি তেমন কিছু হতে পারে এমন প্রশ্নে তাবিথ আউয়াল বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেলে নির্বাচন বর্জনের প্রশ্নই ওঠে না। অতীত নির্বাচনের আগে যেভাবে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছিল, ভোটের আগের দিন যেভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের সিল মারাসহ ব্যালট পেপার প্রবেশ করানো হয়েছিল, আমি যেভাবে প্রিসাইডিং অফিসারের হাতেনাতে সিলমারা ব্যালট দেখেছি, তারপরও নির্বাচন কমিশনকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখেনি। কোনো অভিযোগই আমলে নেয়নি ইসি।
আমি শুধু একাই নই, আওয়ামী লীগ বাদে সব দলের মেয়র প্রার্থীরাই নির্বাচন বর্জন করেন। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ লাখের ওপরে ভোট আছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কত ভাগ ভোট পাবেন বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নে তাবিথ আউয়াল বলেন, আমি আশা করি, মোটামুটি সুষ্ঠু হলে যতগুলো ভোট কাস্ট হবে, তার ৬০ ভাগ ভোট আমি পাব ইনশা আল্লাহ।
প্রতিপক্ষের প্রার্থী তো ইতিমধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তাবিথ আউয়াল বলেন, আমি দেখেছি, প্রতিপক্ষের প্রার্থী প্রচারণায় নেমেছেন। পার্থক্য এইটুকু, তিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। সরকারি দলের বাইরের প্রার্থীরা এটা পারতেন না। নইলে নির্বাচন কমিশন নোটিস জারি করত। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় ইসি চুপচাপ।
তাই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, নির্বাচন কমিশন কোনো দলের প্রতি আনুগত্য দেখাচ্ছে কি-না। ক্ষমতাসীনরা অনেক কিছুই করতে পারেন। সেটা আমরা পারি না, করতে চাইও না। এ বিষয়টি আমি নোটিসে আনব নির্বাচন কমিশনের কাছে। দেখি কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়।
ভোটারদের উদ্দেশে কোনো বক্তব্য আছে কি? তাবিথ আউয়াল বলেন, ভোটারদের উদ্দেশে আমার বক্তব্য, আপনারা নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। বিএনপির আন্দোলনও কিন্তু জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার। তাদের চাহিদা মোতাবেক মেয়র নির্বাচন হতে পারে সেটাই চাওয়া। বিডি প্রতিদিন।
এসএস/