হামিম আরিফ: ভারতের বিজেপিশাসিত অসমে বহুল আলোচিত ‘জাতীয় নাগরিক পঞ্জি’র (এনআরসি) প্রথম দফার খসড়া প্রকাশের পর দেখা গেছে সেখানে স্থান পেয়েছেন ১ কোটি ৯০ লাখ নাগরিক। বাকি ১ কোটি ৩৯ লাখ নাগরিকের নাম বাদ পড়েছে।
রোববার দিবাগত রাত ১২ টায় ওই খসড়া প্রকাশ করেন ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল শৈলেশ। খবর পার্সটুডের
প্রকাশিত এ খসড়া তালিকা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ওই ১ কোটি ৩৯ লাখ নাগরিক। যদিও রাষ্ট বলছে পরবর্তীতে তাদের নাম সংযোজন করা যাবে। কিন্তু এতে আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকেই।
প্রথম খসড়ায় ২ কোটি ২৪ লাখ আবেদন নিষ্পত্তির লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলেও ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল শৈলেশ বলেন, মধ্যরাতে প্রকাশিত প্রথম খসড়ায় ১ কোটি ৯০ লাখের নাম স্থান পেয়েছে। বাকি নাম পরে ঘোষণা হবে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আসামের মুসলিম নেতারা। রাজ্য জমিয়তের নেতা মাওলানা আবদুল কাদির কাসেমি বিষয়টির নিষ্পত্তিতে আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন হলে তাই করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
বলেছেন, নির্দিষ্ট সমস্ত প্রক্রিয়া পালন করার পরেও যদি আমাদের চোখে ধরা পড়ে উপযুক্ত নথি থাকা সত্ত্বেও কোনো ভারতীয়'র নাম এনআরসিতে ঢোকানো হয়নি তাহলে প্রয়োজনে আগের মতো আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।
অবশ্য অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেছেন, এনআরসি'র প্রথম খসড়ায় নাম না থাকলেও পরবর্তী খসড়াগুলোতে প্রমাণপত্রের ভিত্তিতে নাম তোলা যাবে। এ নিয়ে গুজব না ছাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
অসমে এনআরসি খসড়া প্রকাশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় চাপা উত্তেজনা থাকায় ৮৫ কোম্পানি অতিরিক্ত আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে পুলিশের বিশেষ সেল কাজ করছে।
অসমে প্রথম দফায় এনআরসি খসড়া প্রকাশ সম্পর্কে অসম রাজ্য জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক ও দ্বীনি তালিমি বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল কাদির কাসেমি বলেন, অসমে নাগরিক পঞ্জি যেটা বেরিয়েছে তা হল প্রথম ও আংশিক ঘোষণা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে আগে বলা হয়েছিল অনেক লোকের নাম বাদ পড়বে কিন্তু পরবর্তীতে তাদের নাম উঠবে। সেই হিসেবে এনআরসি’র পরবর্তী যে তালিকা বের হবে তাতে অসম ও ভারতের প্রকৃত নাগরিক জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের নাম আসবে বলে আমরা আশাবাদী।
তিনি বলেন, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অসম রাজ্য জমিয়তে উলামার দাবি, এনআরসি তৈরি ক্ষেত্রে যেসব নথি জমা হয়েছে তাতে যদি সামান্য ভুল থাকে, বিশেষ করে ভোটার তালিকায় নামের ভুল, বানানের ভুল থাকে, বয়সের তারতম্য থাকে সেগুলো দেখে যাতে প্রকৃত ভারতের নাগরিকের নাম বাদ না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ, ভোটার তালিকায় যদি কোনো ভুল থাকে তাহলে কোনো ব্যক্তি সেজন্য দায়ী নন, বরং তালিকা যারা তৈরি করেছেন তাদের ভুল। সেজন্য অন্যের ভুলের জন্য যাতে কোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব নষ্ট না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। আমরা সরকার ও এনআরসি কর্তৃপক্ষের কাছে আগেও আমরা এ নিয়ে দাবি জানিয়েছি। আমরা আশাবাদী আমাদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে সেইমতো কাজ হবে।
এর আগে নাগরিকত্ব ইস্যুতে পঞ্চায়েতের দেয়া প্রমাণপত্র হাইকোর্ট বাতিল করার রায় দিলে তারা এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন বলেও মাওলানা আবদুল কাদির কাশেমি জানান।
আরআর