গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে ১২ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমাকে সফল ও সার্থক করতে এরই মধ্যে চলছে নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ। ইজতেমা ময়দানের বিশাল সামিয়ানা টাঙ্গানো, রাস্তাঘাট মেরামত ও পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ চলছে জোরেশোরে। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও নাশকতারোধে থাকছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এরই মধ্যে মাঠের অর্ধেক প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও নাশকতারোধে থাকছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এরই মধ্যে মাঠের অর্ধেক প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তাবলিগ জামাতের নিজস্ব কর্মীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবকরা ইজতেমা ময়দানে কাজ করছেন। ময়দানে খুঁটি পোতা, রাস্তাঘাট মেরামত, মাঠ সমতল করাসহ নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ করছেন আগত মুসল্লিরা। এরই মধ্যে বিদেশিদের জন্য আলাদা নিবাসের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাদের রান্না-বান্নার জন্য গ্যাস সংযোগ, বিদ্যুত সংযোগসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এবারের ইজতেমায় ৩২ জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে লাখো মুসল্লি অংশগ্রহণ করবেন। ইজতেমায় আগত এসব মুসল্লির সুবিধার্থে গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহ, স্থায়ী টয়লেট ও সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে বয়ানমঞ্চ, দোয়া মঞ্চ, তুরাগ নদীতে ভাসমান সেতু ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
বিশ্ব ইজতেমার মুরব্বি প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন জানান, মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ইজতেমা ময়দানে জায়গা কম থাকায় ২০১৬ সাল থেকে ৬৪ জেলার মুসল্লিদের ৩২ জেলা করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই ৩২ জেলার মুসল্লিদের মধ্যে আবার ১৬ জেলা করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিবছর ১৬ জেলা করে দুই ধাপে ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেন এই বিশ্ব ইজতেমায়। বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা যার যার জেলায় আঞ্চলিক ইজতেমায় অংশ নিতে পারছেন।
২০১১ সালের আগে এক ধাপে অনুষ্ঠিত হতো বিশ্ব ইজতেমা। এবার দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে ১২ জানুয়ারি শুক্রবার। আখেরি মোনাজাত হবে ১৪ জানুয়ারি। এরই মধ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ অর্ধেক সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১২ জানুয়ারির আগেই বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি পুরোপুরি সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবারের ইজতেমায় ঢাকা, শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, নড়াইল, মাদারীপুর, ভোলা, মাগুরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পঞ্চগড়, ঝিনাইদহ, জামালপুর ও ফরিদপুরের মুসল্লিরা অংশ নেবেন।
ইজতেমা ময়দানে আগত স্বেচ্ছাসেবক মুসল্লিরা জানান, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সওয়াবের আশায় তারা স্বেচ্ছাশ্রমে ইজতেমা ময়দানে কাজ করছেন। এখানে কোনো টাকা পয়সার বিনিময়ে কাজ করা হয় না। ইজতেমা ময়দানের মুরুব্বিরা পরামর্শ করে তাদের কাজের জন্য দল ভাগ করে দেন। তাদের নির্দেশনায় কেউ মাঠে সামিয়ানা টাঙ্গানো, চট সেলাই-মেরামত, বাঁশের খুটি পোঁতা, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, রাস্তা মেরামত, বিদ্যুতের লাইন টানানো, পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহের কাজ করছেন।
এদিকে, লাখ লাখ মুসল্লির সমাগমকে সামনে রেখে ইজতেমা ময়দানে গতবারের চেয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়ানো হয়েছে। স্থায়ী সিসিটিভি বসানোসহ থাকছে ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার ও পুলিশ-র্যাবের আলাদা কন্ট্রোল রুম।
ইজতেমা মুরব্বি এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে যেখানে পুলিশ দেয়া দরকার সেখানে পুলিশ দেয়া হবে জানিয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার। তিনি জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার আরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের একটি কেন্দ্রীয় এবং পাঁচটি সাব কন্ট্রোল রুম থাকছে। এরই মধ্যে ইজতেমা মাঠের চারপাশে সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ শুরু করছে।
তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে ১৪ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথমপর্ব। চার দিন পর ১৯ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৬০ একর জমি বিস্তৃত ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে ধর্মীয় এ মহাসমাবেশ হয়ে আসছে।