আমিনুল ইসলাম হুসাইনী : ঢাকা চট্টগ্রাম রেলসড়কের কসবা স্টেশন থেকে সোজা পশ্চিম দিকে ছায়াঘেরা যে পথটা মোটা অজগরের মতো হেলে দূলে চলে গেছে কুটি চৌমুহনী পর্যন্ত। সেই পথ ধরে দশ মিনিট হাটার পরই কসবা উপজেলা সদর। এ উপশহরের বুক চিড়ে পিচঢালা পথে মিনিট পাচেক হাটার পর কদমতলা মোড়। আর এই মোড়েই নির্মাণ করা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রথম কুরআনের ভাস্কর্য। তাই এখানে এখন সূর্যরাঙা সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ঢল নামে কুরআন প্রেমিকদের।
স্থানীয় তো বটেই, দূরদূরান্ত থেকেও স্রোতের মতো ছুটে আসছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। পবিত্র কুরআনের এই অনন্য ভাস্কর্যটি এক পলক দেখার জন্যে তাদের আগ্রহের শেষ নেই। তাদের মতে, পবিত্র কুরআনের এই ভাস্কর্যটি তাদের শুধু আকর্ষণই করে না, বরং মনের জমিনে নির্মাণ করে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আরেক তাজমহল।
কুরআনের এ স্থাপত্যের শৈল্পিক সৌন্দর্যে হন দর্শনার্থীরা। তাদের একজন কুমিল্লা সালদা নদী গ্রামের আব্দুল হাফিজ (৩৪)। তিনি বলেন, ‘কসবায় পবিত্র কুরআনের ভাস্কর্য বসানো হয়েছে খবর শুনেই আমার মনের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে। শিল্পকর্মটি কখন দেখবো সেই চিন্তাই মনের ভেতর যেন সারাক্ষণ কুট কুট করে কামড়াচ্ছিল। আজ সব কাজ ফেলে চলে এলাম কুরআনের এই অসাধারণ ভাস্কর্যটি দেখতে। সত্যি, পবিত্র কুরআনের এই অসাধারণ ভাস্কর্য দেখার পর আমার হৃয়দ ভরে গেছে।
আব্দুল হাফিজের মতো আরো অনেকেই আছেন, যারা শুধু পবিত্র কুরআনের এই ভাস্কর্য এক পলক দেখার জন্য দূরদুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন। ছুটে আসছেন সেই দেড়হাজার বছর আগের মানুষগুলোর মতো, যাঁরা কুরআনের বিমোহিত সুরসুধা পানের জন্য শত শত মাইল মরুপথ পাড়ি দিয়ে জড়ো হতেন নবীর শহর পবিত্র মক্কায়। তাদের পদচারণায় কদমতলা এখন মুখরিত। যদিও ভাস্কর্যটির কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি।
নন্দিত এই ভাস্কার্যটির নির্মাতা ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটের মেধাবী ছাত্র, ভাস্কর কামরুল হাসান শিপন। তিনি বলেন, ‘আমার করা এই ভাস্কর্যটিই বাংলাদেশের প্রথম কোনো কুরআনের ভাস্কর্য। এর আগে দেশের কোথাও পবিত্র কুরআনের ভাস্কর্য করা হয়নি। বিষয়টি ভাবতে গেলেই মন ভরে ওঠে। আর যখন এতো এতো মানুষ ভাস্কর্যটি দেখে আনন্দিত হয়, কুরআনের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হয়, তখন তাদের সাথে আমিও সিক্ত হই। নিজেকে স্বার্থক মনে হয়’।
ব্যতিক্রমধর্মী এ ভাস্কর্য নির্মাণ করায় প্রশংসা করেছেন আড়াইবাড়ি সাইয়েদীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও আড়াইবাড়ির বর্তমান পীর মাওলানা গোলাম সারোয়ার সাঈদীও।
তিনি কসবার এবং পৌর মেয়র এমরানুদ্দিন জুয়েলসহ কসবা উপজেলা প্রশাসনের সকল কতৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! কসবা উপজেলায় একটি সুন্দর পরিবেশ গড়ার জন্য যারা কুরআনের এই প্রতীক বা সুন্দর একটি ভাস্কর্য স্থাপন করেছেন তাদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
বিশেষ করে কসবা পৌরসভার মেয়র এবং যারা এই ভাস্কর্য নির্মাণে অংশিদার আছেন তাদের সবাইকেই আমি দোয়া করি। পাশাপাশি আমি মনে করি এ ভাস্কর্য বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কুরআনি সমাজ গঠনে সহায়ক হবে। আল্লাহ আমাদের এই প্রত্যাশা কবুল করুন।আমিন।’
ভাস্কর্য শুধু নির্মাণ করার মধ্যেই যেন প্রশাসনের কাজ শেষ না হয়ে যায়, সে দাবিও জানিয়েছেন, কসবা উপজেলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব, মাওলানা আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, যারা এই মহৎ কাজটি করেছেন, আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই পুরস্কৃত করবেন। তবে এই ভাস্কর্য নির্মাণের মাধ্যমেই যেন তাদের দায়িত্ব শেষ না হয়ে যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। পবিত্র এই কুরআনের ভাস্কর্যের যেন অবমান না হয় সেদিকে আমাদের সবাইকেই দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।’
উন্নতমানের গ্লাস ফাইভারে তৈরি এই নান্দনিক ভাস্কর্যটি উচ্চতায় ১৬ ফিট এবং দৈর্ঘে ৮ফিট। এটি নির্মাণে দুই লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদার রতন সরকার।
বাংলাদেশের প্রথম এই কুরআনের ভাস্কর্যটির শুভ উদ্ভোধন হবে চলতি বছরের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর । উদ্ভোধন করবেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক এম পি।
কলুষতা মুক্ত সমাজ গঠনে এই ভাস্কর্য সহায়ক হয়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা কসবা উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসলমানের।
তাদের বিশ্বাস, যুগে যুগে পবিত্র কুরআন যেমনিভাবে মানুষকে সত্যের পথে টেনে এনেছে। তেমনি কুরআনের এই ভাস্কর্যও তাদের হৃদয়ে মহা সত্যের আকর্ষণ সৃষ্টি করবে। এই ভাস্কর্য দর্শনের মধ্যেম মানুষের ভেতর স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। যা হতে পারে তাদের জন্য মুক্তির উপায়।