রোকন রাইয়ান: আসামে প্রকাশিত নাগরিক তালিকার প্রথম খসড়া রোববার রাতে প্রকাশ হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি বাদ পড়েছে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামও।
মঙ্গলবার কলকাতার এডিটিএন বাংলা নামের একটি পত্রিকা এক প্রতিবেদনে বলেছে তালিকায় অনেক সাংসদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতার নাম বাদ পড়েছে। এদের মধ্যে দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিসে শুরা সদস্য ও লোকসভার সদস্য মাওলানা বদরুদ্দিন আজমলও রয়েছেন।
তালিকায় স্থান না পাওয়াদের অভিযোগ, আমরা আতঙ্কিত।বহু মানুষের নাম নেই। শুনছি, এখনও তালিকা প্রকাশিত হবে। কিন্তু তারা কী চক্রান্ত করছেন তা জানা মুশকিল।
খবরে প্রকাশ, প্রথম প্রকাশিত নাগরিক তালিকায় নাম বাদ পড়েছে বিধায়ক নজরুল হক, প্রাক্তন বিধায়ক আবু তাহের ব্যাপারি। অনেক হিন্দু বিধায়কও বাদ পড়েছেন।
তালিকা থেকে বাদ পড়া অন্যান্য মুসলিম নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, সাংসদ সিরাজুদ্দিন আজমল, আমসু সভাপতি আজিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আইনুদ্দিন আহমেদ, বিধায়ক আমিনুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, নিজামুদ্দিন আহমেদ, শুক্কুর আলী, শোরমান আলী।
এছাড়াও রাজ্য সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করেন এরকম বহু নেতার নাম বাদ পড়েছে। যদিও রাজ্য থেকে বলা হয়েছে পরবর্তীতে আরও নাম তালিকায় যুক্ত হবে। কিন্তু তাতে আতঙ্ক কাটছে না নাম বাদ পড়াদের। কেউ কেউ নিজেদের অবস্থা আরাকানের রোহিঙ্গাদের মতো হয় কিনা সে আতঙ্কেও ভুগছেন।
বহুল আলোচিত এ নাগরিক পঞ্জি’র (এনআরসি) প্রথম দফার খসড়ায় স্থান পেয়েছেন ১ কোটি ৯০ লাখ নাগরিক। বাকি ১ কোটি ৩৯ লাখ নাগরিকের নাম বাদ পড়েছে।
আসামের রাজনীতিতে প্রদেশটির ৩৪ ভাগ সংখ্যালঘুর অবিসংবাদিত নেতা মাওলানা বদরুদ্দীন আজমল। তিনি ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের নেতা এবং লোকসভায় ধুবরি থেকে নির্বাচিত সদস্য।
তিনি এর আগে এক ভাষণে বলেছিলেন, আসামের সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে কংগ্রেস বা বিজেপি কারও পক্ষেই রাজ্য সরকার গঠন করা সম্ভব হবে না।
তিন রাজ্য সরকারকে এটাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, আমরা কতগুলো আসনে জয়ী হবো সেটা বলতে চাই না। তবে আমাদের বাদ দিয়ে কোনো সরকার হওয়ার মতো নয়।
মাওলানা আজমলের দলটির বয়স মাত্র ১২ বছর হলেও ৩৪ ভাগ মুসলমানের মধ্যে তার নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ হলো বৃহত্তম। ২০১১ সালের নির্বাচনে তার দল ১১টি আসন পেয়েছিল।
মাওলানা বদরুদ্দীন আজমলের জন্ম ১৯৫০ সালে আসামে। আসাম বিধান সভায় দক্ষিণ সালামারা ও যমুনামুখ আসন থেকে তিনি একত্রে দুটি আসনে জয়ী হন ২০০৬ সালে।
২০১১ সালের নির্বাচনে তিনি ১৮টি আসন নিয়ে আসামের বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা হন। তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিসে শুরার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ধর্মতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মাওলানা আজমল জর্দানের রয়্যাল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টারের ২০১৫-১৬ সালে বিশ্বের সব থেকে ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিমের তালিকায় ছিলন।
মাওলানা বদরুদ্দীন আজমলের পারিবারিক ব্যবসা পারফিউম বা সুগন্ধি আতর। দুই হাজার কোটি রুপি নিয়ে এ ব্যবসা ভারতে বেশ নাম কুড়িয়েছে। তার কোম্পানির আজমল আতর সারাবিশ্বেই বিখ্যাত।
অসমে নাগরিক তালিকায় নাম নেই ১ কোটি ৩৯ লাখের, কী হবে ওদের?