আওয়ার ইসলাম: আর দশ জন শিক্ষার্থীর মতো তাদেরও স্বপ্ন ছিলো বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। পরীক্ষায় বসতে দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু যানজটে পড়ে সময় মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হতে না পারায় যেন থেমে গেল তাদের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন।বগুড়া অঞ্চলের এই ১৫০ শিক্ষার্থীর অনেকেরই এবার ছিলো বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার শেষ সুযোগ।
এই পরীক্ষায় তাদের কেন্দ্র ছিল রাজশাহী কলেজ। কিন্তু সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় কর্তৃপক্ষ তাদের ক্যাম্পাসের ভেতরেই ঢুকতে দেয়নি। এ সময় পরীক্ষার্থীরা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন। তবুও পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ মেলেনি তাদের।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দ্রে ঢুকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনেক পরীক্ষার্থী স্লোগান দিতে দেখা যায়। কেউ কেউ গেট খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন পুলিশকে। আবার কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েছেন হতাশায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এক কথা, সরকারি কর্ম কমিশনের বেধে দেওয়া নিয়মের বাইরে গিয়ে তাদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না।
বগুড়া থেকে রাজশাহী কলেজে পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থী শিলা খাতুন জানিয়েছেন, 'নাটোর-বগুড়া সড়কের রণবাঘা নামক স্থানে একটি ট্রাক উল্টে গেলে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সড়কের দুই পাশে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। এই যানজটে বগুড়া থেকে রাজশাহী আসা বাসগুলো আটকা পড়ায় আমরা ১০টার একটু পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হই।'
তাই রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রের অন্তত ১৫০ জন বিসিএস পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলেন না। তিনি যে বাসে এসেছেন সে বাসেই অন্তত ৫০ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন বলে জানান শিলা খাতুন।
আরেক পরীক্ষার্থী জুবায়ের হাসানের ভাষ্য হলো, 'শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় তিনি বগুড়া থেকে রওনা হন। তার বাসেও ৫২ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। কয়েক মিনিট দেরি হওয়ায় তারাও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। তাদের অনেকেরই ছিলো এবার পরীক্ষা দেওয়ার শেষ সুযোগ।'
কান্নায় ভেঙে পড়ে বগুড়ার পরীক্ষার্থী আফসানা আফরিন জানান, দরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি। উৎকোচ দিয়ে চাকরি নেওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই অনেক কষ্ট করে ভালোভাবে পড়াশোনা করেছিলেন। প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বিসিএস পরীক্ষার। ভেবেছিলেন বিসিএস ক্যাডার হয়ে দুঃখ ঘুচাবেন বাবা-মায়ের। কিন্তু যানজটে আটকে গেল তার সেই রঙিন স্বপ্ন।
এ ব্যাপারে কেন্দ্র সচিব রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হবিবুর রহমান বলেন, পরীক্ষা দিতে হলে সকাল ১০টার মধ্যে অন্তত কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর ঢুকতে হবে। এটা নিয়ম। কিছু পরীক্ষার্থী এই সময়ের মধ্যে আসতে না পারায় তাদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন তিন হাজার ৭৫০ জন। এর মধ্যে প্রায় ২০০ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন।
সারাদেশের মত রাজশাহীতেও সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা চলে। পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীরা একে একে কলেজের প্রধান ফটক দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকেন। তখনও পরীক্ষার জন্য অপেক্ষায় যানজটে আটকে পড়া পরীক্ষার্থীরা।
এক সময় বের হতে থাকা পরীক্ষার্থীদের ভিড় বাড়ে। এই ভিড়ের মাঝেই হারিয়ে যান পরীক্ষা দিতে না পারা পরীক্ষার্থীরাও।আর এভাবে হারিয়ে যায় তাদের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নও।
এইচজে