রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

বেদাত ও কুসংস্কারের আখড়া হয়ে উঠল সওয়াবের পূণ্যভূমি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মাহবুবুর রহমান: ‘গাজীর ভূঁই'৷ ভালোমন্দ অনেক মানুষের পরিচিত শব্দ৷ দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী জেলা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া-মোল্লাদী গ্রামের মধ্যবর্তী একটি জমির নাম৷

জমিটি নিতান্তই ছোট৷ যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কাল্পনিক, অবান্তর, অবাস্তব অনেক কথা৷ বহু বানোয়াট কাহিনি৷ গল্প ও ইতিহাস৷ আর সে সূত্র ধরেই এ জমিটির নাম ‘গাজীর ভূঁই৷'

কে এই গাজী? কী তার পরিচয়? কোথায় তার বাড়ি? কেনোই বা সে এসেছিলো এখানে? বর্তমানে কোথায়? কে রেখেছিলো এ নামটি? এসব প্রশ্নের সঠিক কোনো জবাব আজও অবধি মেলেনি ভক্ত কিংবা বিশ্বাসী কারোর কাছ থেকে৷ কেউ দিতে পারে না নির্ভরযোগ্য তেমন কোনো তথ্য৷

তবে জমিটিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন পর্যন্ত চলছিলো বেদাত-শিরকের রমরমা আয়োজন৷ নাচ-গানের আসর৷ প্রতি বছর মাঘ মাসের এক তারিখ থেকে শুরু হতো একটি কুসংস্কারধর্মী মেলা৷ তিনদিনের কথা থাকলেও দিনরাত একাকার করে চলতো গোটা কয়েক দিন৷ লাভবান হতো ব্যবসায়ীরা৷ জুয়ায় অভ্যস্থ হতো মুসলিম যুবসমাজ৷

তরুণ-তরুণীদের প্রলুব্ধ করার জন্য মেলায় থাকতো নানান রকমের আয়োজন৷ তাইতো মেলা শুরু হলে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী ও নারী পুরুষের ঢল নামতো এখানে৷ পুরুষ-মহিলাদের ব্যাপক উপস্থিতিতে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতো হরদম৷ ভ্যান, রিক্সা ও গাড়ির জ্যামে বন্ধ হয়ে যেতো মাইলকে মাইল পথ৷ প্রায় দুরূহ হয়ে ওঠতো সাধারণ জনজীবন৷

এ দিনে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসতো মানুষ৷ হিন্দু-মুসলিম সবারই অনেক বিশ্বাস ও ভালোবাসার জায়গা ছিলো এটি৷ জমিটির এক প্রান্তে ছিলো একটি গর্ত৷ আশা ও নিরাশার মানত পূরণ করা হতো যাতে৷ ঢালা হতো মণকে মণ দুধ৷ তাছাড়া হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের মানত পূর্ণ করা হতো এখানটাতে৷ নানান বিশ্বাসে যত্নসহ মানুষ নিয়ে যেতো মাটি৷ তাইতো ধীরে ধীরে বড় আকারের রূপ নিলো গর্তটি৷ সেই সঙ্গে বাড়লো ভক্তি ও ভক্তকূল৷

বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চিন্তিত ছিলেন এলাকার আলেম-ওলামা, সুধীসমাজ৷ এর বিকল্প কোশেশে ধাপে ধাপে চেষ্টাও করেছেন অনেকে৷ দোয়া, মোনাজাতে চোখের জল ফেলেছেন আল্লাহর কাছের লোকেরা৷ যতো বাধা ততো আবেগ৷ মজবুত হচ্ছিলো তাদের কার্যক্রম৷ পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছিলো তারা৷ তখন সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছিলো৷

