আওয়ার ইসলাম: গত ২৫ ডিসেম্বর সোমবার জামালুল কুরআন মাদরাসা, গেন্ডারিয়া, ঢাকার তাকমিল জামাতের ছাত্রদের আয়োজনে ‘থার্টি ফাষ্ট নাইট : আমাদের করণীয় শীর্ষক সেমিনার’ অনুষ্ঠিত হয়।
জামালুল কুরআন মাদরাসার মুহতামিম-আরেফ বিল্লাহ হাকিম মুহাম্মদ আখতার রাহিমাহুল্লাহ-এর খলিফা মাওলানা ইমদাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে সূত্রাপুর এলাকার বিভিন্ন মাদরাসার মুহাদ্দিস, মুফতি, শিক্ষক-ছাত্র ও মসজিদের খতিব-ইমামগণ উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মুফতি মুহাম্মদ আমিমুল ইহসান।
প্রবন্ধের ওপর আলোচনা পেশ করেন ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা নজরুল ইসলাম, মুফতি মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান, মাওলানা আবু বকর, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মাওলানা আবদুল আলিম, মাওলানা নোমান, মাওলানা মিজানুর রহমান, মাওলানা ইকবাল প্রমুখ।
সেমিনারে সামাজিক অনাচার দূর করতে ইমাম ও খতিবদের আরো সচেতন ভূমিকা পালন করার জন্য গুরুত্বারোপ করা হয়।
অনুষ্ঠানে পঠিত প্রবন্ধটি আওয়ার ইসলাম পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
অপ-সংস্কৃতির ছোবল: বছরের বিদায় বেলায় একজন মুসলমানের অনুভূতি
আজ ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর সোমবার। একটি বছরের প্রায় সমাপ্তি এবং আরেকটি বছরের সূচনালগ্ন। একটি বছরের শেষ দিকে দাঁড়িয়ে একজন ঈমানদার, আল্লাহ প্রেমিক বান্দার অনুভীতি কী হওয়া দরকার?
পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে আমরা বিষয়টি আলোচনা করতে চাই। প্রত্যহ যখন দিন আর রাত অতিবাহিত হয়, একটি বছর সমাপ্ত হয় তখন মুসলমানদের অনুভূতি কি আনন্দের না বেদনার, না চিন্তার?
একজন আরবি কবি বিষয়টি তার একটি পংক্তিতে খুব চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আরবি ব্যাকরণের বিখ্যাত কিতাব যা সব প্রতিষ্ঠানে পাঠ্য পুস্তক হিসেবে স্বীকৃত “হেদায়েতুন্নাহু”তে একটি উদাহরণ হিসেবে কবিতাটি পেশ করা হয়েছে। আরব কবি তার কবিতায় বলেন-
يسر الناس ما ذهب الليالى
وكان ذهابهن له ذهابا
মানুষকে আনন্দিত করে দিনের পর দিন ও রাতের পর রাতের আগমন। একটি রাতের প্রান্তে দাঁড়িয়ে একজন মানুষ আনন্দিত হয়, নতুন একটি ভোর আসবে, নতুন একটি প্রভাতে সূর্য ঊদিত হবে। নতুন সুর্যোদয়কে দেখার জন্য মানুষ আনন্দচিত্তে অপেক্ষা করে।
কিন্তু কবি বলেন, আমার অনুভূতি একটু ব্যতিক্রম। রাত শেষ হওয়ার পরে নতুন এক ভোর দেখার জন্য প্রফুল্ল চিত্তে আমি অপেক্ষা করতে পারি না। বছর শেষে নতুন আরেকটি বছরকে স্বাগতম জানানোর জন্য আমি আনন্দ
উল্লাস করতে পারি না।
আমার অন্তরের অনুভূতি হলো এটাই, যে দিনগুলি আমার শেষ হয়ে গেল তা তো আমার জীবনেরই একটি অংশ। আমার জীবনের একটি ক্যালেন্ডার যে শেষ হয়ে গেল, আমার জীবনের দালান থেকে ৩৬৫ দিনের ৩৬৫টি পাথর যেন খসে পড়ে গেল। আমার জীবন ছোট হয়ে এল। আমার জন্য এ তো আনন্দের ব্যাপার নয়, আমার জন্য তা চিন্তার ব্যাপার।
