নূরুল জান্নাত মান্না, পাকুন্দিয়া প্রতিনিধি(কিশোরগঞ্জ)
স্বাধীন বাংলাদেশের ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিস্তৃত দীর্ঘ সীমান্ত রক্ষার কাজে যারা বিভিন্ন সময়ে আত্মত্যাগ করেছেন।
যারা নিজের জীবনকে দেশের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন। কেউ বা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছেন এখনো। সেই সকল বীর সেনানীদের অবদানের কথা কতটুকু মনে রাখতে পেরেছি আমারা? কিংবা আমাদের সরকার!
সরকার কি পেরেছে সেই সকল সৈনিকদের দুঃখের অংশীদার হতে? তাদের অসহনীয় দুঃখ যন্ত্রণা কেউ কি উপলদ্ধি করতে পেরেছে ? এখনো অনেক বীর সেনানী ধুকে ধুকে জীবন যুদ্ধে লড়াই করছেন।
পঙ্গু হওয়ার কারণে না পারছে তাদের জীবন কর্মমূখী করতে না পারছে তাদের পরিবারের ভরণপোষণ করতে। এমন’ই একজন বীর সেনানী কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাংগালিয়া ইউনিয়ের তারাকান্দি গ্রামের মৃত হাফেজ রমজান আলীর পুত্র আবুল কাশেম।
তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস্ (বিডিআর) এ চাকুরী করতেন তিনি।চাকুরীরত অবস্থায় তিনি খুব নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। সাহসিকতার জন্য বিভিন্ন পুরস্কার ও পদক প্রাপ্ত হন আবুল কাশেম।২০০৭ সালে চাকুরী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৯৬ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে দায়িত্বরত অবস্থায় মায়ানমারের নাসাকা বাহিনীর পুতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে তার দুটি পা হাটুর নিচ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পরবর্তীতে এ সাহসীকতার জন্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে তৎকালীন বাহিনীর সর্বোচ্চ সম্মান সূচক পদক ‘প্রেসিডেন্ট রাইফেলস্’ পদকে ভূষিত করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর একান্ত হস্তক্ষেপে যুদ্ধাহত আবুল কাশেমের চিকিৎসা সম্পন্ন হয়। তার চলাফেরার জন্য সরকারীভাবে তাকে দুটো কৃত্রিম পা দেওয়া হয়।
[caption id="" align="alignnone" width="604"] বিভিন্ন সময় পুরস্কার পাওয়া সংরক্ষিত পদক[/caption]
অবসর গ্রহণের পর থেকে পেনশন ভাতা ছাড়া আর কোন আর্থিক সহযোগীতা পাননি তিনি।তার চলার শেষ সম্বল দুটো কৃত্রিম পা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাওয়ার পরও বিভিন্ন আবেদন করা সত্বেও সরকারী ভাবে সাড়া পাননি।
অনেকবার প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। তার অব্যক্ত অনেক কষ্টের কথা বলতে চান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত কামনা করেছেন।
আবুল কাশেমের একমাত্র ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী রাকিবুল হাসান হৃদয় জানান, ২০০৭ সালে অবসর গ্রহণ করার পর থেকে সরকারীভাবে কেউ আমার বাবার খোঁজ খবর রাখেনি।
এমনকি চাকুরীরত থাকাকালীন সামান্য যে পঙ্গুভাতা পেতেন তাও বন্ধ হয়ে যায়।অবসর গ্রহণের পর থেকে পরিবারে কোন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় আর্থিক দুরাবস্থা দেখা দিয়েছে।যার ফলে তিনি তার বসতভিটা টুকুও একবছর আগে বিক্রয় করতে বাধ্য হন।
বয়স হওয়ার দরুণ মাইন বিস্ফোরণে আহত শরীর নিয়ে বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী। রাকিবুল হাসান হৃদয় আরো জানান, মৃত্যুর আগে আমার যুদ্ধাহত বাবার শেষ ইচ্ছা, অন্তত একটি বারের জন্যও যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ হয়।
এসএস/