২০১৫ সালের কথা৷ গাজীর ভূঁইকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা নিয়ে মাঠে নামলেন একদল তরুণ-নবীন আলেম৷ ইখলাস ও তাকওয়াকে সম্বল করে এগোলেন অনেকটা পথ৷ সীমাহীন ত্যাগ-তিতীক্ষা, মেহনত ও কুরবানির বিনিময়ে দীর্ঘদিনের আশার আলো জ্বালতে বদ্ধপরিকর বনেছেন৷ মানুষের আত্মার আকুতি, হৃদয়ের মিনতি পূরণ করতে কোশেশ করেছেন নিরলস৷ শিরকের দুর্গন্ধ থেকে সুন্নতের সুবাতাস বইছে আজ গাজীর ভূঁইয়ে৷

এইতো দিন কয়েক বাদে আরম্ভ হবে মাহফিল৷ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে অন্যরকম এক উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে ইতোমধ্যেই৷ তিনদিনের সামানাপত্র সঙ্গী করে তৈরি হচ্ছে জোরে শোরে৷ বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দিচ্ছে মাহফিলের৷ বাহারি খাবারের আয়োজন চলছে ধুমধামে৷ ঈদের মতোনই আনন্দ অনুভব করছে যেনো৷ মাহফিলের সফলতার জন্য হয়েছে অনেক দোয়া, রোনাজারি৷ হাজারো মানুষের রোজা, নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সদকার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার দরবার থেকে কবুল করে নিয়েছে গাজীর ভূঁইকে৷

চলছে মাহফিল বছর কয়েক৷ বেশ লোকের সমাগম হয় এখানে৷ সবাই যেনো অপেক্ষায় থাকে, কবে হবে গাজীর ভূঁইয়ের মাহফিল৷ আমন্ত্রিত থাকেন দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম৷ যাঁদের পদধ্বুলিতে গাজীর ভূঁই যেনো গর্বে টইটম্বুর থাকে৷ আনন্দে উৎফুল্য রবরব সাজে৷ বরণ করে নেয় স্বাগত জানিয়ে৷ সজীব হয়ে ওঠে যেনো গাছগাছালি৷ যেনো আনন্দের সুর তোলে পাখপাখালি৷

বহুদূর থেকে জামাতবন্দি হয়ে ছুটে আসে মানুষ৷ তাকবিরের নারায় ধ্বনিত ময়দান৷ ভেসে আসে সুমধুর আজান৷ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিশাল জামাত মশগুল নামাজে৷ উলামায়ে কেরামের হৃদয় নিংড়ানো আলোচনায় প্রাণবন্ত হয় আমজনতার প্রাণ৷ খুঁজে পায় আলোর দিশা৷ প্রার্থনা রইলো তাঁরই দরবারে৷ যেনো তিনি এবারও কবুল করেন এই মহতি মাহফিলকে৷ বরাবরের মতোনই এর মাধ্যমে আলোর পথ দেখান আমাদের সবাইকে৷

উল্লেখ্য, জানুয়ারির ১২, ১৩, ১৪ তারিখ এবারের মাহফিল৷ দিনগুলি হচ্ছে শুক্র, শনি, রোববার৷

মাহফিলে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে রয়েছেন, মুফতি রুহুল আমিন (সাহেবজাদা, সদর সাহেব হুজুর রহ.), মুফতি আবদুর রউফ (ঢাকার হুজুর), মুফতি ফয়জুল করিম (চরমোনাইর পীর সাহেব), মাওলানা আবদুল কুদ্দুস (পরিচালক, ফরিদাবাদ মাদরাসা, ঢাকা), মাওলানা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান (হাজি শরিয়তুল্লাহ রহ.-এর সপ্তম পুরুষ), মুফতি আবদুল গাফফার (শিক্ষাসচিব, ঢালকানগর মাদরাসা, ঢাকা), মুফতি নুরুল আমিন (পীর সাহেব, খুলনা), মুফতি মাকসুদুল হক (উস্তাজুল হাদিস, গওহরডাঙ্গা মাদরাসা), মাওলানা আবদুল্লাহ মোস্তফা৷

No automatic alt text available.


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