আমার হিসাবের ব্যাপার, আমার জীবনের একটি বছর অতিক্রম করেছি। আগামী বছরে পদার্পণ করতে যাব, আমি গত বছর কিভাবে কাটিয়েছি। আগামী বছর কিভাবে কাটাবো, আমার অর্জন কী? আমার হিসাব করার
সময়।
আনন্দ উল্লাসের সময় নয় বরং আমার সময় হলো হিসাব নিকাশের সময়, আমি যে দিবসগুলো কাটালাম, যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমি দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছি, সে উদ্দেশ্যকে আমি কতটুকু সফল করতে পারলাম, আমার জীবনকে সে পথে কতটুকু পরিচালিত করতে পারলাম, এই হিসাব করার সময় আমার এসেছে।
কাজেই একটি বছরের উপসংহারে দাঁড়িয়ে, একটি বা একটি বছরের সর্বশেষ দিনে দাঁড়িয়ে মুমিনের অন্তরে, আল্লাহ প্রেমিকের অন্তরে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, একটি বছরকে তো আমি শেষ করেছি, কিন্তু যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাকে দুনিয়াতে পাঠালেন, সে পথে কতটুকু অগ্রসর হয়েছি? আল্লাহ আমাদের পাঠানোর উদ্দেশ্য বলে দিয়েছেন।
ইরশাদ হচ্ছে- وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
আমি জিন ও মানুষকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।
আমাদের অন্তরে একটি জিজ্ঞাসা, মানুষ আসে কেন? আবার কিছু দিন রং তামাশা করে চলে যায়, কোথায় যায়? দিন যত যায়, রাত যত যায়, বয়স যত বাড়ে একজন বিবেকবান মানুষ তার মনকে এ প্রশ্ন করা উচিত, কেন এলাম, কি করছি, কোথায় যাব?
এই প্রশ্নগুলোকে যারা জীবনের বাঁকে বাঁকে স্বরণ রাখবে, আমি মনে করি তারাই সফল। তারাই বুদ্ধিমান। হাদিসে বুদ্ধিমানের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। রাসূল সা. বলেন-
الْكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ الْمَوْتِ ، وَالْعَاجِزُ مَنِ اتَّبَعَ نَفْسَهُ وَهَوَاهَا وَتَمَنَّى عَلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
বুদ্ধিমান সে ব্যক্তি নয়, যার ব্যাংক ব্যালেন্স বিশাল, যার বিশাল বাড়ি ঘর আছে, প্রচুর ভূমি সম্পদ আছে । আল্লাহর রাসুল তাকে বুদ্ধিমান বলেননি। আল্লাহর রাসুলের প্রদত্ত বুদ্ধিমানের সংজ্ঞা হলো- যে নিজের হিসাব গ্রহণ করে এবং মৃত্যুর পরের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
ওমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর অবিস্মরণীয় উক্তি
ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. একবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা পেশ করছেন, তার বক্তব্য ছিল বাস্তবমুখী ও সুন্দর। তার এই বক্তব্য ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-এর মধ্যে উল্লেখ হয়েছে।
حاسبوا قبل ان تحاسبوا وزنو قبل ان توزنوا
