হাবিবুর রহমান মিছবাহ : তাবলিগের মুরব্বি শায়খুল হাদিস আল্লামা যাকারিয়া রহ. এর দুই সন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়ে। হজরতের খাদেম ক্লাসের এক নাম্বার ছাত্র। পরীক্ষায় সবসময় প্রথম হতেন। মুআদ্দাব ও বহু গুণের অধিকারী ছিলেন তিনি। যাকারিয়া রহ. কথা দিলেন খাদেমের কাছেই তাঁর মেয়ে বিয়ে দিবেন।
দাওরার বছর ছাত্রদের লেখা পড়ায় উৎসাহিত করতে হুজুর ঘোষণা করলেন, এবার পরীক্ষায় যে এক নাম্বার হবে তার কাছে আমার মেয়ে বিবাহ দিবো। তিনি ভেবেছিলেন বরাবরের মতো খাদেমই এক হবেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে এক নাম্বার হলেন অন্য একটি ছাত্র।
দারুল উলূম দেওবন্দের শায়খুল হাদিস আল্লামা সাঈদ আহমদ পালনপুরী যাকে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ শায়খুল হাদিস বলেছেন। দেওবন্দ সফরে সাহরানপুর যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার। উদ্দেশ্য ছিলো যাকারিয়া রহ. এর সন্তান যিনি ওখানে পীর হিসেবে পরিচিত আল্লামা ত্বলহা, সেই এক নাম্বার ছাত্র ও সাহরানপুর মাদরাসা দেখা।৩টি আশা-ই পূরণ হয়েছিলো আলহামদুলিল্লাহ। 'দেওবন্দ সফর নামা' -এ বিস্তারিত আসবে ইনশাআল্লাহ।
সব ছাত্রদের নিয়ে হজরত শায়খুল হাদিস যাকারিয়া রহ. বসলেন। মেয়ে একটি কিন্তু ওয়াদাবদ্ধ হয়েছেন দু'জনের সাথে। কী করবেন? খাদেমকে আগেই কথা দিয়ে রেখেছিলেন। আবার পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারীকেও কথা দিয়েছেন।
তিনি দু'জনকে দু'পাশে বসালেন। ঘোষণা করলেন আমার দুটি মেয়ে! উপস্থিত সবাই অবাক! আরেকটি মেয়ের খবর তো আমরা কেউ জানি না! পিনপতন নিরবতা। শায়খুল হাদিস যাকারিয়া রহ. বললেন, এই দু'জনের কাছেই আমি ওয়াদাবদ্ধ। তাই দু'জনের কাছে দু'জনকে সোপর্দ করতে চাই।
আমার একটি মেয়ে হলো যাকে ওর মা গর্ভে ধারণ করেছে। আরেকটি মেয়ে হলো বুখারি শরিফ। কে কোনটি গ্রহণ করতে চাও? সাথে সাথে পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকারী ছাত্রটি বললেন, বুখারি নামক মেয়েটিই আমি চাই। সে থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর বুখারির সাথেই ছিলো মিতালী আর ভালোবাসা। বুখারি নিয়েই কাটিয়ে দিলেন বাকি জীবন। বিয়েও করেননি। করেননি ঘর-সংসার।
এতোক্ষণ যাঁর কথা বললাম, তিনি হলেন ভারতের ঐতিহ্যবাহী সাহরানপুর মাদরাসার শায়খুল হাদীস আল্লামা ইউনুস আহমদ রহ.।
কিন্তু তিনি আজ আর আমাদের মাঝে নেই। এই তো ক'দিন আগে প্রভূর ডাকে চলে গেলেন প্রিয় ঠিকানায়।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
সাহরানপুর মাদরাসায় সফরকালীন সময় সেখানকার এক ভাই থেকে শোনা কারগুজারি