আওয়ার ইসলাম: কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে গত রোববার এক অভিভাবককে এভাবেই দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করেন দুই শিক্ষক ও তাঁদের সহযোগীরা।
ভুক্তভোগী অভিভাবকের নাম আয়াত উল্লাহ। তিনি খরুলিয়া ঘাটপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
আয়াত উল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, তাঁর ছেলে খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় তাঁর ছেলের কাঙ্ক্ষিত ফল হয়নি। বিষয়টি জানতে তিনি ছেলের স্কুলে যান।
সেখানে গিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিনের কাছে জানান, তাঁর ছেলের ফল কাঙ্ক্ষিত হয়নি, কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে কি-না তা জানতে চান। এ ছাড়া পূর্বঘোষণা ছাড়া ভর্তি ও মাসিক ফি বাড়ানোর বিষয়টিও জানতে চান আয়াত উল্লাহ।
এ নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে আয়াত উল্লাহর কথাকাটাকাটি হয়। এ সময় পার্শ্ববর্তী খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হককে ডাক দেন বোরহান উদ্দিন। তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। ঘটনার সময় আয়াত উল্লাহ একা ছিলেন।
হাতাহাতির একপর্যায়ে বোরহান উদ্দিন তাঁকে ধাক্কা মারেন। এতে আয়াত উল্লাহ মাটিতে পড়ে গেলে রশি দিয়ে তাঁর হাত ও পা বেঁধে ফেলা হয়। তারপর ওই দুই শিক্ষকসহ তাঁদের লোকজন আয়াত উল্লাহকে মারধর করতে থাকেন। আয়াত উল্লাহকে লাথি ও থুতু মারেন শিক্ষক জহিরুল হক ও বোরহান উদ্দিন। চড়-থাপ্পড়ও মারেন তাঁরা।
ঘটনার পর থেকে ওই শিক্ষকরা ভুক্তভোগীকে হুমকিও দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনার পর রোববার রাতেই অভিযান চালায় পুলিশ। তবে কাউকে আটক করতে পারেনি। ঘটনায় জতিড়দের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয় লোকজন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অভিভাবক আয়াত উল্লাহকে এমনভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, যেন তিনি বড় ধরনের কোনো অপরাধ করেছেন। পরে আয়াত উল্লাহর চিৎকার শুনে পথচারীরা গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন।
আয়াত উল্লাহ বলেন, ‘আমার ছেলের কাঙ্ক্ষিত ফল কেন হয়নি, কোন যুক্তিতে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বাড়ানো হয়েছে—জানতে চাওয়ায় আমার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। দুই শিক্ষকই এ ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। মাস্টার জহিরুল হক, মাস্টার নজিবুল্লাহ, নুরুল হকসহ আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষক সরাসরি জড়িত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক বলেন, ‘আয়াত উল্লাহ আমাদের স্কুলের ছাত্র ছিলেন। বেয়াদবি করায় তাঁকে এমন শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এমনকি আর কোনো দিন বেয়াদবি করবেন না মর্মে মুচলেকায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
একজন অভিভাবককে হাত-পা বেঁধে মারধর করার বিষয়ে জানতে চাইলে জহিরুল হক ঘটনার সঙ্গে নিজেকে জড়িত নয় দাবি করে বলেন, ঘটনাটি ক্ষুব্ধ লোকজন ঘটিয়েছেন।
আরেক শিক্ষক বোরহান উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করলে ওপার থেকে নিজেকে বোরহান উদ্দিন নয় দাবি করে বলেন, ‘ভর্তি ফি-মাসিক ফি ইত্যাদি বিষয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মতে হয়। আমাদের কাছে জানতে চাওয়ায় আয়াত উল্লাহকে কমিটির কাছে যেতে বলা হয়। তাতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে যান।’ এর পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন ওই ব্যক্তি। নিজের সঠিক পরিচয় দিতেও অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরে একই ব্যক্তি কল করে বলেন, ‘এটি বোরহান স্যারের নম্বর। কল দিলে বিস্তারিত জানবেন।’ কিন্তু ওই নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তা রিসিভ হয়নি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নোমান হোসেন বলেন, শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন আচরণ আশা করা যায় না। বড় মাপের কোনো অপরাধীকেও এভাবে শাস্তি দেওয়ার বিধান নেই। এটি চরমভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা দরকার।
এনটিভি