তিনি শ্রোতাদের বললেন, হে বিবেকবান মানুষ! আমি তোমাদের বিবেককে বলতে চাই, হিসাব চাওয়ার পূর্বে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার পূর্বে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও ।
এ বক্তব্যের মর্মার্থ হলো, হে মানুষরা, একটু পরেই তোমাদের হিসাব শুরু হবে, কখন শুরু হবে আমরা জানি না।
তবে তার আগেই যদি হিসাবখানা করে নিতে পারো। ব্যালেন্স শীট ও বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করতে পারো। তাহলে তুমি সফল হবে। তুমি পার পেয়ে যাবে। তোমার হিসাব বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হবে।
মনে করুন, আমি একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব রক্ষক, আমার হিসাব স্বচ্ছ রাখতে হবে। একটু পরেই অডিটররা আসবে। তারা রিপোর্ট চেক করবেন, কোনো জায়গায় যাতে ভুল ধরতে না পারে। আগেই যদি ব্যালেন্স শিট তৈরি করে রাখি, তাহলে হিসাব বুঝিয়ে দিতে আমার পক্ষে সহজ হবে। তাদের সামনে আমাকে ভ্যাবাচেকা খেতে হবে না। প্রশ্নের উত্তর দিতে আমার কষ্ট হবে না।
কারণ, অমি ক্লিয়ার এবং আমার হিসাব স্বচ্ছ। ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, তোমাদের হিসাব একটিু পরেই বুঝিয়ে দিতে হবে। আগেই যদি ব্যালেন্স শিট তৈরি করে রাখ, তুমি কি করেছো সবগুলো একটিু পরেই মাপা হবে। পাল্লায় তোলা হবে। তার পূর্বেই তুমি নিজের পাল্লায় তুলে রাখ।
তুমি কতটুকু আমল করেছো। হ্যাঁ-বাচক আমল কতটুকু আর না বাচক আমল কতটুকু। সবকিছুই আগে তুমি পাল্লায় মেপে নাও। তাহলেই তুমি অনুমান করতে পারবে তোমার স্বর কোথায়?
و تزينوا للغرض الاكبر يوم لا تخفى عليهم خافية
হে মুসলিম, সেজে নাও সুসজ্জিত হও। আমলনামাকে সুন্দর করে নাও বিশাল পাল্লায়, বিশাল ময়দানে সবার আমলকে যেখানে পাল্লায় তোলা হবে, রিপোর্ট কার্ড দেখানো হবে, তার আগে তোমার আমল সুসজ্জিত করে নাও। সেদিন কারো আমলনামা অস্পষ্ট থাকবে না। সবার আমলনামা স্পষ্ট হয়ে যাবে। হযরত ওমরের বক্তব্য অত্যন্ত সুন্দর। বছরের শেষদিনে সকলের ব্যাংকগুলো তাদের ব্যালেন্স শিট তৈরিকরছে।
আজকের এইদিনে এই মুহূর্তে আমি একজন মু’মিন হিসাবে আমার ব্যালেন্সশিট তৈরি করা দরকার। কিভাবে গত জীবন কাটিয়েছি। আমি একদিকে বয়সে বড় হচ্ছি। অন্যদিকে আমার জীবন কেটে যাচ্ছে। বলা যায় আমার বয়স বাড়েনি বরং আমার জীবন ছোট হচ্ছে।
একটা সিগারেট যেমন মানুষ টান দেয়ার কারণে ছোট হয়ে যায়। দিনের আগমন ও রাতের গমনে আমাদের
জীবন সিগারেটের মতো শেষ হয়ে যাচ্ছে। যুগে যুগে নবী রাসূলগণ মানুষদেরকে একথাই বুঝানোর চেষ্টা করেছেন, হে মানুষ! তোমরা অল্প কয়েকদিনের জন্য প্রেরিত হয়েছো। যা করবে তাই পাবে।
ইরশাদ হচ্ছে- فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ ۞ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ
থার্টিফাষ্ট নাইট উদযাপন
