মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ
প্রিন্সিপাল, মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা
বিবাহ অনুষ্ঠানে গান-বাজনা হয় এটাই আমাদের দেশের চিরায়ত চিত্র। কিন্তু যদি শোনেন বিবাহ উপলক্ষ্যে তাফসীর মাহফিলের আয়োজন! তখন নিশ্চিতভাবেই আয়োজক ও বর-কনে'র প্রতি ভরপুর দোআ আসবে। আমার খুব কাছের এক বন্ধু নূরুল আলম ভাই। আলম ভাই বলে ডাকি তাকে।
আলম ভাই টেকনাফের একজন জনদরদী মানুষ। রাজনৈতিক স্বার্থহীন খেদমত করেন গরীব-অসহায়দের। পাগলদের সেবায়ও অনন্য অবদান রয়েছে আলম ভাইর। অভিজাত অনেকগুলি রেস্টুরেন্টের মালিক তিনি। তার রেষ্টুরেন্ট পরিচ্ছন্ন ও সু-স্বাদু খাবারের জন্য বিখ্যাত।
সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সাইফি ভাইর মাধ্যমে পরিচয় হয় আলম ভাইর সাথে। সাইফী ভাইর ব্যাপারে তো অনেক আগেই বলেছি। নিরহংকার, বিচক্ষণ ও শান্ত প্রকৃতির অমায়িক একজন মানুষ সাঈফী
আলম ভাই ফোন দিলেন-
হুজুর! এক সপ্তাহ'র মধ্যে জরুরী ভিত্তিতে একটা তারিখ লাগবে।
এটা কিভাবে সম্ভব ভাই!
সম্ভব করতে হবে হুজুর! বিবাহ উপলক্ষ্যে মাহফিল। তারা বলেছে আপনাকে এনে দিতে পারলে গান করবে না। হুজুর নতুন সিস্টেমটা একবার চালু করে দিন। দেখাদেখি অন্যরাও একসময় বিবাহে আর গান-বাজনা করবে না।
[caption id="" align="alignnone" width="604"] বরের জন্য দোয়া করছেন মুফতি হাবিবুর রহমান মিসবাহ[/caption]
বললাম- সাইফী ভাইর সাথে আলোচনা করে দেখুন। ১লা জানুয়ারী'১৮ টেকনাফে মাহফিল আছে। মুফতী জাফর ভাইর মাহফিল। সাইফী ভাইর মাধ্যমে হয়েছে। উভয়ের সাথে পরামর্শ করে দিতে পারলে ঐদিন বাদ মাগরিব দিতে পারেন।
সাইফী ভাই ফোন দিলেন 'প্রোগ্রাম চূড়ান্ত'। ফোন দিলেন আলম ভাইও। ১/১/১৮ মাগরিবের পূর্বেই টেকনাফ পৌঁছি। কক্সবাজারের অন্যতম বড় ও পরিপাটি মার্কেটটা টেকনাফেই অবস্থিত। 'আলো শপিং কমপ্লেক্স'। মালিক আব্দুল্লাহ ভাই।গত বছর মার্কেটের সামনে আমার বয়ানের পর হতে আহমদুল্লাহ ভাই টাখনুর নিচে লুঙ্গী-পাজামা পড়েন না।
আব্দুল্লাহ ভাই মার্কেটের সাথেই একটা আবাসিক হোটেল করেছেন। সেরকম একটা হোটেল হয়েছে। কক্সবাজারের ভিআইপি হোটেলগুলির সাথে তুলনা করার মতো সবকিছুই আছে হোটেলটাতে। অবস্থান করি আব্দুল্লাহ ভাইর হোটেলে। দুদিন ধরে বৃষ্টি। পুরো কক্সবাজারজুড়ে বিরতিহীন বৃষ্টি চলছে।
বাদ এশা আলোচিত সেই মাহফিল প্যান্ডেলে যাই। এতো সুন্দর আয়োজন করেছিলেন তারা, যা অনেক সময় নিয়মিত মাহফিল পরিচালনাকারীরাও পারেন না। বেশ বড় প্যান্ডেল করেছিলেন। কিন্তু কী আর করার! পুরো প্যান্ডেলে কাঁদা গিজ গিজ করছে। উপর থেকে পানি পড়ছে।
বরের বাবা এসে বললেন- হুজুর একটু দোআ করে দিন। আমিও তাকে শান্তনা দিয়ে উপস্থিতিদের নিয়ে দোআ করলাম। বিদায়বেলা ছেলের বাবা বললেন- হুজুর সময় দিলে সামনে আরো বড় আকারে একটা আয়োজন করবো ইনশাআল্লাহ। আমিও পজিটিভ আশ্বাস দিয়ে দ্বিতীয় মাহফিলে রওয়ানা হলাম।
মুফতী জাফর ভাইও বিশাল আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টিতে সব পন্ড। পাশে বড় একটা মসজিদে লোকজন জড়ো হলো। তাও মানুষের চাপ ছিলো চোখে পড়ার মতো। 'নফল ইবাদাত' ও 'মানুষের জীবনের প্রকারভেদ'র উপর ঘন্টা দেড়েক বয়ান করে বিদায় নেই। জাফর ভাইর বাসার আপ্যায়নটা ছিলো রাজকীয় আপ্যায়ন।
লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে
এসএস/