বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর জন্য পাহাড় কেটে পথ তৈরি করছেন এক বাবা। ভারতের ওড়িশার জলন্ধর নায়ক তার গ্রাম থেকে প্রধান সড়ক পর্যন্ত রাস্তাটি তৈরি করতে টানা দুই বছর প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ধরে অমানুষিক পরিশ্রম করছেন।
নায়কের নিজের গ্রাম গুমশাহি থেকে ওড়িশার কান্ধামাল জেলার ফুলবানি টাউনের প্রধান সড়ক পর্যন্ত রাস্তাটির দৈর্ঘ্য হবে ১৫ কিলোমিটার। জনস্বার্থে কাজ করার জন্য স্থানীয় জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যেই নায়ককে পুরস্কৃত করেছে।
৪৫ বছর বয়সী জলন্ধর নায়ক নিজে কোনো দিন লেখাপড়া করেননি। কিন্তু, স্কুলে যেতে তার তিন ছেলেকে যেভাবে পাহাড় ডিঙাতে হয়, তা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি আদিবাসী সব্জি বিক্রেতা জলন্ধর। তাই প্রত্যেক দিন ৮ ঘণ্টা ধরে হাতুড়ি, শাবল, গাঁইতি নিয়ে ‘পর্বতপ্রমাণ বাধা’-কে ভেঙেছেন জলন্ধর।
গত ২ বছরে ৮ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি সম্পন্ন করেছেন জলন্ধর। আগামী ৩ বছরে তিনি আরো ৭ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ শেষ করার আশা করছেন বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
এরআগে ভারতের বিহার রাজ্যের ‘মাউন্টেনম্যান’ দশরথ মাঝি ২২ বছর ধরে পাহাড় কেটে ১১০ মিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা তৈরি করেন। মাঝির রাস্তা তৈরির খবরটি বিভিন্ন দেশের মিডিয়ায় ব্যাপকালচিত হয়। মাঝির কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে বলিউডেও একটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে।
তবে জলন্ধর নায়কের এই অসাধারণ কাজের কথা এতদিন তেমন কেউ জানতেন না। ৯ জানুয়ারি কান্ধামাল জেলার কালেক্টর ব্রুন্ধা ডি জলন্ধরকে পুরস্কৃত করার পরই এই খবর ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
ব্রুন্ধা ডি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তারা জলন্ধর নায়ককে ‘একশ দিনের কাজ’ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করবেন।
উল্লেখ্য, যোগাযোগের করুণ অবস্থার জন্য এর আগেই ফুলবানি এলাকা ছেড়েছে সকলেই। বর্তমানে ওই এলাকায় কেবল বসবাস করছে জলন্ধর নায়কের পরিবারই। ফলে, জলন্ধর শুধু পাহাড় ভেঙে শিক্ষার আলোই আনেননি বরং এলাকার সার্বিক যোগযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটিয়েছেন।
জলন্ধরের দেখানো এই পথ অনুসরণ করে ওই এলাকাকে সার্বিকভাবে সড়ক পথে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হবে বলেও নিশ্চিত করেছে জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন। পরিবর্তন ডটকম।