২০১৭ ইসায়ির শেষে ২০১৮-এর রাত ১২.০১ মিনিটে কোন মুসলমান নর-নারী থার্টি ফাষ্ট নাইট উদযাপন করার জন্য হোটেল শেরাটনে যেতে পারে না, সোঁনারগাও যেতে পারে না, হোটেল আগ্রাবাদ, রেডিসন, পূর্বানী ও ওয়েষ্টিনে যেতে পারে না, কোনো কনসার্টে যেতে পারে না।
গুলশান-বনানীর কোন অভিজাত হোটেলে তা উদযাপনে ও যেতে পারে না। কোনো গান বাজনায় লিপ্ত হতে পারে না, রাজপথে মদপান করতে নামতে পারে না। যাদের অন্তরে সামান্য ঈমানের আলো আছে, থার্টি ফাষ্ট নাইট তাদের জন্য নয়, তাদের এই দিন মদ পানের জন্য নয়, উল্লাসের নয়। তাদের এই দিন হচ্ছে হিসাব নিকাশের দিন।
যারা ওমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর অনুসারী, ইসলামের অনুসারী, আল্লাহকে যারা ভয় করে, বিগত বছরের প্রান্তে নতুন বছরের সূচনায় তারা নিজের দফতর খুলে বসে হিসাব নেয় কি করেছি? কী করা উচিৎ ছিল? খারাপ কাজের জন্য তওবা করে এবং ভালো কাজের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। সৎ পথে ধাবিত হওয়ার জন্য নতুনভাবে সংকল্প করে।
বাংলাদেশের মত একটি বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রে এ রাতে জায়গায় জায়গায়, বিভিন্ন স্পটে পুলিশ নিযুক্ত করতে হয়। উচ্ছৃঙ্খল ও পথহারা যুবক যুবতীদের জন্য র্যাব নিযুক্ত করতে হয়। তাদের বেহায়াপনায় বাধা সৃষ্টি করতে হয়।
পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর থার্টি ফাষ্ট নাইট উদযাপনের জন্য হোটেল শেরাটনে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। একটি টিকিটের দাম ২২,০০০ টাকা।
হোটেল সোনারগাঁয়ে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এই সকল হোটেলে ভারত, আমেরিকা থেকে নর্তকীরা এসে নাচবে। বাইশ হাজার টাকার টিকিটের ব্যবস্থা যারা করে, তারা জানে “তারা যে বিনিয়োগ করছে তা বিফলে যাবে না।” আমাদের কাষ্টমার অবশ্যই আছে। কনজিউমার আছে ।
প্রতিবছরই এসব টিকিটের দাম বাড়ছে। এই দেশে এমন লোকও আছে যারা একটি রাতকে উদযাপনের জন্য হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে হোটেল শেরাটনে রাত কাটাবেন, মদ পান করবেন, নাচ গান করবেন, নেশা করবেন, জুয়া খেলবেন। আরো বিভিন্ন ধরনের পাপাচারে লিপ্ত হবেন। যারা নায়ক ও গায়ক তাদের এদিন রমরমা দিন।
তাদের বিভিন্ন জায়গায় প্রোগাম থাকে। একরাতে তাদের অনেক প্রোগ্রাম আঞ্জাম দিতে হবে। মহৎকাজ নতুন দিন, নতুন বর্ষকে স্বাগতম জানাতে হবে ।
আমি আলেম, ওলামা ও মুসলমান ভাইয়েরা যারা এখানে উপস্থিত আছেন, তাদরে মাধ্যমে এই দাওয়াত পৌঁছে দিতে চাই, প্রতিটি যুবক ভাইদের বলে দিতে চাই, আমাদের পরিবারের কোনো সদস্য যেন রাতের বেলায় এ ধরনের উলঙ্গপনায় অংশগ্রহনের জন্য ঘর থেকে বের না হয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের যে ধাক্কা দিচ্ছেন সে ধাক্কায় কি আমদের উপদেশ হয় না? সাম্প্রতিক অতীতে
ইন্দোনেশিয়ায় সমুদ্র তলে সামান্য যে কম্পণ তিনি দিয়েছিলেন মাত্র দেড় মিনিটে দুই লক্ষ বনী আদম মারা গেলো। লাশ আর লাশ । দাফন করার কেউ ছিলো না। প্লাষ্টিক পলিথিনে ভরে ভরে তাদের গর্ত করে দাফন করা হয়েছিল। লাশ দাফনের জন্য পরিবারের কেউ ছিলো না।
শ্রীলংকা, ভারত এবং থাইল্যন্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় সমুদ্র তীরে পর্যটনকেন্দ্রে শার্ট প্যান্ট পরে আনন্দ উল্লাস করছিলো মানুষ। আল্লাহ পাক বলেন, তোমাদের আানন্দঘণ এই মুহূর্তে আমি একটু ধাক্কা দিয়ে দেখাতে চাই। আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ ۞ يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ
حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ ۞
হে মানুষ সকল! তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ভয় করো। তোমাদের সতর্ক করার জন্য জমিনকে আমি একটু নাড়া দিতে পারি। এমন নাড়া দিতে পারি যার কারণে যে মহিলা দুধ পান করান তার বাচ্চার কথা ভুলে যাবে। আল্লাহ বলেন, আমি এমন ভূমিকম্প দিতে পারি যার কারণে গর্ভধারিণী মহিলার গর্ভপাত হয়ে যাবে। মানুষ নেশাখোরের মত ছুটাছুটি করবে। অথচ তারা মদ খেয়ে নেশাগ্রস্ত হয়নি।
কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের নাড়ার কারণে সমুদ্র তলদেশকে ছিড়ে আল্লাহ তা’আলা পানিকে যেভাবে উপরে ঠালেন। অবস্থা এমন দাড়ালো যে, গাড়ি চালাচ্ছে রাস্তায় আর গাড়ি চলে যাচ্ছে সমুদ্রে। রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর মানুষ চলে যাচ্ছে সমুদ্রে। আর বাড়ি বিল্ডিং ধ্বসে যাচ্ছে।
আল্লাহর খেলা! আল্লাহ কি না করতে পারেন! আল্লাহ বান্দাকে সতর্ক করতে চান। আল্লাহর নির্দেশকে ভুলে গিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চ্যলেঞ্জ করে যারা উৎসব উল্লাস করবে, আল্লাহ তাদেরকে সতর্ক করেছেন।
ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশ থেকে আরম্ভ করে থাইল্যান্ড এবং আফ্রিকার সোমালিয়া পর্যন্ত আট দশটি দেশকে আল্লাহ তাআলা কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। যারা দেখেছেন তারা বর্ণনা করে বুঝাতে পারবে না। আমাদের দেশে তো খুবই কম হয়েছে।
তারপরও যারা নদী ও পুকুরের পাড়ে ছিলেন তারা অবাক হয়েছেন যে, কি করে পানি উপরে উঠে যায়। মাছগুলি নাড়া চাড়া করে অদ্ভুত এক কান্ড দেখে আমাদের দেশে দুজন মানুষ মারা গেছে। এখানে এই অবস্থা। যেখানে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে, যেখানে লাশের স্তুপ পড়ে আছে, সেখানকার অবস্থাতো কল্পনাও করা যায় না।
সাবধান ! আমি বলতে চাই, মুসলমান ভাইয়েরা একটি বৎসরের শেষ দিনে দাঁড়িয়ে উৎসবে মেতে উঠা নয়, চিৎকার করা নয়, মদ পান করা নয়, রাস্তাঘাটে রমণী নিয়ে বের হওয়া নয়। আমাদের হিসাব করা উচিৎ।
২০০২ ইসায়ি যখন শুরু হচ্ছে, থার্টিফাষ্ট নাইট উদযাপনে যে কেলেঙ্কারী হয়েছিলো, তা আমাদের মনে রাখা উচিৎ। বাঁধন নামের এক ছাত্রীকে যেভাবে দিগম্বর করা হয়েছে, তা ভাবতেও অবাক লাগে।
বাংলাদেশি মুসলমানদের জন্য এটা ছিল কলঙ্ক। একটি মেয়েকে কলঙ্কিত করা হয়নি। বরং একটি জাতিকে কলঙ্কিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের সমাজচিত্রে এধরণের অঘটন আমাদের ললাটে কালিমা লেপন করেছে। আমাদের যে ছবি বহির্বিশ্বে প্রচারিত হয়েছিল, তা ছিল ষোল কোটি মানুষের জন্য লজ্জা।
যারা করেছে তারা হলো, উচ্চতর শিক্ষায়তনের ছাত্রছাত্রী। নিরীহ মানুষরা করেনি। সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের ছাত্ররা করেছে। যারা দেশকে পরিচালনা করবে। যারা প্রশাসনের স্তরে স্তরে বসবে। তাদের আচরণ হচ্ছে এটা।
অতএব মুসলমান ভাইয়েরা ! নিজের পরিবারের ব্যাপারে সতর্ক হোন। থার্টিফাষ্ট নাইট মুসলমানের উৎসব নয় এটা মনে রাখতে হবে। এটা বিজাতীয় উৎসব। বিজাতীয় উৎসবে যারা অংশগ্রহণ করবে, তারা তাদের দলভূক্ত হয়ে যাবে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন من تشبه بقوم فهو منهم
যে অন্য জাতির সাথে আচার আচরণে, কৃষ্টি সংস্কৃতিতে সামঞ্জস্য গ্রহণ করবে, সে তাদের দলে শামিল হবে। আপনি কি চান? থার্টিফাষ্ট নাইট উদযাপনের সময় আপনার কাছে মালাকুল মাউত আসুক। আপনার কাছে কি কোনো গ্যারান্টি আছে, আপনি যখন কোনো হোটেলে যাবেন অথবা রাস্তায় নামবেন, থার্টিফাষ্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে, তখন মালাকুল মাউত আসবে না। আপনি যদি চান নেশাগ্রস্ত অবস্থায় আপনি মারা যাবেন, তাহলে আপনি যা ইচ্ছা করেন আমার কোনো আপত্তি নেই। যদি আপনি চান যে, পাক পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর কাছে যাবেন, তাহলে এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ আপনার নেই।
কারণ, আল্লাহ তাআলাতো থার্টিফাষ্ট নাইট উদযাপনের সময়েও একটু কাঁপন দিতে পারেন। কাজেই আল্লাহ সত্যিকার ভয় করুন। হে মহামহিম ! তুমি আমাদেরকে তোমাকে যথাযথ ভয় করার তাওফিক দান কর। আমিন।
হায় আফসোস মুসলমানদের জন্য! আমরা এমন এক সময়ে হ্যাপি নিউ ইয়ার উদযাপন করছি, যখন মুসলিম জাতিকে নিধন ও এই পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সব কাফির জাতি একাত্মতা পোষণ করে হোয়াইট হাউজে কাফের জাতি পরামর্শ করছে। যার কারণে জাতিসংঘ-এর সব সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে উপেক্ষা করে
জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে ট্রাম্প ঘোষণা দিলো।
আমাদের পাশ্ববর্তী রাষ্ট্রে মিয়ানমারের মুসলমানদের ওপর ইতিহাসের জঘন্য জুলুম অত্যাচার করা হচ্ছে। তারা আমাদের দেশে এই প্রচণ্ড শীতে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ
এখনো কি মুমিনদের সময় আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর কোমল হবে। তারা সব ধরনের পাপাচার থেকে বিরত হবে। আল্লাহর দিকে তারা মনোনিবেশ করবে।
প্রবন্ধটি মিম্বারের ধ্বনি থেকে সংগৃহীত। প্রস্তুত করেছেন মুফতি মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান।